স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল রাখায় এ রায়কে সরকারি ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার সারা দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ মীর কাসেম আলীসহ আটক সকল জামায়াত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি করে গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, সরকার ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করছে। সরকারি ষড়যন্ত্রের শিকার মীর কাসেম আলী। সরকার মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে নিজেদের দলীয় লোকদের দ্বারা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র করছে।
আদালত সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের যে রায় ঘোষণা করেছেন তা একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। এ রায়ে মীর কাসেম আলী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি রিভিউ আবেদন করবেন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে তিনি খালাস পাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
বিবৃতিতে বলা হয়, মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আনীত সরকারের অভিযোগের সাথে তার ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতাও নেই। সরকার পক্ষ আদালতে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যে সব ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন সেখানে মীর কাসেম আলীর নাম নেই। অভিযোগে ঘটনার স্থান, সময় এবং যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে সরকারের দাখিল করা ডকুমেন্ট অনুযায়ী ওই সময়ে মীর কাসেম আলী ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি তখন ঢাকায় ছিলেন। মীর কাসেম আলী তার ঢাকায় অবস্থানের প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করেছেন। ওই সময়ে জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত খবরসমূহ প্রমাণ হিসেবে সরকার পক্ষ আদালতে পেশ করেছেন। সরকারের দাখিল করা জাতীয় সকল পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে মীর কাসেম আলীর ঢাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখার খবর ও ছবি প্রকাশিত হয়েছে। পক্ষান্তরে ওই সময়ে জাতীয় দৈনিকগুলোতে চট্টগ্রামের যে সব খবর প্রকাশিত হয়েছে তার কোনটিতেই মীর কাসেম আলীর নাম নেই। এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, অভিযোগ সংঘটনকালীন সময়ে মীর কাসেম আলী ঢাকায় ছিলেন, চট্টগ্রামে ছিলেন না। চট্টগ্রামের ঘটনাস্থলে তার অনুপস্থিতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে তাকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করার ব্যবস্থা করেছে। জনগণ সরকারের দায়ের করা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বিচারের নামে যে প্রহসনের আয়োজন করেছে দেশে-বিদেশে তার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। সরকারের মন্ত্রী ও সরকার দলীয় নেতাগণ গত কয়েক দিন যাবত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের লক্ষ্য করে যে বক্তব্য রেখেছেন তা আদালতের ওপর এক নগ্ন চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছু নয় বলে দেশের জনগণ মনে করে। মন্ত্রীদের এ বক্তব্যে মীর কাসেম আলী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের বিচার থেকে শুরু করে আপিল বিভাগ পর্যন্ত এ মামলার বিভিন্ন স্তরে সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বিচারকে প্রভাবিত করার জন্য যে অবাঞ্ছিত ভূমিকা পালন করা হয়েছে তা বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দেশবাসী অবগত আছেন যে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপিত হওয়ার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সমাবেশের দাবি বিবেচনায় নিয়ে রায় দেয়ার জন্য বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানান। ২০১৩ সালে তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিশরে সফরে গিয়ে আল্লামা সাঈদী ও আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় রায়ের দিন ও তারিখ ঘোষণা করে বক্তব্য দেন। অতি সম্প্রতি সরকারের দুইজন মন্ত্রী মীর কাসেম আলীর মামলা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রমাণিত হয় সরকার মীর কাসেম আলীকে হত্যা করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। আমরা সরকারের এ জঘন্য ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
জামায়াতের হরতাল সামনে রেখে বিজিবি মোতায়েন
জামায়াতের হরতালকে সামনে রেখে রাজধানীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হযেছে। হরতালে নাশকতারোধে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নেয়াসহ বিভিন্ন স্থানে টহল শুরু করেছেন বিজিবির সদস্যরা। বিজিবির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসীন রেজা জানান, জামায়াতের হরতালকে কেন্দ্র করে নাশকতা প্রতিরোধ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গতকাল সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীতে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এর প্রতিবাদে আজ বুধবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন