বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

রহমত ক্ষমা ও মুক্তির সনদ

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা মুফতী মোঃ ওমর ফারুক : রহমত ক্ষমা ও মুক্তির ঘোষনা নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও আমাদের মাঝে রমজান উপস্থিত কিন্তু জানি না ক’জন এই মহা সনদ লাভ করতে পারব। কলেজ ভার্সিটির সর্বোচ্চ সনদ নিতে হলে, কোন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করতে হলে যেমন ভাল ভাবে লেখা পড়ার বিকল্প নাই অর্থ শ্রম সময় ব্যয় ছাড়া যেমন কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তদ্রুপ মহান মা’বুদের পক্ষ থেকে ঘোষিত প্রদত্ত সনদ নিতে হলে কি করতে হবে বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। বিশ^ জাহানের পালনকর্তা লালনকর্তা রাজাধিরাজ যার পরীক্ষায় পাশ করা সত্যিই অসীম সৌভাগ্যের ব্যাপার যা তাঁর দয়া ব্যতীত কোন ভাবেই সম্ভব নয়। চলমান বিশে^র খুব কম সংখ্যক লোকের দ্বারাই সম্ভব বলে মনে হয়।
কিন্তু মহান মাবুদ এই সনদ ধনী গরীব নারী পুরুষ রাজা প্রজা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন আহ! তিনি কতই না দয়ালু মেহেরবান। সনদ লাভের উপায় হিসাবে দান করলেন মাহে রমজান। মাত্র একটি মাস রহমত ক্ষমা ও মুক্তির সনদ প্রদানের জন্য দান করলেন। কি চমৎকার ব্যবস্থপনা কতই না উত্তম আয়োজন! কি যে অবর্ণনীয় অতুলনীয় অসীম সুযোগের হাতছানি, কি যে অপার মহিমা! এর দৃষ্টান্ত কি আছে? না না এর তুলনা হয় না রমজানের তুলনা নেই রমজানের তুলনা শুধু রমজান-ই।
মুমেনের জীবনে রমজানের গুরত্ব এতই বেশী যে দ’ুমাস পূর্ব থেকে এ মাস কে পাওয়ার জন্য বিশ^মানবতার মহান শিক্ষক গোটা দুনিয়ার একমাত্র আদর্শ যার জীবনে কোন পাপ পংখিলতা ছিলনা স্বয়ং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ মহান আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী ফরিয়াদ করেছেন এবং তার অনুসারীদের কে ফরিয়াদ করতে বলেছেন “হে মুনিব হায়াত মউতের মালিক আমাদের কে রজব ও শাবানে বরকত দেন এবং রমজান পর্যন্ত পৌছে দেন”এর দ্বারা অতি সহজেই বুঝা যায় যে রহমত ক্ষমা ও মুক্তির সনদের এ মাসের তাৎপর্য কত বেশী এর গুরুত্ব কত? যে মাসের চাঁদ উদয় হওয়ার সাথে সাথে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় জান্নাতের দরজা সমুহ খুলে দেয়া হয় প্রতিটি নেক আমলের ছওয়াব সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। মরদুদ শয়তান কে জেলখানায় শৃংঙখলাবদ্ধ করা হয়। হাশর মাঠে যখন কেউ কারো সাহায্যে আসবে না পিতা পুত্র কে চিনবে না স্বামী তার স্ত্রীকে চিনবে না যে দিন নবী রাসুলগণ পর্যন্ত ইয়া নাফসী ইয়া নাফসী বলতে বলতে ফেরেসান থাকবে সেই কঠিন মুর্হূতে আল্লাহর দরবারে জোড়ালো সুপারিশ কারী হচ্ছে মাহে রমজান, রমজানের সিয়াম।
বিশ^বাসীর মনস্তাত্বিক নৈতিক দেহ মন ও শরীরের রিপিয়ারীং বা সংস্কারের জন্যই রহমত ক্ষমা ও মুক্তির অফুরন্ত নিয়ামতে ভরপুর মাহে রমজান। এ মাসে এমন একটি মোবারক রজনী আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। লাভ লসের হিসাবে একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে যদি কোন ব্যাংক বা বীমা কোম্পানী ঘোষণা দেয় যে ডিসেম্বর মাসে এক লক্ষ টাকা ডিপোজিট রাখলে জানুয়ারীতে সত্তর লক্ষ টাকা প্রদান করা হবে (যদিও কোন ব্যাংক বা বীমা কোম্পানীর পক্ষে কোন দিন তা সম্ভব হবে না ) অথবা কোন সংস্থা বা রাষ্ট্র প্রধান যদি এমন ঘোষণা দেন যে, যারা এক মাস অমুক অমুক ট্রেনিং কাজটি ভালভাবে সম্পন্ন করতে পারবে তাদের প্রত্যেককে উন্নতমানের ১০০০ভরি স্বর্ণের মেডেল, নগদ ১০০০ ইউ এস ডলার এবং বিশে^র যে কোন দেশে ভ্রমণ করা ও থাকা খাওয়ার ফ্রি ভিসাসম্বলিত একটি মহামূল্যবান সনদ প্রদান করা হবে। তাহলে উক্ত ট্রেনিং কোর্সে কত লক্ষ দরখাস্থ জমা পড়বে এবং কি পরিমাণ প্রতিযোগিতা হবে? তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন একটি ঘোষণা আসলে কে না চাইবে অংশ নিতে? কার না মন চাইবে উক্ত ট্রেনিং কোর্সে অংশ নিয়ে জয়ী হতে, তাই নয় কি ?
এ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সত্যিই অপরিসীম যা বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়। উম্মতে মুহাম্মদী শ্রেষ্ঠ উম্মত তাই তাদের জীবন চলার পথে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় শয়তানের ধোকায় পড়ে সংঘঠিত ভুল সমুহ মুছে দেয়ার অতি সহজ ও সর্Ÿোত্তম হাতিয়ার হচ্ছে মাহে রমজান। যার প্রতিটি মুর্হূত একজন রোজাদারের নিকট স্বর্ণের খনির চেয়েও অধিক মূল্যবান। অথচ সমাজের সর্বত্র এমন কিছু লোক দেখা যায় যারা অনর্থক রমজানের রোজা গুলো ছেড়ে দিচ্ছে খোড়া অজুহাতে শুধুমাত্র খামখেয়ালিপনা ও সদিচ্ছার অভাবে দৃঢ মনোবল ও সৎ সাহসের অভাবে যা মোটেই উচিৎ নয়। ঈমানের দাবীদার কোন ব্যক্তি ফরজ রোজা ফরজ নামাজ এবং অন্যান্য ফরজ কাজ গুলো ছেড়ে দেবে ইহা ঈমানের দাবীর সাথে বেমানান। অবশ্য এ দেশে অনেকে এমন আছেন যারা নিজেদের কে খুব খাঁটি সাচ্চা মুমিন বলে দাবী করেন আর বলেন নামাজ না পড়লে কি হবে আমার ঈমান ঠিক আছে? তাদের সংখ্যা ও কম হবে না।
রোজা শুধুমাত্র একটি ইবাদতের নাম নয় এর মধ্যে রয়েছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ। রোজা বা সওম এমন একটি বরকতময় কাজ যা একজন ব্যক্তির সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। সারা বছর অবিরাম গতিতে নানান কিছু ভক্ষণ করার ফলে শরীরের শিরা উপশিরা রগ ও রক্তনালী গুলো অনেকাংশে দূর্বল হয়ে পড়ে দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার ফলে শরীরের অংঙ্গ পতংঙ্গ শিরা উপশিরা গুলোতে নতুন তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ফলে শরীর ও দেহ মনে সতেজতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে রমজানকে ইয়ারলী বডি রিপিয়ারীং বা শরীর মনের বার্ষিক পুন:সংস্কারক বলা হয়। রোজা দ্বারা মেদ ভুড়ি কমে শরীর শ্লিম থাকে ওজন স্বাভাবিক থাকে, চেহারা উজ্জ্বল হয় সুস্থ্য সুঠাম দেহের অধিকারী হতে চাইলে রমজানের এক মাস রোজা তাদের জন্য অন্যন্য উপাদান। সর্ব্বোপরি রোজা পালনে কিছু সময়ের জন্য হলে ও মহান আল্লাহর গুণে গুণাম্বিত হওয়া যায় ফলে বান্দার সাথে মা’বুদের গভীর সম্পকের সেতু বন্ধন মজবুত হয়। বিশ^ জাহানের মালিকের সাথে যে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও দেশের সম্পর্ক গভীর হবে তাদের চাওয়া পাওয়ার আর কিছুই বাকী থাকে না তারা উভয় জাহানেই সফল। যারা দু’জাহানে সফলতার সর্বোচ্চ মাকামে আরোহন করতে চায় তাদের উচিৎ রহমত ক্ষমা ও মুক্তির সনদ লাভের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজকে প্রথম সাঁড়ীর বিজয়ী হিসাবে উপস্থাপন করা।
যে সকল মসজিদে খতমে তারাবী অনুষ্ঠিত হবে ঐ সমস্ত মসজিদের কমিটি ইমাম মুয়জ্জিন ও মুসুল্লীদের কাছে বিনীত অনুরোধ তারাবীর নামাজে তিলাওয়াতের মাধ্যমে কুরআন খতম করার পাশাপাশি প্রতি রাতে নামাজের আগে বা পরে প্রতি পারার সারমর্ম সংক্ষিপ্ত আকারে মুসুল্লিদের জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করলে কুরআন নাযিলের মাসে কুরআনের প্রতি অধিক ভালোবাসাই প্রকাশ পাবে ।
যে কুরআনের কারণে রমজান মাসের এত সম্মান এত মর্যাদা-মহিমা এত আয়োজন যে কুরআন পাওয়ার বদৌলতে মুহাম্মদ সা:স্যাইয়েদুল মুরসালিন, যে কুরআন বহন করে নিয়ে আসার দরুণ ফেরেস্তা হলেন রঈসুল মালাঈকা যে মাসে কুরআন নাযিল হলো সে মাস সকল মাসের সেরা যে রাতে কুরআন এলো সে রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও বেশী যে কাঠের টুকরাতে কুরআন রেখে তিলাওয়াত করা হয় রেহাল তার মর্যাদা দুনিয়ার যে কোন রাজা বাদশার আসবাবপত্রের চেয়েও বেশী কারণ কোন মূল্যবান ফার্নিচার অথবা প্রেসিডেন্টের বাস ভবনের কোন দামী জিনিস হাত থেকে পড়ে গেলে বা কোন কারণে ময়লা লাগলে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে কাউকে সালাম করতে দেখা যায় না অথচ কুরআনের রেহাল হাত থেকে কোন কারনে পড়ে গেলে তা পরিস্কার করে সালাম করা হয় বুকের সাথে জড়িয়ে ধরা হয় চুমু খাওয়া হয়।
তাহলে যে বা যারা কুরআন আকড়ে ধরবে তাদের মর্যাদা কি কমে যাবে? তারা কি বেকার থাকবে, না খেয়ে উপবাস থাকবে? তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে? সমাজের কেউ তাদের সাথে আত্বীয় করবে না ? অথচ আমরা নিজেরাও কুরআন বুঝি না আমদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সোনামনিদের কেও ভালভাবে কুরআন জানা বুঝার ব্যবস্থা করছি না শুধু তাই নয় মসজিদ মাদ্রাসা কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ের সিলেবাস গুলোতেও যথাযথ ভাবে কুরআন জানা বুঝার সু ব্যবস্থা নেই তাহলে সমাজ হতে কি করে অশান্তি দূর ? হবে কি করে ব্যক্তি চরিত্র উন্নত হবে? কুরআন বিহীন ঘর যেমন পোকা মাকড়ের আকড়া তদ্রুপ কুরআন বিহীন সমাজ দূর্নীতির আখড়া তাই সমাজের সর্বত্র শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনার ঠিকসই ববস্থাপত্র আজই সকলের গ্রহন করা দরকার।
যেই মহাগ্রন্থ বিশ^ মানবতার শান্তির একমাত্র পাথেয় যাকে জানতে চেয়ে বুঝতে চেয়ে এর সততা যাচাই করতে এসে কত কাফের বেঈমান মুশরিক দার্শনিক বিজ্ঞানী কুরআনের মধ্যাকর্ষণ শক্তির কাছে নিজেেেদর কে তুচ্ছ মনে করে কুরআন কে মাথার মুকুট বানিয়েছে অথচ সেই মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে শুধুমাত্র তিলাওয়াতে শেষ করেই আমরা অনেকে কতই না আত্ব¡তৃপ্তি লাভ করি! কুরআন তিলাওয়াত অব্যশই উত্তম আমল তাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তাই বলে কুরআন কি শুধু তিলাওয়াতের বিষয়? অর্থাৎ সকাল বিকাল তিলাওয়াতের পাশাপাশি কুরআন জানা বুঝার আয়োজন করতে হবে সে অনুযায়ী জীবনের প্রতিটি বিষয় নতুন করে সাজাতে হবে।
লেখক: কলামিস্ট, কবি, সাহিত্যিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন