হোসাইন আহমদ হেলাল : লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এ কে এম টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ভয়াবহ জাল-জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক থাকা অবস্থায় তিনি এই জাল-জালিয়াতি করেছেন। এছাড়া লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক থাকা অবস্থায়ও তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ওঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর এসব জাল-জালিয়াতির বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। গত ২ মার্চ দুদক এ কে এম টিপু সুলতানসহ ৭ কর্মকর্তাকে নোটিশ প্রদান করেছে।
জানাযায়, অ্যাওয়ার্ডি সাহারা খাতুন ঢাকার মিরপুরস্থ ৬-ক, রোড নং-১-এর, ১১/১ নম্বর প্লটটির বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এ বরাদ্দের নথি নং ৯৫/৯২। পরবর্তীতে ব্যাকডেটে কাগজপত্র সৃজন করে প্লটটি জয়নাল আবেদিনকে বরাদ্দ দিয়ে তার নামে লিজ দলিল রেজিস্ট্রির সুপারিশ করেন তৎকালীন উপ-পরিচালক এ কে এম টিপু সুলতান। ১৯৯৫ সালের ৪ মে ভুয়া অ্যায়ার্ডির নামে বরাদ্দপত্র ইস্যুর বিষয়ে এ কে এম টিপু সুলতান নিজেই তদন্ত করেন। এ অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণের জন্য তিনি রেজিস্টারের পাতা ছিঁড়ে সেখানে ভুয়া অ্যায়ার্ডির কাগজপত্র ঢুকে দেন। জনৈক নাছির উদ্দিন ভূঁইয়ার ৩ কাঠার প্লট অন্যকে বরাদ্দ দেয়া এবং বিকল্প প্লট বরাদ্দে গত ২১ বছর ভোগান্তির অনুসন্ধানের সূত্র ধরে সামনে এসেছে এই জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুদক সূত্র জানায়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্লট জালিয়াতি ও দুর্নীতি অনুসন্ধানে পুনঃগঠিত হয় প্রাতিষ্ঠানিক অনুসন্ধান টিম। এক বছরের বেশি সময় টিমটি কাজ করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। তবে টিম বেশকিছু সুপারিশ করেছিল। এর মধ্যে ছিল জাগৃক থেকে নামে-বেনামে একাধিক প্লট গ্রহণ এবং প্লট জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পদ অনুসন্ধান। অজ্ঞাত কারণে কমিশন সুপারিশ দু’টি বাস্তবায়ন করেনি। তবে কয়েকজন কর্মকর্তার সুনির্দিষ্ট জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অনুমোদন দেয়। প্রাতিষ্ঠানিক টিম ভেঙে পৃথক অনুসন্ধানে নিয়োগ করা হয় কর্মকর্তা। একটি অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন উপ-পরিচালক মো. জুলফিকার আলী। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে বেশ কিছু রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। এ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২ মার্চ ৭ কর্মকর্তাকে তলবি নোটিশ দেন। নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন, জাগৃকে দীর্ঘদিন প্র্রেষণে চাকরি করে যাওয়া উপ-পরিচালক (বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব) একেএম টিপু সুলতান, এক দশক ধরে জাগৃকে প্রেষণে দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান সদস্য (এস্টেট) মোহাম্মদ আজহারুল হক, পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, উপ-পরিচালক আল মামুন মোর্শেদ, সহকারী পরিচালক মোস্তফা কামাল, সংস্থার গৃহসংস্থান বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আমির আলী ম-ল এবং মহিবুর রহমান। আগামী ১০ মার্চ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, এ কে এম টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ। মিরপুর ১১ নং সেকশনের ব্লক-‘এ’র ৪, ৫, ৮নং রোড, ব্লক ‘এফ’র ১৯, ২০নং প্লট এবং ‘ই’ ব্লকের ১২নং রোডের ১৯৯ নং প্লট, ১৬ নং সেকশনের ২৩, ২৪, ২৫ নং প্লটের জাল বরাদ্দপত্র তৈরি করে এবং রেজিস্ট্রি বালাম বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রকৃত অ্যাওয়ার্ডির কাগজপত্র ফেলে ভুয়া অ্যাওয়ার্ডির নামে বরাদ্দ দেন তিনি। দুদক এগুলোর নথি [নথি নং এম.পি-৯৫/৯২ (মূল ও অংশ), মিরপুর সেকশন ৬-ক, রোড নং-১, প্লট নং-১১/১], (নথি নং এম.পি-১০২০/৯৩), (নথি নং এম.পি-৮৪০/৯৩) এবং (৮৩৩/৯৩) মিরপুর সেকশন ১৬, প্লট নং-২৩, (নথি নং এম.পি-৮৪১/৯৩), (৮৩২/৯৩, মিরপুর সেকশন ১৬, প্লট নং-২৪), (নথি নং এম.পি-১৯১১/৯৩ মিরপুর সেকশন ১৬, প্লট নং-২৫), (নথি নং শাখা-৯/১ এম-৫২/২০০৫) এবং রেজিস্ট্রি বালাম বই জব্দ করবে বলে জানায় সূত্র। এদিকে জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাগৃকে দীর্ঘদিন প্রেষণে দায়িত্ব পালনকারী এ কে এম টিপু সুলতান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রেকর্ডপত্র না দেখে এ মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। দুদকের তলবি নোটিশ এখনও হাতে পাইনি।’
জাগৃকের সদস্য (এস্টেট) মোহাম্মদ আজহারুল হক বলেন, ‘দুদক তলব করেছে বলে শুনেছি। চিঠি হাতে পেলে অবশ্যই দুদকে যাব। আমি আমার বক্তব্য দিয়ে আসব।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন