মাও: এইচ. এম. গোলাম কিবরিয়া রাকিব
\ শেষ কিস্তি \
১৪. দাওয়াতে দীনের কাজ করা
রমজান মাস হচ্ছে দীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদিসের দরস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। কুরআনের ঘোষণা।’ ঐ ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম।’ [সুরা হা-মিম সেজদা: ৩৩]
১৫. সামর্থ্য থাকলে ওমরা পালন করা
এ মাসে একটি ওমরা করলে একটি হজ্জ আদায়ের সমান সওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরা করা আমার সাথে হজ্জ আদায় করার সমতুল্য। [ সহি বুখারি: ১৮৬৩]
১৬. লাইলাতুল কদর তালাশ করা
রমজান মাসে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।’ কুরআনের ঘোষণা, ‘ক্বদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ [সুরা কদর: ৪]
১৭. বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করা
দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এ জন্য এ মাসে বেশি বেশি দোয়া করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের মুহুর্তে আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। [জামিউস সগির: ৩৯৩৩]
অন্য হাদিসে এসেছে,
১৮. ইফতার করা
সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলতপূর্ণ আমল। কোনো বিলম্ব না করা। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেনো খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র।’ [সুনানে আবি দাউদ: ২৩৫৭]
১৯. ইফতার করানো
অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬]
২০. তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা
তাওবাহ শব্দের অভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবা করার উত্তম সময়। আর তাওবা করলে আল্লাহ খুশী হন। কুরআনে এসেছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।’ [সুরা তাহরিম: ৮]
২১. তাকওয়া অর্জন করা
তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তার আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ [সুরা বাকারা: ১৮৩]
২২. ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা
ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর জামাত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হজ্জ ও ওমরা করার প্রতিদান পাবে।’ [সুনানে তিরমিজি: ৫৮৬]
২৩. ফিতরা দেয়া
এ মাসে সিয়ামের ত্রæটি বিচ্যুতি পুরণার্থে ফিতরা দেয়া আবশ্যক। ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সা. ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিতেন।’ [সহি বুখারি: ১৫০৩]
২৪. অপরকে খাবার খাওয়ানো
রমজান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরিব, অসহায়কে খাবার খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ। কুরআনে এসেছে, ‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্তে¡ও মিসকিন, এতিম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে।’ [সুরা দাহর: ৮]
২৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা
আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদত। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সূরা নিসা: ১]
২৬. কুরআন মুখস্থ বা হিফজ করা
কুরআন হিফজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা নিজেই কুরআন হিফজের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মুলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফজ করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি, আর আমিই তার হেফজতকারী। [সুরা হিজর: ৯]
২৭. আল্লাহর জিকির করা
এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাসবিহ পাঠ করা। সময় পেলেই ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পড়া। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন ‘আল্লাহ তায়ালা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন তাহলো ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহি, লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার’। যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে বক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়বে, তার জন্য বিশটি সওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে ‘আলহামদুল্লিাহি রাব্বিল আলামিন’ পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। [মুসনাদে আহমাদ: ১১৩৪৫]
২৮. মিসওয়াক করা
মিসওয়াকের প্রতি রাসূল সা. অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে এসেছে, অর্থাৎ মিসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। [সহি ইবনে খুজাইমা: ১৩৫]
রাসূল সা. রোজা রেখেও মিসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।
২৯. পরস্পর কুরআন শোনানো
রমজান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শোনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘জিবরাইল আ. রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রতি রাতে রাসূল সা. এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল তাকে কুরআন শোনাতেন। [সহি বুখারি; ১৯০২]
৩০. কুরআন বোঝা ও আমল করা
কুরআনের এ মাসে কুরআন বোঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনেক গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর। [সূরা আ’রাফ: ৩]
লেখক : শিক্ষক, খতিব, প্রাবন্ধিক ও উপস্থাপক সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় মোফাস্সির পরিষদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন