শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ওয়াশিংটন টাইমসে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নিবন্ধ

প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাসস : যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা দৈনিক ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যায় জড়িতদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি চিন্তা-উদ্দীপক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার প্রকাশিত নিবন্ধটি হাজার পাঠক পড়েছেন।
এতে জয় লিখেছেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কয়েকবার দেশের বাইরের লোকদের সমালোচনার বিষয় হয়েছে। অন্যদিকে এই অপরাধ ট্রাইব্যুনালগুলোর প্রতি দেশে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তিনি আরো লিখেছেন, ট্রাইব্যুনালের রায়গুলো ঘোষণার পর প্রায়ই জাতীয় ছুটির মতো বিবেচিত হয়েছে। লোকজন ট্রাইব্যুনালের বিচারের সমর্থনে দেশপ্রেমের গান গেয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে এবং শিশুদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছে। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধী ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর মৃত্যুদ- ঘোষণা করার পর চলতি মাসেও বাংলাদেশীরা বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে ব্যাপক সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। এই দুই যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভের সংগ্রাম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে অপহরণ, নির্যাতন ও ১৫ জন লোককে হত্যা এবং প্রায় ৪৫০টি ঘরবাড়ি লুট করেছিল।
জয় বলেছেন, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধাপরাধী মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- ঘোষণা করে রায় দেয়ার পর হাজার হাজার লোক ঢাকা মহানগরী এবং অন্যান্য নগরীতে দুই দিন ধরে রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করেছে। গত নভেম্বর মাসে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করার পর অনুরূপভাবে জনগণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে। তিনি লিখেছেন, জনগণের দেয়া সমর্থনের লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাজ সম্পূর্ণ করার এবং অন্য অপরাধীদের সাজা দেয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করা, যারা ১৯৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে এবং পাকিস্তানের গণহত্যায় সহযোগিতা দিয়েছে, যার ফলে ৩০ লাখ বাংলাদেশী শহীদ হয়েছিল।
গতবছর সারাদেশে ঢাকা ট্রিবিউন পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৭৯ শতাংশ জবাবদানকারী বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে চেয়েছেন। জরিপে আরো বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের বিরোধিতাকারীদের শক্ত অবস্থান খুলনা বিভাগেও ৬৪ শতাংশ জবাবদানকারী বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। নিঃসন্দেহে, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপকভাবে বিজয়ী (নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি সমর্থন পেয়ে) হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল ট্রাইব্যুনাল পুনরায় চালু করার অঙ্গীকার। তাহলে, বাংলাদেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে অবস্থানকারীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে ভিন্নমতের কারণ কি?
জয় লিখেছেন, কারণ দেশের বাইরে যারা অবস্থান করেছেন তারা কখনই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার পরিস্থিতিতে বসবাসের বিষয়টি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেন না। নির্যাতিত বা নিহত ব্যক্তির পুত্র বা কন্যা হওয়া এবং কয়েক দশক ধরে অপরাধীদেরকে বিচার এড়িয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখার অনুভূতি কী তারা তা বুঝতে পারেন না।
তিনি লিখেছেন, ন্যায় বিচারের জন্য বাংলাদেশীদের গভীর তৃষ্ণা রয়েছে। যুদ্ধের অস্ত্র হচ্ছে ধর্ষণ আর নির্যাতন। যখন পাকিস্তানের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা যুদ্ধে পরাজিত হতে যাচ্ছে, তখন পাকিস্তান চিকিৎসক, শিল্পী, শিক্ষক ও লেখকসহ যত বেশি সম্ভব বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে শুরু করে।
কিন্তু এই নিকৃষ্ট নৃশংসতায় যারা লিপ্ত ছিল তারা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বিচার এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কয়েকটি ক্যু, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল সবচেয়ে নিষ্ঠুর যুদ্ধাপরাধীদেরকে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বস্থানীয় পদে যাওয়ার পথ করে দিয়েছিল।
জয় লিখেছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরপরই শেখ হাসিনা এই ধারার অবসান ঘটান। তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেন, যা মূলত তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান গঠন করেছিলেন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তার রাজনৈতিক শত্রুরা বাতিল করেছিল। শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মানদ- রোম স্ট্যাটিউট অনুসরণে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। ফলে, এই বিচার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হয়েছে। সে কারণেই, সুপ্রিম কোর্ট ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদ-ের রায় পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের আইসিটি হচ্ছে বিশ্বে একমাত্র যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যা তাদের দেয়া রায়ের বিষয়ে উচ্চ আদালতে যেমন, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ দিয়েছে।
জয় লিখেছেন, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত। বাংলাদেশীরা তা জানেন। দেশের বাইরের অনেকে আইসিটির সমালোচনা করে বলেছে যে, এই ট্রাইব্যুনালের মামলার অনেক আসামি বিরোধী দলের বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী দলের সদস্য। উল্লেখ্য, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সাবেক সদস্যসহ অন্যান্য দলের সদস্যদেরও এই ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়েছে। তিনি আরো লিখেছেন, যুদ্ধাপরাধের তদন্তে যদি দেখা যায় যে, জামায়াত সদস্যরা অপরাধ করেছে, সেক্ষেত্রে তারা একটি বিরোধী দলের সদস্য হওয়ার কারণে কি বিচার থেকে রেহাই পেয়ে যাবে? তাই বলে কি ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ও গণহত্যার শিকার এবং দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যদের জন্য কোনো ন্যায়বিচার থাকবে না?
অন্যদিকে, জামায়াতের কিছু নেতার বিচার হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের দাবির বিরোধিতা করেছিল এবং এই প্রয়াস রোধ করতে পাকিস্তানি জান্তাকে সহযোগিতা করেছিল।
জয় উপসংহারে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ যে কোনো ফাঁকা বুলি সহজেই বুঝতে পারে। এই যুদ্ধাপরাধীরা কী করেছিল, তা তারা নিজ চক্ষে দেখেছেন। ট্রাইব্যুনাল কতটুকু স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে পরিচালিত সেটিও তারা ঘনিষ্ঠভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। তারা ন্যায়বিচারের জন্য এই সংগ্রামে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, তাই, এসব বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে এবং সে কারণেই তা চলবে এবং অব্যাহত থাকা উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন