শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়েতে লোনা বালি ব্যবহারের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার অফিস : কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী মোহনা, মহেশখালী চ্যানেল ও নাজিরারটেক এলাকায় শক্তিশালী ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে চলছে একটি শক্তিশালী চক্র। আর এসব উত্তোলিত সামুদ্রিক লোনা বালি ব্যবহার করা হচ্ছে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজে। সিডিউল অমান্য করে সিলেটি বালির পরিবর্তে স্থানীয় বালি ব্যবহারের ফলে বিমানবন্দরের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন সবার। বালি উত্তোলন বন্ধে ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে কক্সবাজার জেলা জাসদ। শনিবার দুপুরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুলসহ জাসদ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
অভিযোগ ওঠেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিডিউল লংঘন করে অধিক মোনাফা লাভের আশায় মূলত নদীতে ড্রেজার বসিয়ে প্রতিদিন বালু তুলছে। তাতে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে স্থানীয় বালি দিয়ে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন বিশ্লেষকদের। তবে বালি উত্তোলন কাজে স্থানীয় কতিপয় রাঘববোয়ালও সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। যে কারণে আইন অমান্য করে বালি আহরণকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাঁকখালী নদীর মোহনায় অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ঘটনায় গত বছরের ১২ জানুয়ারী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ও বিমানবন্দর ব্যবস্থাপককে নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদফতরের কক্সবাজার অফিস।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো কাজ করা উচিত নয়। বালি উত্তোলন বন্ধে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা নোটিশের কোন জবাব দেয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এরপরও এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প বিধায় একটু দেখে-শুনে এগুতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন পরিবেশের এ কর্মকর্তা।
বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল হাসিব বলেন, অনুমতি নিয়ে বাঁকখালী নদী ড্রেজিং করে লোনা বালু আহরণ করে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য ভূমি উন্নয়ন (জমি ভরাট) করা হচ্ছে। রানওয়ের নির্মাণকাজে লোনা বালু ব্যবহার করা হচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমিনুল হাসিব বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই লোক (সরদার শরীফুল ইসলাম) ১০ বছর ধরে কক্সবাজারে পড়ে আছেন। তার কর্মকা- নিয়ে বিতর্ক আছে। কক্সবাজারের পাহাড় কেটে সাফ করা হলেও এ ব্যাপারে তার গরজ নেই।’
এদিকে বালি উত্তোলন বন্ধে ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে কক্সবাজার জেলা জাসদ। ৫ মার্চ দুপুরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, টেন্ডার ও ওয়ার্ক পারমিটে সিলেটি পাথর, ছোট নুড়ি পাথর ও সিলেটি বালি ব্যবহারের কথা উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সমুদ্রের পয়েন্টে থেকে বালু উত্তোলন করছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে খনিজ সম্পদ, জীব প্রণালী, মৎস্য ভা-ার, চিংড়ির রেণু পোনা, শামুক-ঝিনুক, ডলপিন, কাঁকড়া, সী-উইডসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক পাণী।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সমুদ্রে ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালি উত্তোলনের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন ঘোষিত উত্তর ও মধ্যম নুনিয়ারছরা এলাকা। বিনষ্ট হচ্ছে বিকল্প সুন্দরবন খ্যাত প্যারাবন। বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাঁকখালী তীরে বসবাসরত অন্তত ২০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ী। লোনা ও পানি মিশ্রিত এই বালির সাথে ওঠে আসছে সামুদ্রিক নানা প্রজাতির রেণু পোনা।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী এ কর্মযজ্ঞ আগামী দশ দিনের মধ্যে বন্ধ করা না কঠোর সাধারণ জনতা সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন জেলা জাসদের এ নেতা।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান বলেন, বাঁকখালীতে শক্তিশালী ড্রেজার বসিয়ে বিমানবন্দরের জন্য বালি উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বাড়ছে এবং বসতির মাটি সরে যাচ্ছে। ভাঙন প্রক্রিয়া দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনসহ সবার জানা আছে। এরপরও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে এলাকা রক্ষায় ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলেছে, এভাবে বালু উত্তোলনে প্রাকৃতিক জীবসম্পদ, চিংড়ি, শামুক, ঝিনুক, ডলফিন, কাঁকড়া, সি-উইড, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, এনাড্রস জাতের প্রাণী, ক্যাটাড্রমাস প্রজাতি, সেডেন্টারি প্রজাতি, বিভিন্ন জাতের প্রাণী, জু-প্লাংকটন এবং ফাইটোপ্লাংকটনসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদের প্রজনন-আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সমুদ্রে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করা সরাসরি নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের কোনো প্রকার তোয়াক্কা করছে না কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
কক্সবাজার আণবিক শক্তি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতিমলা অনুযায়ী খনিজ সম্পদ ও সামুদ্রিক খনিজ বালু পারমাণবিক শক্তি কমিশন ছাড়া আর কেউ উত্তোলন ও ব্যবহার করতে পারবে না। পরিবেশ ও দেশের ক্ষতি করে সামুদ্রিক প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করা উচিৎ নয়।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত বলেন, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য একটি দেশীয় ও প্রতিষ্ঠান ৩টি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। কেন সামুদ্রিক বালি ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তারা জানবেন। এতে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প একটি আন্তর্জাতিক কাজ। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করা উচিত হবে না। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কাজ করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। তাছাড়া বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতির বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত জানায়নি। এরপরও আমি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খুরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, সমুদ্রের লোনা বালি দিয়ে বিমানবন্দরের রানওয়ের সম্প্রসারণ কাজ হচ্ছে, এমন খবর তার জানা নেই। তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ নেবেন বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন