স্টাফ রিপোর্টার : হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী এখন দিল্লির অ্যাপেলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সঙ্গে দুই পুত্র ও এক নাতি ছাড়াও খাদেম ও সফরসঙ্গী রয়েছেন আরো ৩ জন। গত সপ্তাহে দিল্লি তাবলীগী মারকাজের মুরব্বী মাওলানা সা‘দ আল্লামা শফীকে দেখতে হাসপাতালে যান। আল্লামা শফী তখন মাওলানা সা‘দের জন্য এ বলে দোয়া করেন যে, আল্লাহ আপনাকে দীনের খেদমত আরো বেশি করে করার তাওফিক দান করুন। মাওলানা সা‘দ হেফাজত আমিরের খেদমতের জন্য নিজামুদ্দীন মারকাজ থেকে দু’জন খাদেম হাসপাতালে নিয়োগ করে দেন। ঢাকার আসগর আলী হাসপাতাল থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে হাটহাজারি যাওয়ার পর মুহতামিমের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আল্লামা শফীর চিকিৎসার জন্য দিল্লি গমন ও দীর্ঘ দিন সেখানে অবস্থান, হেফাজতের অন্যান্য নেতাদেরও ঘনঘন দিল্লি যাতায়াত ও বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে বৈঠক নিয়ে দেশের সাধারণ আলেমসমাজ, ঈমানী আন্দোলনের নেতাকর্মী ও তওহীদী জনতা উদ্বিগ্ন। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বপ্রিয় জাতি যখন চরম উৎকণ্ঠিত তখন নিজের দাবি অনুযায়ী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দিল্লি থেকে আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার বার্তা দিয়ে পাঠানোর পরপরই আল্লামা শফীর সদলবলে ভারতযাত্রায় জাতি চিন্তিত না হয়ে পারে না। উল্লেখ্য যে, মুফতী আমিনীর পুত্র আবুল হাসানাত আমিনী ও অপর এক হেফাজতনেতা একই সময় দিল্লি গিয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক করে এসেছেন। এ সব ভাল আলামত নয় বিধায় দেশপ্রেমিক ইসলামপ্রিয় জনতা খুবই চিন্তিত। গতকাল এক বিবৃতিতে স্বাধীন বাংলা ওলামা পরিষদ ঢাকা জেলা শাখার আহŸায়ক মাওলানা ওমর ফারুক এসব কথা বলেন।
মাওলনা ওমর ফারুক আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ভক্ত ও মুরিদরা আল্লামা শফীকে সউদী আরব, মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়ার অফার দিলেও তিনি তা গ্রহণ না করে অবশেষে কোন্ যুক্তিতে দিল্লি গেলেন তা সারাদেশের আলেম-ওলামা ও তওহীদী জনতার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ ও অধিকার নিয়ে সংগ্রামরত অরাজনৈতিক বৃহত্তম সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির হিসেবে আমরা দিল্লিতে তার চিকিৎসা স্বাভাবিক বলে মনে করি না। গত কিছুদিন আগে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদীগোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কলকাতায় মিছিল বের করে বলে মিডিয়ায় এসেছে। তাছাড়া অতি বার্ধক্য ও দীর্ঘ রোগভোগের কারণে আল্লামা শফী এখন স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এ সুযোগে ষড়যন্ত্রকারী মহল দিল্লিতে বসে হেফাজতে ইসলাম, হাটহাজারি মাদরাসা ও বেফাকুল মাদারিসের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো চক্রান্ত করছে কিনা তা-ও স্পষ্ট নয়। কেননা, ৫ মে ২০১৩ শাপলা ট্রাজ্যেডির পর থেকে বিগত ৫টি বছর আল্লামা শফী ও হেফাজতের একশ্রেণির নেতার পেছনে দেশী-বিদেশী চক্র সবসময়ই লেগে থেকেছে। হেফাজতের প্রতিটি কাজে তারা নাক গলিয়েছে। এমনকি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের কাউকেই কোন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দেয়নি। একটি বিবৃতি পর্যন্ত স্বাধীনভাবে দিতে পারেনি হেফাজত নেতারা। সংগঠনের মান রক্ষার্থে কর্মচারীরা মাঝে মধ্যে কিছু বিবৃতি দিয়েছেন। যা ছিল বিষয় ভাষা ও উপস্থাপনের দিক দিয়ে আওয়ামী ওলামা লীগের চেয়েও দুর্বল। ঈমান ও ইসলামের সাথে আপস করে নিয়ন্ত্রিত কিছু কর্মসূচি ও সফর কোন কোন নেতা করার সুযোগ পেয়েছেন। ব্রাহ্মণ্যবাদের সেবাদাস একটি চক্র ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে আল্লামা শফীসহ হেফাজত নেতাদের ঈমানী আন্দোলন থেকে নিবৃত করার প্রয়াস পেয়েছে। গত ৫ বছরে ভারতীয় এক নেতা হেফাজত নেতৃত্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য অন্তত ৫০ বার বাংলাদেশ সফর করেছেন। বর্তমানে চিকিৎসার নামে আল্লামা শফীকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে তার দুর্বলতা ও অসহায়ত্বের সুযোগে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের তওহীদী জনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার হীন কোনো দুরভিসন্ধি থাকাও অসম্ভব নয়।
স্বাধীন বাংলা ওলামা পরিষদ এসব ব্যাপারে সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা ও জনগণকে সতর্ক থাকার আহŸান জানাচ্ছে। বিশেষ করে, ঈমানী আন্দোলন হেফাজতে ইসলামের লাখো নেতাকর্মী ও সচেতন আলেমসমাজকে এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন