মুহাম্মদ রাশিদুল হক
‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে’। তাই বলা যায়- আগমীর পৃথিবীটা আমরা কেমন দেখতে চাই তা নির্ভর করে আমরা নিজেদের সন্তানদের কীভাবে গড়ে তুলছি তার ওপর। আরো গোড়া থেকে বলতে হলে বলব- আমরা নিজের সন্তানের জন্য কেমন ‘মা’ নির্বাচন করেছি বা করবো তার ওপর। কারণ সন্তানের ওপর সর্বপ্রথম যে মানুষটির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে সে আর কেউ নয়, তার মা।
একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ সর্বপরি ধর্মানুরাগী পুরুষ যদি স্ত্রী নির্বাচনে সফল হতে পারেন তাহলে তার পরবর্তী প্রজন্ম আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। হেলা নয়, নিজ সন্তানের আদর্শ জননী নির্বাচনে সর্বোচ্চ সচেতনতার বিকল্প নেই।
রূপ-সৌন্দর্য্য, ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা ও ধর্মাভীরুতা বৈবাহিক ক্ষেত্রে এই চারটি গুণের ওপর ভিত্তি করেই মূলত একটি নারীকে মূল্যায়ন করা হয় আবহমানকাল থেকেই। সত্যিকার অর্থে ধার্মিক হতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই শিক্ষা-দিক্ষার বিষয়টি নারীর ধর্মানুরাগের আওতাভুক্ত বিবেচিত হয়ে থাকে।
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, রূপ-সৌন্দর্য্য ও ঐশ্বর্য্য একজন নারীর ঈর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। তবে ধর্মানুরাগ সে তুলনায় নারীর অনন্য এক বৈশিষ্ট্য। যার ইতিবাচক প্রভাব ইহজীবনে তো বটেই পরজীবনেও ব্যাপকভাবে পড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য অন্য যাবতীয় গুণাগুণের পরিপূরক বলে প্রমাণিত হয়। একজন ধর্মিষ্ঠনারী এ বৈশিষ্ট্য বলে দুনিয়ার জীবনকে ছাপিয়ে আখেরাতের জীবনকেও সমৃদ্ধ করে তোলে। এর প্রভুত কল্যাণে নারী শুধু নিজেই নয়, তার পরবর্তী প্রজন্মও সিক্ত হয়।
আমাদের সমাজে পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কনের ধর্মপরায়ণতা গৌণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি সমাজে ধার্মিক পরিচয়ে পরিচিত পরিবারের বেলায়ও বিষয়টি প্রযোজ্য হয় অনেক ক্ষেত্রেই। অথচ দাম্পত্যজীবনে ভার্সাম্য বজায় রাখার জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ধর্মিষ্ঠ হওয়া অপরিহার্য। একটি আদর্শ পারিবারিক অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য একজন ধর্মীয়ান গৃহকত্রীর বিকল্প নেই।
ইরশাদ হচ্ছে-“হযরত আবু হাতেম মুযানী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনÑ যাদের ধর্মপরায়ণতা ও চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট তাদের কেউ (তোমাদের কন্যা বা অধিনস্ত কারো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে) এলে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। অন্যথায় দুনিয়ায় ব্যাপক ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে।” তিরমিযী : ১০৯৩ উল্লেখিত হাদীসে কনে পক্ষের জন্য পাত্র নির্বাচনে মৌলিক নীতি-আদর্শ রয়েছে। এর অন্যথা করলে পরিণতি কী হতে পারে তার প্রতিও ইঙ্গিত রয়েছে। কনের অভিভাবকবৃন্দ যদি ধনবান পাত্রের আশায় বিয়েতে বিলম্ব করে তাহলে দিন দিন নারী-পুরুষ উভয়ের নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দিবে। সাথে সাথে সামাজিক নানা জটিলতার সৃষ্টি হবে। যা সমাজ সচেতন ব্যক্তিবর্গ মাত্রই অবগত রয়েছেন। অন্যদিকে বরপক্ষের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিক-নির্দেশনার প্রতি আমরা তাকালে দেখতে পাব অভিন্নও চিত্র। সেখানেও তিনি ধর্মপরায়ণ নারী নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছেন।
ইরশাদ হচ্ছে- “হযরত আবু হুরাইরা (রা.), রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, রূপ-সৌন্দর্য্য, ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা ও ধর্মাভীরুতা সাধারণত এই চার গুণের দিকে লক্ষ্য করে কোনো নারীকে বিয়ে করা হয়। শ্রোতা! তুমি ধর্মিষ্ঠাকে গ্রহণ করে সাফল্যম-িত হও। আর নিরুৎসাহিত হয়ো না।” বুখারী, মুসলিম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত হাদীসে স্বাভাবিক অবস্থার প্রতি খেয়াল করে কনের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ ধর্মপরায়ণতাকে সবশেষে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পরেই বরের সফলতা ওই গুণটির মধ্যেই নিহিত তা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, সবশেষে এই উদ্দেশ্যে উৎসাহ ব্যঞ্জক আরো একটি বাক্য জুড়ে দিয়েছেন। যেন মানুষের স্বাভবিক রীতি কথা উল্লেখ করে শ্রোতকে বলছেন, দুনিয়ার মানুষ যা-ই করুক না কেন তুমি ধর্মীয়ান নারী গ্রহণ করে সাফল্যম-িত হও এবং এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হয়ো না। বিয়ে সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনের ‘টপ-গিয়ার’ না ‘ব্যাক-গিয়ার’ পশ্চিমা দেশে এ বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও আমাদের সমাজে হয়তো সেই মতবিরোধ নেই। তবে সহধর্মিণী নির্বাচনে সফল না হলে কারো কারো জীবনে বিয়ে সত্যিকার অর্থে হয়ে দাঁড়ায় ‘ব্যাক-গিয়ার’। এ ক্ষেত্রে পাত্রী নির্বাচনে অদূরদর্শীতা ও অবহেলা এর অন্যতম কারণ। আহা! এ ব্যাপারে যদি আমাদের সমাজ নববী আদর্শের সরণাপন্ন হত, তাহলে অনাকাক্সিক্ষত অসংখ্য চিত্র অবলোকন করা থেকে আমাদের সমাজের মানুষ রেহাই পেত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন