ইনকিলাব ডেস্ক : ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল কয়েকটি স্থানে ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। বাউফলে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি। এছাড়া ভোলার বোরহানউদ্দিন ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কুমিল্লার দেবিদ্বারে আ’লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বাউফল উপজেলা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে সোমবার রাতে নির্বাচনী সহিংসতায় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আশ্রাফ ফকির (৩৫) নিহত হয়েছে। নিহত আশ্রাফ আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল হক ফকিরের খালাতো ভাই। নৌকার পক্ষে জনসংযোগকালে প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে জখম করার ফলে আশ্রাফের মৃত্যু হয়।
এদিকে দলীয় কর্মী খুনের ঘটনার পর থেকে বাউফল শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দলীয় কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সকালে বাউফল শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ডাকে এই বিক্ষোভ থেকে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারণসহ হত্যাকারীদের বিচার দাবি জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
বিকেলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এ কে এম শামিমূল হক সিদ্দিকী, পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে উপজেলা মিলনায়তনে নির্বাচনী আইন-শৃংখলা নিয়ে সভা করেছে। সভা চলাকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে এবং এক পর্যায়ে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হন।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ দুইজন আহত হয়েছে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানকে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ছিদ্দিকের বাজারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সামসুল হক ফকিরের পক্ষে তার খালাতো ভাই আশ্রাফ মিলঘর ব্রিজের কাছে নৌকা মার্কার পক্ষে জনসংযোগ করছিল। এসময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জাহাঙ্গীর উল্লাহর সমর্থকরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় বাউফল থানার ওসি আ জা ম মাসুদুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এলাকার বারেক মোল্লার বাড়ি থেকে রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুজ্জামান বলেন, রক্তাক্ত অবস্থায় আশ্রাফকে উদ্ধার করে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। গতকাল এ হত্যাকা-ে জড়িত থাকার সন্দেহে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এরা হলেন, হারুন-অর-রশিদ ও আনোয়ার হোসেন। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীর হামলা
বোরহানউদ্দিন (ভোলা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনে আ’লীগ মনোনীত পক্ষিয়া ইউনিয়নের প্রার্থী নাগর হাওলাদারের প্রচারকারী ও কর্মীদের উপর একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আলাউদ্দিন সর্দার ও তার অনুসারীরা মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে হামলা, প্রচারযন্ত্র, অটোবাইক, মোটরসাইকেল ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের ছবিতে অগ্নি সংযোগ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার সন্ধ্যায় ওই ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের কাই মিঝি বাড়ির দরজায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নাগর হাওলাদার বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় একটি মামলা দয়ের করেন। পুলিশ সোমবার গভীর রাতে ২ আসামীকে গ্রেফতার করে কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী আহত মনির মাতাব্বর, কামাল মাতাব্বর, বাচ্চু, মনির ফরাজি, নুরুজ্জামান ও থানা সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় পক্ষিয়া ইউনিয়নের আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী পক্ষিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নাগর হাওলাদারের কর্মী-সমর্থকরা সাউন্ড বক্সে প্রচার করতে করতে স্থানীয় রাণীগঞ্জ বাজার থেকে বোরহানগঞ্জ আসতে থাকে। ওই সময় বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন সর্দারের বাড়ির কাছে কাইমুদ্দিন মিঝি বাড়ির দরজায় আলাউদ্দিন, তার স্ত্রী ও তাদের অনুসারীরা মরিচের গুঁড়া গুলে ছুঁড়ে মেরে মনির মাতাব্বর, কামাল মাতাব্বর, বাচ্চু, মনির ফরাজি, নুরুজ্জামানকে বেধড়ক মারধর করে প্রচারকাজে ব্যবহৃত অটো-বাইক, সাউন্ড বক্স ও জেনারেটর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। ওই সময় আলাউদ্দিন গংরা প্রচারকারীদের পিছনে থাকা নাগর হাওলাদারের কর্মী কামাল মাতাব্বরের নতুন মোটর সাইকেলও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে। ঘটনার পরপরই এসপি (সার্কেল) রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সোমবার রাতে উপজেলার ১১ নং বড়মাছুয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন মারাত্মক আহত হয়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে গুরুতর জখম তিন জন ইব্রাহীম খা (৩২), ইমরান (২২), জাকারিয়া (৩০)কে আশংকাজনক অবস্থায় ওই রাতেই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই রাতে বড়মাছুয়া বাজারে আ’লীগ প্রার্থী নাসির উদ্দিন (নৌকা)-এর কর্মী-সমর্থকরা মিছিল বের করে বিদ্রোহী প্রার্থী মাইনুল (আনারস)-এর নির্বাচনী অফিস অতিক্রম করার সময় কর্মী বৈঠক চলাকালে কর্মীরা মিছিলে বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় দুই প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে আহত বাবু খান (২০), মোস্তফা আকন (২৫), কালাম ঘরামী (৪০) ও সোহরাব হোসেন (৩৮)কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জহিরুল ইসলাম ঝারু এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনুছ মাস্টারের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার গভীর রাতে ঘটনার সূত্রপাত হয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত ওই এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ভাংচুর অব্যাহত ছিল। এ সময় অন্তত ১০-১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নির্বাচনী অফিস ও বাড়ি-ঘরে হামলা এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সোমবার রাতে ওই ইউনিয়নের আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনুস মাস্টারের মিছিলে হামলা চালায় আ’লীগের প্রার্থী জহিরুল ইসলামের কর্মীরা। পরে ওই ইউনিয়নে সংচাইল গ্রামে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনুছের একটি নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের পরই পরিস্থিতি আরোও অশান্ত হয়ে উঠে।
এ সময় ইউনুস মাস্টারের লোকজন নৌকার সমর্থক জামান (২৭), আমির (৩০), শাহীন (২৮)সহ ৫-৬ জনকে মারধর করে আহত করে। ওই ঘটনার জের ধরে পরে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় উভয় গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন