রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

শিশুদের প্রতি ভালোবাসা

| প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অধ্যক্ষ মো: ইয়াছিন মজুমদার

\ এক \
সাম্প্রতিক সময়ে শিশু নির্যাতনের চিত্র ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। শিশুদের ভালোবাসা ও তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে ইসলাম যে দিক নির্দেশনা দিয়েছে তা মেনে চললে এ নৈতিক অবক্ষয় থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হত। হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন এক বেদুইন নবী (স:) এর কাছে এসে বললো আপনারা শিশুদের চুমু দেন আমরাতো তাদেরকে চুমু দেই না। উত্তরে নবী (স:) বলেন আল্লাহ তাআলা তোমার অন্তর থেকে দয়ামায়া উঠিয়ে নিয়ে গেলে আমি তার কি করতে পারি। (বুখারী) একদা নবী (স:) ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য গৃহ থেকে বের হলেন একটু গিয়ে দেখলেন এক শিশু মলিন বেশে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। নবী (স:) তার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন বাবা তুমি কাঁদছে কেন? শিশুটি জবাবে বলল, আমার বাবা মা বেঁচে নেই আমি অসহায়, ঈদে আমার কোন পোষাক নেই, আমি দু:খে কাঁদছি। নবী (স:) শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে এলেন, তাকে গোসল করিয়ে নতুন পোষাক দিলেন এবং বললেন আজ থেকে আমি বিশ্ব নবী মোহাম্মদ (স:) তোমার বাবা, আয়েশা (রা:) তোমার মা, ফাতেমা (রা:) তোমার বোন। নবীজির আদর পেয়ে শিশুটি তার দু:খ ভুলে গেল।
ছোট শিশু উমায়েরের একটি ছোট পাখি ছিল। একবার সে বসেছিল তার নিকট পাখিটি ছিলনা। নবীজি (স:) তার নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন বললেন হে উমায়ের তোমার পাখিটি কোথায়? ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও দ্বীনি শত ব্যস্ততার মধ্যেও নবী (স:) শিশুটির পাখির বিষয়টি স্মরণ রেখেছেন বলে শিশুটি অবাক হল। নবী (স:) এর দুই নাতি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (রা:) কে নবী (স:) কত আদর করতেন তা ইতিহাস খ্যাত। নবীজি ঘোড়ার মত হামাগুড়ি দিয়ে চলতেন আর নাতিরা নবী (স:) এর পিঠ মোবারকে আরোহন করতেন। যায়েদ বিন হারেসা (রা:) শিশু কালে দাস হিসেবে বিক্রি হন। হাত বদল হতে হতে নবী (স:) এর হাতে এসে পড়েন। তার পিতা মাতা তার খোঁজ পেয়ে তাকে মুক্ত করতে নবী (স:) এর কাছে আসেন। নবী (স:) তাকে মুক্ত করে দিয়ে তার পিতা মাতার সাথে চলে যাওয়ার অথবা নবী (স:) এর নিকট থেকে যাওয়ার যে কোন একটি গ্রহনের সুযোগ দিলেন। তিনি নবী (স:) এর সাথে থাকার ইচ্ছা পোষন করলেন। নবী (স:) এর ¯েœহের কারণে সে এরূপ করেছিল। পরবর্তীতে নবী (স:) তাকে আপন পালক পুত্র হিসেবে গ্রহন করেছিলেন।
অনেক অসহায় পরিবার অভাবের তাড়নায় শিশুদের বাসাবাড়িতে, গ্যারেজে, শিল্পকারখানার কাজে নিয়োজিত করছে। ছোট মানুষ, কাজে তার কিছু ভুল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সামান্য ভুলের জন্য মালিক পক্ষ অনেক সময় তাদের সাথে নির্দয় আচরণ করেন। আপনার ছোট শিশুটির কথা একটু ভাবুন, তাকে কি এ ধরণের কাজে নিয়োজিত করবেন? আর সেই বা এ বয়সে কতটুকু দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারবে? আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (স:) বলেছেন- কেউ তার অধীনস্থ (চাকর) কে অন্যায়ভাবে একটি বেত্রাঘাত করলেও কিয়ামতের দিন তার থেকে তার বদলা নেয়া হবে (তাবরানী)। আবু বকর (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (স:) বলেছেন- অধীনস্থদের (চাকর) প্রতি ক্ষমতার অপব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা (ইবনে মাজাহ)। মনিব যা খায়, যে ধরণের পোষাক পরে দাস-দাসীদেরকে একই ধরণের খাওয়া ও পোষাক প্রদানের নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে। নবী (স:) বলেছেন- তোমাদের কারো খাদেম তার জন্য খাবার নিয়ে এলে তাকে তার সাথে বসিয়ে খাবার খাওয়াতে না পারলে (কমপক্ষে) এক বা দুই লোকমা যেন তার মুখে তুলে দেয়। কারণ সে কষ্ট করে তার জন্য খাবার প্রস্তুত করে এনেছে (বুখারী)। দাস-দাসী কোন ভুল করলে ক্ষমা করা উত্তম। আল্লাহ বলেছেন- ক্ষমা প্রদর্শন কর, ভালো কাজের আদেশ দাও, জাহেলদের থেকে বিমুখ থাক (সূরা আরাফ-১৯৯)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন