শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিদ্যুৎ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা

প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ: ২০২১ সালে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বিদ্যুতের উন্নয়নে এক সাথে আলাদা ৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের ১৫ লাখ নতুন গ্রাহক সৃষ্টি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর সঞ্চালন লাইন, সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ দিক উন্মোচন হবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিদ্যুতের ৫টিসহ মোট ১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এগুলোতে মোট ব্যয় হবে সাড়ে ১৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। একনেকের সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্পের বিস্তারিত জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ১৬টি প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল ১৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা, সংস্থাগুলোর নিজস্ব ৫৯৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা পাওয়া যাবে ২ হাজার ২২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এদিকে, এক সঙ্গে বিদ্যুতের এতগুলো বড় প্রকল্প অনুমোদনের প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে প্রকল্পগুলো ২০১৯ সালের মধ্যেই বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আর তাই একদিকে বিদ্যুতের গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো, অন্যদিকে উদ্পাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের অপচায় রোধ ও সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। একদিকে উন্নয়ন করে অন্যদিকে ঘাটতি রাখতে মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে না। এ জন্য ধারাবাহিকভাবে আসা এসব প্রকল্প একসঙ্গে অনুমোদন দিয়ে কাজের গতি আনার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থের যোগান প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্বে রয়েছে এই খাত তাই বিগত অর্থবছরেও সর্বোচ্চ গুরুত্বের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সংশোধিত এডিপিতে তাদের আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে। তা ছাড়া বাস্তবায়ন সক্ষমতা দেখাতে পারলে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের রয়েছে।
এর আগে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ বিভাগ একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণ করে। সপ্তম পঞ্চবার্র্ষিকী পরিকল্পনায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মহাপরিকল্পনা মোতাবেক ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়। সেই মোতাবেক ২০১৬ সালে ১৬ হাজার মেগাওয়াট, ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এরই মধ্যে ১৪ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছি। এরই মধ্যে ৭৬ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল একসঙ্গে ৫টি আলাদা এবং ভীন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলো বলে জানান সংশ্লিষ্টরা
মহাপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশের কোনো স্থানে অন্ধকার থাকবে না। সকলের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। এমন কোনো এলাকা পাওয়া যাবে না যেখানে বিদ্যুৎ থাকবে না। আমরা একনেকে যে প্রকল্প অনুমোধন দিয়েছি এর ফলে ১৫ লাখ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আরো ১৫ লাখ গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। এজন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ গ্রাহক সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৪ হাজার কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে। ৬ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। দেশব্যাপী ৭৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে লাইন নির্মাণ ছাড়াও ৮৩টি নতুন উপকেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যমান ৩৫টি উপকেন্দ্র আপ গ্রেড করা হবে।
বিদুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে দেশের ৭৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুু সংযোগের আওতায় রয়েছে। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের ২২ শতাংশ মানুষের মধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।
কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের এই কর্মসূচির সাথে সরকারেরও মত রয়েছে। এ লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দে সর্বোচ্চ গুরুত্বের খাতে রাখা হয়েছে। অন্যান্য বিভাগ থেকে কর্তন করে অতিরিক্তি এক হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে এই বিভাগে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এদিকে গতকাল একনেকে ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রিপাওয়ারিং প্রকল্পে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১২০ কোটি ও সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ২২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর থেকে ২০১৯ সাল নাগাদ এর কাজ শেষ হবে। এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করবে সরকার। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগে এটি বাস্তবায়ন হবে। এজন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ এর কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ৫১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ইজিসিবি লিঃ এর আওতায় কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার ২৬০০ মে:ও: আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ পুনর্বাসন, ইআইএ এবং সম্ভাব্যতা যাছাই প্রকল্পের অনুমোদন। আর ১৮৫ কোটি ব্যয়ে খুলনা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
একনেকের সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ৪৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় বেতার ভবনে আধুনিক ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপন, ৩৮৪ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের গ্রামীণ সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প, ১২৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জামালপুর শহরের নগর স্থাপত্যের পুনঃসংস্কার ও সাংস্কৃতি কেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প, ২৭৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার ইস্কাটনে সিনিয়র সচিব, সচিব ও গ্রেড-১ কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি পুলিশ সুপার অফিস ভবন নির্মাণ (সিআইডি ও পিবিআই অফিসসহ) প্রকল্প, ১ হাজার ২৯৩ কোটি ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ২৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগ গ্রামীণ এ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান-৩য় পর্যায় প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ৬৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিঃ এর উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণ, ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের আন্তজার্তিক বিমানবন্দরসমুহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে জরুরি সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও সংস্থাপন প্রকল্প এবং ১৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাইটেক পার্ক, সিলেট (সিলেট ইলক্ট্রনিকস সিটি)-এর প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন