চট্টগ্রাম ব্যুরো : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গতকাল (রোববার) সন্ধ্যা নাগাদ মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর সক্রিয় প্রভাবে বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুমালা ধীরে ধেির সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সৃষ্টি হচ্ছে দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের একটি আবহ। নি¤œচাপের প্রভাবে সাগর ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩নং সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার প্রারম্ভে গতকাল রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়া দেশের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে দিনের অসহনীয় ভ্যাপসা গরমের মাত্রা কমে এসেছে। সারাদেশে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে স্থানভেদে এক থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আজও (সোমবার) দেশের অনেক জায়গায় বর্ষণ এবং এরফলে তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে খেপুপাড়ায় ৯৯ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৯, চট্টগ্রামে ৪, কুমিল্লায় ২১, কক্সবাজারে ৪৬, সিলেটে ২৮, রাজশাহীতে ৪, খুলনায় ৯, বরিশালে ১৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৩৬.৬ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩২.৮ ও ২৬.৬ ডিগ্রি সে.।
গত সন্ধ্যায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে মৌসুমি নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় (২ দিন) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সারাদেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আর এর পরবর্তী ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়, ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ-দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে মৌসুমি নি¤œচাপ আকারে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সেখানে এটি আরও ঘনীভূত হয়ে মৌসুমি নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বা তারও অধিক বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হচ্ছে।
এদিকে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল জানানো হয়, মৌসুমি নি¤œচাপের প্রভাবে গত সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
লঘুচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া দূর্যোগপূর্ণ
বরিশাল থেকে বিশেষ সংবাদদাতা জানান, লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা ধেয়ে এসে উপক’লে বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে ৪৫থেকে ৬০কিলোমিটার বেঘে ঝড়ো হাওযাসহ মাঝারী থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষনের আশংকার কথাও জানিয়েছে। গতকাল শেষ রাত থেকেই গোটা উপক’লভাগসহ দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করে। তবে শনিবার পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের ওপরে। ভোলাতে ৩৬.২ বরিশালে প্রায় ৩৫ডিগী সেলসিয়াসের তাপমাত্রা গতকঅল কিছুটা হ্রাস পেয়েছে আবহাওয়া বিভাগ পরবর্তি ৪৮ঘন্টায় তাপমাত্রার পারদ আরো নিচে নামার কথা জানিয়েছে। বরিশঅল সহ দক্ষিনাঞ্চলের নদী বন্দরগুলোতে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ২নম্বও ও গতকাল ১নম্বও সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়। পায়রা সহ সবকটি সমুদ্র বন্দরে ৩নম্বর সংকেত বহাল রেখে সব সাগরে মাছধরা সব নৌকা ওট্রলারসমুহকে ্পক’লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। গতকাল দুপুরের পর থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ ঘনকারো মেঘে ঢেকে যায়। দুপর থেকে সন্ধা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ১৫মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সাথে ৩০Ñ৪৫কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা হাওয়ায় পরিস্তিতি আরো দূর্যোগপর্ণ হয়ে ওঠে। এ বিরূপ আবহাওয়া পরিস্থিতিতে ঈদের বাজারকে যথেষ্ঠ ¤øান কওে দেয়।
আবহাওয়া বিভাগের মতে পশ্চিমÑমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ ও উরিশ্যা উপক’লে ঘনিভূত হয়েছে। যা পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লুঘু চাপে পরিনত হয়েছে। এটি আরো ঘনিভুত হতে পরে। দক্ষিন-পশ্চিম মওশুমী বায়ু বরিশাল সহ উপক’ল ভাগ হয়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থান করছে। বরিশাল ও খুলনাসহ উপক’লভাগে মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বষ নের সম্ভবনার কথা জানিয়ে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১-২ডিগী হৃাস পাবার কথাও বলা হয়েছে। আজ সকালের পরবর্তি ৪৮ঘন্টার পূর্বাভাসে দক্ষিণ-পশ্চিম মওশুমী বায়ু সারা দেশে বি¯তার লাভ করার কথাও বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন