বিশেষ সংবাদদাতা : বিএনপি দুই আসামিকে দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নাটকটা ভালোই হয়েছে। নির্বাচিত হয়েছে দুই আসামি। একজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, অপরজন অর্থ পাচার মামলার আসামি। তিনি বলেন, একজন এতিমের টাকা মেরে দেওয়ার মামলার আসামি। আরেকজন মানুষ হত্যার, গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি, যার নাম আবার ইন্টারপোলে ওয়ান্টেড আসামি হিসেবে আছে। তারা জনগণকে কী দেবে?
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়ার ক্ষমতা দখলকে হাইকোর্ট অবৈধ করেছেন। তার হাতে গড়া দল মানুষের কী করবে? তারা নাকি নির্বাচন হতে দেবে না। মায়ের সামনে বাবার সামনে ছোট্ট শিশুকেও রেহাই দেওয়া হয়নি আগুনের আন্দোলন থেকে।
খালেদা জিয়ার কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হতে দেবে না বলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ দেশের মানুষকে পুড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের নামে দেশের মানুষকে পুড়িয়েছে খালেদা জিয়া। এখনও আগুনে দগ্ধরা ভুগছেন। কেন তাদের পোড়ানো হলো সেই জবাব খালেদাকে দিতে হবে। মানুষ পুড়িয়ে তিনি আন্দোলন করেন। সেই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বন্ধ করার আন্দোলন। এটাই তার লক্ষ্য। তার প্রিয় স্থান পাকিস্তান, সেখানে চলে গেলেই পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের নানা দিকে তুলে ধরে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথমে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান প্রচার করেছিলেন। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতারাও তা প্রচার করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ পৃথিবীর ঐতিহাসিক ভাষণ। এ ভাষণ শুনলে এখনও মনপ্রাণ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। তিনি এ ভাষণ দিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্বের আড়াই হাজার ভাষার মধ্যে অন্যতম সেরা ভাষণ। ইতোমধ্যে এটি ১২ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আরও ভাষায় অনুবাদ করা হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ভাষণ বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়া এই ভাষণ বন্ধের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ২ মার্চের ডাকে ৭ মার্চ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ এই সোহরাওয়ার্দী ময়দানে ছুটে আসে। বঙ্গবন্ধু শুধু ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি ৭ মার্চ ভাষণ দেবেন। তাতেই দেশের মানুষ লাঠিবৈঠা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পাওয়ার জন্য। তিনি তাদের সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ভাষণেই তিনি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুক্তির সংগ্রামের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখানে ৭ মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা। এ ঘোষণা আসলে তিনি দিয়ে আসছিলেন সেই ১৯৪৮ সাল থেকে। তারপর ধাপে ধাপে জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার লক্ষ্য ছিল অন্নবস্ত্রের ব্যবস্থা করা। সেজন্য নিজের জীবনে বারবার ঝুঁকি নিয়েছেন, কারাবরণ করেছেন। কিন্তু নীতিতে স্থির ছিলেন। সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্য।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল তাদের বিচার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হলো। এরপর পাল্টে যায় সব। যাদের এদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে আনা হয়, যারা বন্দি ছিল, তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের ছেড়ে দিয়েছে জিয়া। তখন অনেকে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে। যুদ্ধাপরাধীদের এদেশে ক্ষমতা দেওয়া হয়, প্রতিষ্ঠিত করা হয়। গোলাম আযমদের হাতে পতাকা তুলে দিয়ে মন্ত্রী বানানো হয়। খালেদাও তা করেছে। সেই লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা যায় তাদের হাতে, যারা এদেশের বিরোধিতা করেছে। বাংলাদেশকে পরিণত করা হয়েছিল লুটপাট-দুর্নীতির দেশ। ২১ বছর এমন ষড়যন্ত্র চলেছে।
সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রানারআপ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছি, রানারআপ হয়েছি। সামনে আরও বহুদূর যাব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’Ñঠিকই পারেনি। খেলায় এখন বাঙালিকে হিসাব করে বিশ্বের মানুষ। আমি চাই, আমার দেশের প্রতিটি মানুষ এই চেতনা নিয়েই এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশে মর্যাদা পেয়েছে। এদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আজ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছি। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, শিক্ষার উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধাবী, আমরা চাই তারা দক্ষ হয়ে দেশকে গড়ে তুলবে। চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিয়েছি দোরগোড়ায়। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ভিক্ষা নয়, নিজের পায়ে দাঁড়াব, দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে চলব, কারও কাছে হাত পেতে নয়। আমাদের যুবসমাজ, তারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশকে গড়ে তুলবে। বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন