ইনকিলাব ডেস্ক : কুর্দিদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির স্বচ্ছতা সম্পর্কে তুরস্ককে আশ^স্ত করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দিদের তারা অস্ত্র সরবরাহ করার পর তুরস্কের সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকির প্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। আংকারা কুর্দিদের মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে একে মারাত্মক বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করে। বাগদাদভিত্তিক পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল রায়ান ডিলন বলেন, আমরা কুর্দিদের কি অস্ত্র দিচ্ছি তার বিশদ সম্পর্কে তুরস্কের সাথে স্বচ্ছতা বজায় রেখেছি। তিনি বলেন, এসডিএফকে যে অস্ত্র দেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা পূর্ণ জবাবদিহিতা বজায় রেখেছি। আইএসের কার্যত রাজধানী ও সিরিয়ায় তাদের সর্বশেষ শক্তঘাঁটি রাক্কা দখলে কুর্দি-সিরীয় আরব জোট সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ) যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছে। এসডিএফের যোদ্ধাদের মধ্যে কুর্দি পিপলস প্রটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজি)-এর যোদ্ধারা রয়েছে। ওয়াইপিজির সাথে তুরস্ক যাদের সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে বিবেচনা করে সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মে মাসে রাক্কা দখলে সহায়তার জন্য ওয়াইপিজিকে অস্ত্রসজ্জিত করার অনুমোদন দেন। এর আগে তুরস্ক বলে যে ওয়াইপিজিকে অস্ত্রসজ্জিত করা এক মারাত্মক বিপজ্জনক পদক্ষেপ এবং ওয়াশিংটনের প্রতি তাদের ভুল সংশোধন করার আহবান জানায়। তাছাড়া এসডিএফকে যেসব অস্ত্রশস্ত্র দেয়া হচ্ছে তার মধ্যে আছে রকেট চালিত গ্রেনেড অথবা টো ক্ষেপণাস্ত্র, সে সাথে যানবাহন, একে-৪৭ রাইফেল ও ছোট ক্যালিবারের মেশিনগান। ডিলন বলেন, যে অস্ত্রই দেয়া হোক না কেন তা ক্রমিক নং অনুযায়ী রেকর্ড করা থাকবে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ডাটাবেইসে এগুলো রক্ষা করব এবং এসব তথ্য আমাদের উত্তরের মিত্রদের সাথে শেয়ার করব যারা আমরা যেসব অস্ত্র দিচ্ছি সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। সিরিয়ার কুর্দিদের অস্ত্রসজ্জিত করার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সিরিয়ার জটিল যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র কর্নেল জন ডোরিয়ান বলেন, সুনির্দিষ্ট মিশন শেষে অস্ত্রগুলো ফেরত নেয়া হবে না, তবে সেগুলো কোথায় ও কিভাবে ব্যবহার হয় সে বিষয় যুক্তরাষ্ট্র সতর্কভাবে মনিটর করবে। তিনি বলেন, প্রতিটি অস্ত্রেরই হিসাব রাখা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করবে যে সেগুলো আইএসের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে। কিন্তু সিরিয়ার ৬ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা বিদ্রোহী গ্রুপগুলো, যাদের মধ্যে কিছু গ্রুপ তুরস্ক সমর্থিত, তারা বলেছে যে এসব অস্ত্র যে তাদের বা অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না তার কোনোই নিশ্চয়তা নেই। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট যখন সিরিয়ায় তাদের অভিযান গুছিয়ে আনছে তখন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে ইরাকে যা ঘটেছে , সিরিয়াতেও তাই ঘটবে। ইরাকে স্তানীয় যোদ্ধাদের সরবরাহ করা এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের কোনো খোঁজ নেই। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরাক ও সিরিয়ায় স্থল বাহিনী, ইরাকি সামরিক বাহিনী, ইরাকি-কুর্দি যোদ্ধা ও সিরীয় কুর্দি যোদ্ধাদের গত তিন বছরের লড়াইয়ে আইএসের কাছ থেকে ৫৫ হাজার বর্গ কিমি (২১, ২৩৫ বর্গমাইল) এলাকা পুনর্দখলের যুদ্ধে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে বিমান হামলা চালিয়ে সাহায্য করেছে। এখন দু’দেশে অনেকেই জোট বাহিনী কর্তৃক শক্তিশালী হয়ে ওঠা এ সব বাহিনী এক পর্যায়ে জঙ্গিরা নির্মূল হলে তাদের অস্ত্র ও প্রভাব কিভাবে কাজে লাগাবে। জোট বাহিনী কর্তৃক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অস্ত্রসজ্জিত বহু ইরাকি গ্রুপের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙঘনের অভিযোগ রয়েছে। উত্তর সিরিয়ায় মার্কিন সমর্থিত কুর্দিগ্রুপগুলো প্রায়ই তুরস্ক সমর্থিত গ্রুপগুলোর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। সেখানে বহু উপদল বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় লড়াই করছে। জোট বাহিনী ইতোমধ্যেই ইরাকে বিতরণকৃত অস্ত্রের সন্ধান করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। আশ্্শারক আল-আওসাত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন