স্লোগান-‘দুর্নীতি, দুঃশাসন হবে শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’
আফজাল বারী
কাউন্সিলের জন্য স্বল্প সময় দিয়েছে সরকার। তবে এই স্বল্পতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করবে দলটি। বিপর্যস্ত সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিগুণ সাংগঠনিক প্রাণশক্তি ফেরাতে সময়োপযোগী কৌশল গ্রহণ করেছে হাইকমান্ড। শীর্ষ দুই নেতা নির্বাচিত হবার পর দেশ-বিদেশ সব মহলের চাহিদামোতাবেক দলের নির্বাহী কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। কাউন্সিলের স্লোগানের সাথে মিল রেখেই নেতা নির্বাচন করছে গঠিত বাছাই কমিটি।
কমিটির ধরন কেমন হবে তা পুরো ব্যাখ্যা না দিতে চাইলেও দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতা ইনকিলাবকে বলেন, উৎসবমুখর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে বিএনপি। নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্নকে মূল নির্যাস হিসেবে নিয়ে লেখা হচ্ছে দলের চেয়ারপার্সনের কাউন্সিল বক্তৃতা। ষষ্ঠ কাউন্সিলের লোগো ও স্লোগান চূড়ান্ত করা হয়েছে। ‘দুর্নীতি, দুঃশাসন হবে শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’-এই স্লোগানে উদ্দীপ্ত হবেন কাউন্সিলরা। তৈরি করা হয়েছে থিম সং ও আলাদা ওয়েব সাইট। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৮টি বই প্রকাশের। দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারাদেশের ২৭ হাজার ৩৫৬ জন কাউন্সিলরের কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে দেশি-বিদেশি অতিথিদের।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল কাউন্সিল আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদি সরকার পছন্দসই ভেন্যুর অনুমতি দিত, তাহলে কাউন্সিল আরো বেশি জমজমাট হতো। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের স্বল্প পরিসরের জায়গা নিয়ে তাই কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে তাদের মাঝে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় কাউন্সিলের সময়সূচি ঠিক করা হয়েছে। ১৯ মার্চ সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছাড়াও লন্ডন থেকে ভিডিও বক্তব্য দেবেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য জাতীয় কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এবারে কাউন্সিলের প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। এগারোটি অঙ্গসংগঠন এই কাউন্সিল সফল করার লক্ষ্যে জাতীয় কাউন্সিলের স্লোগানসহ তাদের নিজস্ব সংগঠনের লোগো দিয়ে আলাদা আলাদা পোস্টার করছে। দুই-একদিনের মধ্যেই প্রচারের কাযর্ক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে। প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি এবার প্রচার-প্রচারণা ফেইসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যমকে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
গয়েশ্বর রায় বলেন, নানা প্রতিকুলতার মধ্যে এবারের জাতীয় কাউন্সিল করতে যাচ্ছি। স্বল্প পরিসরের জায়গা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যেই আছি। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির এই জাতীয় কাউন্সিলের এত বিশাল কর্মষজ্ঞকে কেন্দ্র করে সারাদেশের নেতাকর্মীসহ জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সকল উপকমিটি রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে ‘থিম সং’ তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে আলাদা ওয়েব সাইটও। রাজধানীতে কাউন্সিল উপলক্ষে বিভিন্ন সড়ক মোহনা, সড়ক দ্বীপে পোস্টারিং, লাইটিংসহ বর্ণিলভাবে সাজানো হবে। কাউন্সিলের কয়েকদিন আগে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়েও আলোকসজ্জা করা হবে।
জানা গেছে, বিএনপির কাউন্সিলের পোস্টারে কারাগারের থেকে গণতন্ত্র বন্দির ছবির পাশাপাশি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছোট প্রতিকৃর্তিও স্থান পেয়েছে। ১৯ মার্চ সকাল ১০টায় শুরু হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মধ্যহ্নভোজ। এরপর বিকাল তিনটা থেকে শুরু হবে রুদ্ধদ্বার কাউন্সিল শুরু হবে। এতে আলোচ্যসূচিতে রয়েছে- শোক প্রস্তাব উপস্থাপন, দলের চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির রিপোর্ট পেশ, মহাসচিবের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির নিয়ে আলোচনা, দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দের নির্বাচন।
এদিকে দলের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে নয়াপল্টনের কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। পুরো এলাকা এখন সরগরম হয়ে।
গঠনতন্ত্রে আসছে নানা পরিবর্তন
বিএনপির গঠনতন্ত্রে আসছে নানা পরিবর্তন। গতকাল বিকেলে দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধনের উপকমিটির বৈঠকে হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য উপকমিটির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের খসড়া সুপারিশপত্র আগামী শনিবারের মধ্যে চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের সাবজেক্ট কমিটি (বাছাই কমিটি) গঠিত হয়। এর অন্য সদস্যরা হলেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব ও আসিফা আশরাফি পাপিয়া। শনিবারের মধ্যে এই কমিটি চূড়ান্ত খসড়া সুপারিশপত্র তৈরি করে তরিকুল ইসলামের হাতে তুলে দেবেন। এরপর প্রয়োজনে তা পরিবর্তন পরিবর্ধন করে চেয়ারপার্সনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আগামী ১৫ বা ১৬ মার্চ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটা কাউন্সিলে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার কাছ থেকে পাওয়া ৫৫টি প্রস্তাবের কপি গত শনিবারের বৈঠকে উপকমিটির সদস্যদের হাতে দেওয়া হয়। গতকাল তাদের মতামত শোনা হয়।
বৈঠক সূত্রমতে, দলে এক নেতার এক পদ রাখার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া মহাসচিবকে সহয়তা করতে একটি অতিরিক্ত মহাসচিব পদ সৃষ্টির প্রস্তাব এসেছে। তবে অতিরিক্ত মহাসচিব হলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ বিলুপ্ত করার বিষয়ে মত দিয়েছেন অনেকে। ৫৫টি প্রস্তাবের মধ্যে উপকমিটির কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব ভারতে চিকিৎসাধীন সালাহউদ্দিন আহমেদের ৪টি প্রস্তাব। কাছের নেতাদের মাধ্যমে পাঠানো ওই প্রস্তাবে দলীয় উপদেষ্টা পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যানের উপরে ও স্থায়ী কমিটির নিচের মানসম্পন্ন ১০ থেকে ১৫ জন দলীয় উপদেষ্টা রাখার প্রস্তাব করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ম-লিকে রাজনৈতিক ও বিষয়ভিত্তিক এ দুভাগ করার প্রস্তাব রেখেছেন। তিনি উপকমিটি গঠনের প্রস্তাব রেখে এর রূপরেখা দিয়েছেন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকদের অঞ্চল ভিত্তিক করারও প্রস্তাব রেখেছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ একইসঙ্গে ৭ জনের স্থলে ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রতিটি বিভাগে ২ জন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের প্রস্তাব দিয়েছেন।
চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ১৭টি বিষয়ভিত্তিক উপকমিটির প্রস্তাব দিয়ে প্রয়োজনে তা বৃদ্ধিরও সুপারিশ করেছেন। তিনি অর্থনীতি, বৈদেশিক সম্পর্ক, শিক্ষাসহ ১৭টি বিষয়ের নামও উল্লেখ করেছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, কো-চেয়ারম্যান পদে সৃষ্টিরও প্রস্তাব এসেছে। তবে অনেকে এর তীব্র বিরোধিতা করেন।
প্রকাশনা উপকমিটি : প্রকাশনা উপকমিটি গতকাল দুপুরে পল্টনের জামান টাওয়ার কনফারেন্স হলে সভা করেছে। জানা গেছে, কাউন্সিল উপলক্ষে প্রকাশনা উপকমিটি ৮টি বই প্রকাশ করবে।
প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর, শাহজাহান মিয়া স¤্রাট, মোহাম্মদ রেদুয়ান হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, মনিরুজ্জামান মনির, ড. রিজিয়া জুবেল প্রমুখ।
চিকিৎসা সেবা উপকমিটি : চিকিৎসা সেবা উপকমিটি বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেছে। উপকমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় জাতীয় সম্মেলন সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. আবদুস সালাম, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. সাইফুল ইসলাম সেলিম, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. নাসিরউদ্দিন পনির, মিসেস জাহানারা খাতুন ও বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক উপকমিটি : কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেছে সাংস্কৃতিক উপকমিটি। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সভায় কাউন্সিলের দিন জাতীয় ও দলীয় সংগীত, নাটক ও বিভিন্ন আলেখ্য অনুষ্ঠানের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাসাস সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক মনির খান, সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন আহম্মেদ উজ্জল, বাবুল আহম্মেদ, ইমতিয়াজ হোসেন চপল, আবু সালেহ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন