মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
\ শেষ কিস্তি \
আবার দেশের অধিকাংশ মানুষ দলকানা হয়ে কিংবা সামান্য লোভে মেধাবীকে মূল্যায়ন না করে মেধাহীন, মুর্খ, সন্ত্রাসীকে নির্বাচিত করেন। মেধাসম্পদকে অবমূল্যায়নের আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, দলীয়করণ। যখন যে দল ক্ষমতায় তারা অনেক ক্ষেত্রে নিজ দলের মেধাহীনকে প্রাধান্য দিচ্ছে, অপর দলের মেধাবীর ওপর। অফিস-আদালত ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে এমনকি বিরোধী দলের ও মতের যোগ্য ব্যক্তিবর্গের পরামর্শও গ্রহণ করছে না রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে কিংবা জাতীয় কোনো সংকটে তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে।
নীতি-নৈতিকতার অভাবেও মেধাসম্পদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে। মোটা অংকের ঘুষের অর্থ ব্যবস্থা না করতে পারায় অনেক মেধাবীরা চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না। এমনকি একই কারণে অনেক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তির পদোন্নতিও হচ্ছে না। অপরদিকে বহু অযোগ্য ও অদক্ষের পদোন্নতি হচ্ছে দলীয় ও আত্মীয়তার সম্পর্কের ভিত্তিতে। অনেক মেধাহীনরা চাকরি পাচ্ছে এসব সূত্র ধরে।
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়Ñ যে ব্যক্তির যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে ঐ বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে বা দায়িত্বশীলের ভূমিকা রাখছে। আর যার জ্ঞান আছে এ বিষয়ে সে বঞ্চিত হচ্ছে সেখান থেকে। যেমন, ধর্মীয় বিষয়ে যার জ্ঞান নেই সে ধর্ম নিয়ে কথা বলছে। ধর্মীয় বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে। অথচ ধর্মীয় অনেক পÐিত গভীর জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিবর্গকে এ বিষয়ে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।
আর একটি বিষয় হচ্ছে, উলামা-মাশায়েখরা হলেনÑদেশ-জাতির কল্যাণকামী। জাতীয় সংকট থেকে উত্তরণের সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন এমন মেধাসম্পন্ন উলামা ও পীর-মাশায়েখ বিদ্যমান আছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের এ সীমানায়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তাঁদের মেধার মূল্যায়ন করেন না এবং তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করেন না।
মেধাসম্পদের অপব্যবহার
মেধাসম্পদ দিবসে ক্রোড়পত্র, গুণীজনদের বাণী, সভা-সমিতি, সেমিনার করে লাভ কী? যদি নিজেরাই মেধাসম্পদের মূল্যায়ন না করি। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তো মেধারই অপব্যবহার হচ্ছে। ভোট জালিয়তি, ব্যাংক জালিয়তি সবই তো এ দেশে হচ্ছে। এসব কি মেধার অপব্যবহার নয়? জাতীয়ভাবে মিথ্যাচার হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা শেখানো হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো হচ্ছে। এগুলো মেধার অপব্যবহার নয়? আইনজীবীদের মেধার অপব্যবহারের কথা তো এদেশের আম জনতারও অজানা নয়। দুর্নীতির মাধ্যমে মেধার অপব্যবহার তো মেধাবীরাই করছে। আসুন আমরা মেধাসম্পদ দিবসে মেধার মূল্যায়ন শিখি এবং মেধার অপব্যবহার রোধ করি।
মেধাসম্পদের সংরক্ষণ
মেধাসম্পদের প্রতি অবহেলা ও অবমূল্যায়নের কারণে যেমন মেধাসম্পদ যথাযথ সংরক্ষণ হয় না তেমনি রাষ্টীয় ও সামাজিক এমন আচার-অনুষ্ঠান ও বিষয়াদি আছে যা দ্বারা মেধাসম্পদ ধ্বংস হয়। বিশেষ করে পাপাচার মেধাসম্পদ ধ্বংসের মূল কারণ। অপসংস্কৃতি, অপসাহিত্য, অশ্লীলতা, প্রযুক্তির অপব্যবহার, মাদক, অপরাজনীতি, সহ-শিক্ষা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, অবাধ যৌনাচার, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনাসহ নানাবিদ কারণে আমাদের মেধাসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। মেধাসম্পদ রক্ষার সদিচ্ছা থাকলে রাষ্ট্রকে আগে এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে এবং যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভেজাল খাদ্যও মেধা সম্পদ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে।
উপসংহার
মেধাসম্পদ দিবসে মেধার যথাযথ প্রয়োগ, মেধার মূল্যায়ন ও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতন হতে হবে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে। মেধাসম্পদের অপব্যবহার রোধের শপথ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। মহামহিম আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি হিসেবে আমাদেরকে সে মহান সত্তার পরিচয় লাভ করতে হবে। যিনি মেধার দাতা ও মালিক তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। তার আদেশ-নিষেধ মান্য করতে হবে। তার বিধান প্রতিষ্ঠায় মেধাসম্পদ ব্যয় করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক
মাসিক বিকিরণ, শিক্ষা পরিচালক, নূরপুর মাদরাসা, ফেনী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন