স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে সংসদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রী-এমপিরা। গতকাল রাতে সংসদে অর্নিধারিত আলোচনায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম ও জাসদ দলীয় সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল প্রত্যেকে এ রায় সঠিক হয়নি বলে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তারা বিচারকদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, তারা নিজেরাই আইন লঙ্ঘন করে এই অবৈধ রায় দিয়েছেন।
সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করেছে সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু ৫ম সংশোধনী বাতিল হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কীভাবে থাকে বলে পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ’৭২ এর সংবিধানকে উপমহাদেশের সেরা সংবিধান বলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। আমি বলবো, যারা অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন তাদের কথা। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা ভারতকে অনুসরণ করেছিলাম এখন ভারতে এটা নেই। তার মতো একজন মানুষ এ ধরনের অসত্য কথা বলতে পারেন। ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলামও নানা কথা বলেছেন। এরা সংবিধান প্রণয়নের সময় ’৭২-এর সংবিধান যখন করা হলো তখন বললেন এক রকম আবার এখন তারা বলছেন আরেক রকম। তারা বলছেন, পৃথিবীতে নাকি এটা নেই। তাদের বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সুইডেন, দাক্ষণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংসদ বিচারপতিদের ইমপিচ করে থাকে। একমাত্র ব্যতিক্রম পাকিস্তান।
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, সামরিক শাসক আইয়ুব খান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেছিলেন। সেই আইয়ুব খানের পদ্ধতি আমাদের অ্যামিকাস কিউরিদের পছন্দ। এই সুপ্রিম জুডিশিয়ালে বলা আছে, প্রধান বিচারপতি এবং আরো দুইজন বিচারপতির সমন্বয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হবে। কিন্তু যদি প্রধান বিচারপতিই অভিযুক্ত হন তাহলে তার সহকর্মী কি তার বিচার করতে পারবেন। অ্যামিকাস কিউরিরা ভুল তথ্য দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এই সংসদকে হেয় করেছেন, কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন। দেশের সমস্ত ক্ষমতার মালিক জনগণ। সেই জনগণের ভোটে এ সংসদ নির্বাচিত। আমরা প্রেসিডেন্ট, স্পিকারকে ইমপিচমেন্ট করতে পারি। কিন্তু এক জায়গায় করা যাবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ৫ম সংশোধনী বাতিল করেছে। সেটা বাতিল হলে জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকে কীভাবে। কামাল হোসেন নামের আগে লিখেন সংবিধান প্রণেতা। ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলাম বলছেন, তারা সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। তারা ’৭২ এর সংবিধান করলেন একরকম আর এখন বলছেন আরেকরকম। তারা মানুষের কাছে কীভাবে মুখ দেখাবেন? যারা এই সংশোধনী বাতিলের পক্ষে ওকালতি করেন তাদের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তারা নিজের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাদের ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কিছু করার নেই।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম সংশ্লিষ্ট বিচারকদের উদ্দেশে বলেছেন, নিজেরাই আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ রায় দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন জনগণের প্রতিনিধিরা। আমরা যারা সংসদ সদস্য, তারা জনগণের পক্ষেই এসব কার্যক্রম করব। তিনি আরও বলেন, ৯৬ কোনো অসাংবিধানিক আইন না। তাই এটা যারা করেছেন তারা নিজেরাই সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ রায় দিয়েছেন।’
ওই বেঞ্চের অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে সেলিম বলেন, ‘কোথাকার ডক্টর আমরা জানি না। উনি কি মুরগির ডাক্তার নাকি ছাগলের ডাক্তার না ভেড়ার ডাক্তার, না এমনি ডাক্তার। এই ডাক্তার সে প্রেসক্রিপশন একটা দিয়ে দিছে যে সংসদ পারবে না, সুপ্রিম জুডিশিয়াল করবে। আপনি কানে হাত দিয়ে উঠেন বসেন। আপনি ’৭২ এর সংবিধান প্রণেতা এটা বলতে পারেন না।’
ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এরা কত বড় সুবিধাভোগী লোক। এখন একটু মুচড়া পাঠাইয়ে সংবিধান সংসদের সঙ্গে একটা কনফ্লিক্ট লাগায়ে যদি কোনো রেজাল্ট পাওয়া যায়। এই হলো তাদের পরিকল্পনা।’
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু কতটুকু স্বাধীন। সংসদের চেয়েও স্বাধীন? তা হতে পারে না। আপনার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে বলেছেন, এটা সংবিধানবিরোধী। এটা আপনাদের প্রমাণ করতে হবে।
সেলিম বলেন, ‘সংসদের হাতে ক্ষমতা থাকবে। আপনি রায় দিয়েছেন, রায় নিয়ে বসে থাকেন। এই সংসদ যদি ওটাকে কার্যকর না করে তাহলে ওটা কোনো দিন কার্যকর হবে না।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ৮ জন বিচারপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাÐের বিচার করতে বিব্রত বোধ করেছেন। আপনাদের সবার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট করা দরকার ছিল।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সঠিক হয়নি জানিয়ে মঈন উদ্দিন খান বাদল বলেন, প্রেসিডেন্টের ইম্পিচমেন্ট হয় এইখানে, প্রধানমন্ত্রীর ইম্পিচমেন্ট হয় এইখানে (সংসদ) এবং স্পিকারের ইম্পিচমেন্ট হয় এইখানে। আপনি (আদালত) কি আল্লাহ হয়ে গেছেন? কুন ফায়াকুন বললেন, আর হয়ে গেল? গতকাল অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বাদল বলেন, আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ইদানিংকালে এমন কিছু সিদ্ধান্ত আমরা দেখছি যে সিদ্ধান্তগুলো নিতান্তই অনভিপ্রেত। সিদ্ধান্তগুলো দেখার পর আমার দুটো বিষয় মাথায় আসে। প্রথম বিষয় হলো বিচার বিভাগ-সুপ্রিমকোর্টকে স্পষ্টভাবে জবাব দিতে হবে, ৯৬ ধারা যেটা বাতিল করেছেন যা অর্জিনাল (বাহাত্তরের সংবিধান) ৯৬ ধারাকে আমরা প্রতিস্থাপন করেছি, যা আগে ছিল তা বাতিল করা হলো। কোথায় তা বেসিকে আঘাত করেছে তা দেখতে চাই।
তিনি বলেন, আপনারা জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত, জিয়াউর রহমানের আমল ও ক্ষমতাগ্রহণকে অন্যায় অবৈধ ঘোষণা করেছেন। ওগুলো অবৈধ আর তার আমলে করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কি বৈধ হয়ে গেল? বিচারক অন্যায় করলে কীভাবে অপসারিত হবে কমন ওয়েতে ২-৩ পদ্ধতি আছে। সেটা করতে কোন জায়গায় বেসিক স্ট্রাকচার ব্যত্যয় ঘটেছে জবাব চাইব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন