ষ আ‘লীগ ইসলামের পৃষ্টপোশকতা করে যাচ্ছে ষ এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে যাচ্ছেন ষ আগামীকাল সকালে ৪১৮ জনের রওনা হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হজযাত্রা ষ দেশ ও নিজের ও বোন রেহানার জন্য দোয়া প্রার্থনা
স্টাফ রিপোর্টার : গুটিকয়েক ভ্রান্ত ধারণার মানুষের কারণে আজ গোটা মুসলিম উম্মাহ বিপদে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে, এ কারণে শান্তির ধর্ম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। আজ সারা বিশ্বে মুসলমানদের সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। তাদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে। ইসলামে কোথাও আত্মঘাতী হওয়ার কথা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী হজযাত্রীদের কাছে বিভ্রান্তির শিকার মুসলমানদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে যেন সব ধর্মের মানুষ সহাবস্থানে থাকতে পারে সে ব্যাপারে দোয়া করার কথা বলেন। পবিত্র ধর্মকে কেউ যেন কলুষিত করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহŸানও জানান তিনি।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর আশকোনায় হজ ক্যাম্পে এ বছরের হজ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে যাচ্ছেন। আগামীকাল সোমবার সকালে ৪১৮ জনের জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবছরের হজযাত্রা।
ইসলামের নামে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে মানুষ হত্যার দিকটি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের নাম নিয়ে অহেতুক নিরীহ মানুষকে হত্যা করা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা; এই ধরনের কর্মকান্ড যেন না হয়। কারণ, এই ধরনের কর্মকান্ডের ফলে নিরীহ মুসলমানদের নানা জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়, হেনস্তা হতে হয়, এমনকি জীবনও দিতে হয়। কয়েকটা ভ্রান্ত লোকের কারণে আজকে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিপদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দেশে কোনোমতে সন্ত্রাস হতে দেব না। আর আত্মঘাতি হওয়া, এটা ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। তিনি আরও বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ইসলাম ধর্মে নারীদের সবচেয়ে বেশি অধিকার রয়েছে। সুতরাং এই ধর্মকে কলুষিত করার মতো কোনও কাজ করবেন না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক সেটাই আমরা চাই। যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে তাদের যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিচার করার শক্তি দেন এবং তাদের মনমাসকিতাটা যেন পাল্টে দেন। তাদের যেন হেদায়েত করেন, সেটাই আমরা চাই। আমাদের পবিত্র ধর্ম, মানবতার ধর্ম ইসলামের বদনাম যেন কেউ করতে না পারে।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র পুনরায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মে কোথাও বলে না যে কেউ আত্মঘাতি হলেই বেহেশতে চলে যাবে। কিন্তু এই বিভ্রান্তিটা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা চাই না যে আমাদের দেশ কোন বিভ্রান্তির মধ্যে থাকুক।
বাংলাদেশে যেন সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান করে যেতে পারে, সেজন্যও দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ধর্মের নামে বিভ্রান্তির পথে যাচ্ছে আল্লাহ যাতে তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ইসলাম ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। ইসলামের প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের সরকারের সময়ে হজ ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে বহু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে প্রথম হজযাত্রী প্রেরণ করেন। তিনিই প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন, ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন, বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তেলাওয়াতের প্রচলন করেন। একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে জাতির পিতা ইসলামের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
নিজের সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতে মূল ধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে, জীবনে চাকরি ও ভালো কাজের সুযোগ পায়; সেই সুযোগটা আমরা তাদের জন্য সৃষ্টি করে দিয়েছি।
মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক উপজেলা ও জেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করব। যেখানে প্রকৃত ইসলামের ধারণাটা মানুষে পেতে পারে।
হজযাত্রী প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে হজযাত্রী ছিলেন ৪৭ হাজার ৯৮৩ জন। এবছর হজযাত্রী হলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। ইনশাআল্লাহ এবার বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক হজ হজ পালন করবেন।
১৯৮৪ সালে প্রথম ওমরাহ এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বহু বার হজ পালন করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু পিতা-মাতা সবাইকেই হারিয়েছি, তাই তাদের জন্য আমাকে বার বার বদলি হজ করতে হয়েছে। হজ পালনের অভিজ্ঞতা থেকে হজযাত্রীদের নানা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাঁবুগুলোতে ঘুরতাম। যা যা সমস্যা দেখতাম, এসে সৌদি বাদশার কাছে চিঠি লিখতাম। আমি সরকারে ছিলাম না, তারপরও আমি চেষ্টা করতাম।
হাজিদের সুবিধায় হজ উইংয়ের অফিস জেদ্দা হতে মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে স্থানান্তরের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দূর করে হজযাত্রীদের জন্য উন্নতমানের আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আগামীতেও হজ ব্যবস্থাপনায় সফলতার ধারা অব্যাহত থাকবে। অতীতে হাজীদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরতে গিয়ে দূরবর্তী, পুরনো ও পাহাড়ের উপর বাড়ি ভাড়া করার কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরে তাদের নিরাপদে ফেরার আশা প্রকাশ করে হজযাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা পবিত্র মাটিতে যাচ্ছেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে। আপনারা দেশের জন্য দোয়া করবেন।
বিভিন্ন সময়ে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আমার দলের লোকজন এমনভাবে আমাকে ঘিরে রেখেছিলেন যে আমার গায়ে একটা স্পিøন্টার লাগেনি, তাদের গায়ে লেগেছে এবং এই স্পিøন্টারে ১ হাজারের মত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অনেকেই ধীরে ধীরে মারাও গেছেন। মোহাম্মদ হানিফের কথা আপনারা জানেন। তিনি আমাকে সম্পূর্ণভাবে সবসময় ধরে রেখেছিলেন। তখনও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই বাঁচিয়েছেন। হয়তো কোন কাজ তিনি করাতে চান সেজন্যে। কিন্তু আমরা চাইনা যে, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটুক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজযাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বে সম্মানজনকভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে আপনারা সেজন্য দোয়া করবেন। আমাদের এতিম দুই বোন ও আমাদের নাতি-নাতনিদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন সুস্থ থাকতে পারি।
হজযাত্রীদের আবগারি শুল্ক (বিমান ভাড়ায়) এক হাজার টাকা মওকুফ করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটে এক্সাইজ ডিউটি যেটা আগে একহাজার টাকা ছিল, সেটাকে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। যেহেতু এবার হজ প্যাকেজ আগেই ঘোষণা করা হয়েছে, আপনারা হাজিরা আগেই টাকা জমা দিয়েছেন। সেজন্য অতিরিক্ত টাকা যাতে এবার না দিতে হয় সেজন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। অর্থমন্ত্রীকে বলব। তিনি বলেন, মাত্র এক হাজার টাকা দিতে কারও কোনো অসুবিধা নেই। তারপরও এবার যেহেতু সব ব্যবস্থাপনা হয়ে গেছে, এই সুযোগ নিয়ে অনেকে ঝামেলা করতে পারে। যাতে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য এটা যাতে অব্যাহতি দেয়া হয় সেজন্য ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।
২০১০ সালে জাতীয় হজ নীতিকে আরও যুগোপযোগী ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর করে ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি’ প্রণয়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হজ বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল িি.িযধলল.মড়া.নফ এ সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। হজ নিয়ে মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমেও প্রত্যাশিত তথ্য পাচ্ছেন।
হজযাত্রীদের নিবন্ধন ডিজিটাইজ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে হজ প্যাকেজের সম্পূর্ণ টাকা জমা দিয়েও অনেক সময় প্রতারিত হতে হত, প্রাক নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালুর ফলে প্রতারণা বন্ধ হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য মক্কা, মদিনায় সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরে প্রধানমন্ত্রী হজ কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে ঘুরে ঘুরে হজযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিএইচ হারুন, স্থানীয় সাহারা খাতুন এমপি, সৌদি দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আবদুল্লাহ আল মুতাইরি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল জলিল।
###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন