শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সম্পর্কের ‘সেরা’ সময় এখন : বিজেপি মুখপাত্র

বাংলাদেশ-ভারত সংলাপ ৭ম পর্বের শেষ দিন

প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী নই আমরা। সেই সাথে সীমান্তে একটি হত্যাও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেন, এক সময় ভারতবিরোধী রাজনীতি বাংলাদেশে নির্বাচনী ইস্যু ছিল। গত বেশ কিছু নির্বাচনে ভোটররা এ বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এখন বিএনপিও ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। ট্রানজিট, কানেকটিভিটি এখন আর ঘরোয়া সমস্যা নয়। বিষয়টি নিয়ে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র এম জে আকবর বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। পানি বণ্টন ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থাকলেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়কেই ‘সেবা’ হিসেবে ধরা হয়। তাই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে ছোটখাটো সমস্যা থাকলেও তাকে ‘গুরুত্ব’ দিয়ে দেখতে হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী সংলাপের দ্বিতীয় দিনের পৃথক অধিবেশনে এ সব কথা বলেন গওহর রিজভী এবং এম জে আকবর। প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের’ উদ্যোগে সপ্তমবারের মতো এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
দু’দিনব্যাপী সংলাপের শেষ দিনে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন রাজনীতিতে আসার আগে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র ও প্রবীণ সাংবাদিক এম জে আকবর। বিজেপির সাধারণ সম্পাদকসহ দু’দেশের রাজনীতিক, গবেষক, চিন্তাবিদ, সাবেক কূটনীতিক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা সংলাপে অংশ নেন।
এম জে আকবর তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে ছোটখাটো সমস্যা থাকলেও তাকে ‘গুরুত্ব’ দিয়ে দেখতে দু’দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ ইঁদুরের তৈরি মাটির ঢিবি থেকে পাহাড় তৈরি হতে পারে। কোনো কিছুরই একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠার সম্ভাবনা থাকে।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। পানি বণ্টন ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থাকলেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়কেই ‘সর্বোত্তম’ হিসেবে ধরা হয়। উগ্রবাদের বৈশ্বিক হুমকি দুই দেশ সমানভাবেই অনুভব করছে।
তবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা রয়েছে। বিশ্বাস থাকলেই কেবল নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে। দু’দেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা সমস্যা নরেন্দ্র মোদীর সরকার আসার পর সমাধান হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে এই বিজেপি নেতা বলেন, তবে নতুন সুযোগ আসছে। একসময় যা অচিন্ত্যনীয় ছিল তা এখন সম্ভব হচ্ছে।
সীমান্ত চুক্তির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেটা এখন মনে হবে অচিন্তনীয় সেটাই ভবিষ্যতে সম্ভব হবে। এখন এটাই ঘটছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ও অগ্রগামী পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন সাবেক এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করতে হবে। সমুদ্র অর্থনীতি ও বঙ্গোপসাগরে সহযোগিতা, নবায়নযোগ্য ও পরমাণু জ্বালানি সহযোগিতা এবং কৃত্রিম উপগ্রহের কথা এক্ষেত্রে বলা যায়।
সংলাপে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই ‘কাঠামোর বাইরে’ এসে চিন্তা করতে হবে। সম্পর্কের গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ‘উদ্ভাবনীমূলক ও পথনির্দেশক উদ্যোগ’ যোগ করতে হবে বলে মত দেন তিনি।
শহিদুল হক বলেন, নতুন উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) রূপরেখার আওতায় বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
সংলাপে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, স্থলসীমান্ত সমস্যা সমাধানে দুই দেশ ৪০ বছর অপেক্ষা করেছে। কিন্তু পানি বণ্টন সমস্য সমাধানে আমরা আরও ৪০ বছর অপক্ষো করতে পারি না। পানির সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও অভিবাসন সরাসরি সম্পৃক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানির সঙ্কট আছে এমন এলাকা ছেড়ে মানুষ যেখানে পানি পর্যাপ্ত সেখানে পাড়ি জমাবে।
ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক অলোক বানসাল বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোতে কেন তরুণরা যোগ দিচ্ছে সেই বিষয়টি আমাদের চিহ্নিত করা জরুরী। ইসলামী দেশগুলোর যাকাত ফান্ডের টাকা যেন এ ধরনের কোন সন্ত্রাসীদের হাতে না যায় সেই দিকটা খেয়াল রাখা খুব জরুরী।
পানি বণ্টন ইস্যুর প্রতি ইঙ্গিত করে ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক স্বপন দাশ গুপ্ত বলেন, ভারত-বাংলা সম্পর্কে বড় সুযোগ এসেছে। আমাদেরকে তা আঁকড়ে ধরতে হবে। ইতিহাসে বড় সুযোগ ক্বদাচিৎ আসে।
সংলাপে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসাইন অংশ নেন।
দিনের দ্বিতীয়ভাগে পৃথক অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী নই আমরা।
গওহর রিজভী বলেন, তিস্তা চুক্তি সই নিয়ে বল এখন ভারতের কোর্টে। চুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে, চুক্তিটি নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হবে না। ওই খসড়ার ভিত্তিতেই দ্রুত চুক্তি সই হবে।
সীমান্ত হত্যার ব্যাপারেও উদ্বেগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি আমলের তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্ত হত্যা কমেছে তবে তাতে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই কারণ, আমাদের কাছে একটি হত্যা মানেও অনেক কিছু। বিএনপি’র সরকারের সময়ে সীমান্তে তিন শতাধিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেই তুলনায় আওয়ামী লীগের আমলে এমন হত্যাকা- কমেছে।
গওহর রিজভী মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, এক সময় ভারতবিরোধী রাজনীতি বাংলাদেশে নির্বাচনী ইস্যু ছিল। গত বেশ কিছু নির্বাচনে ভোটররা এ বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন বিএনপিও ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। ট্রানজিট, কানেকটিভিটি এখন আর ঘরোয়া সমস্যা নয়। বিষয়টি নিয়ে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
গওহর রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ভারতের সাথে এ সুসম্পর্ক তৈরীর জন্য ক্রেডিট পাবেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এক বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
সংলাপের দ্বিতীয় দিনের এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক শক্তি সিনহা। মূল প্রবন্ধের ওপর বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। ভারতের পক্ষ থেকে প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নেন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক বিনোদ বাউরি এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শ্রিপ্রিয়া রঙ্গনাথান। বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের রেক্টর ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
সন্ধ্যায় সমাপনী পর্বে আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিজেপি মুখপাত্র ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র এমজে আকবর, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট নাসিরুদ্দিন ইউসুফ এবং ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের রিসার্চ এসোসিয়েট গুরু প্রকাশ। সবশেষে ‘ঢাকা ঘোষণা’ গৃহীত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন