স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংবিধান সমুন্নত সংগ্রামী আইনজীবী পরিষদ। শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এই দেশে দ্বীন ইসলামকে দেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, বিচারপতিদের দায়িত্ব রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করা নয়। বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এদেশের মুসলমানরা স্বভাবগতভাবেই ধর্মপ্রাণ ও ধর্মভীরু। যে দেশে ১০ লাখ মসজিদ রয়েছে। যেদেশে প্রতি জুম্মার জামায়াতে কোটি কোটি লোকের সমাগম হয়। সেদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্ম হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম হবে ‘ইসলাম’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ বর্তমানে বিশ্বের ৬০টিরও অধিক দেশে সংখাগরিষ্ঠদের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। গতকাল বৃহম্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অপরিবর্তিত রাখার অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম এবং প্রধান আলোচক ছিলেন মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসানের সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলম। এছাড়া সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু ল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডক্টর এম এম আনোয়ার হোসেন, ইসলামী বুদ্ধিজীবী ফ্রন্টের আহ্বায়ক শাহ সুফী সৈ. আব্দুল হান্নান আল হাদী, স্পেশালিস্ট Ñ ব্যুরো ভ্যারিটাস (বাংলাদেশ) ফার্মাসিস্ট আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান, অ্যাডভোকেট হাসান শহীদ কামরুজ্জামান দুর্বার, অ্যাডভোকেট মুহম্মদ ইউনুছ আলী আকন্দ, অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল ইসলাম কাজল, মুফতি মাসুম বিল্লাহ, হাফিয মাওলানা আবদুস সাত্তার, অ্যাডভোকেট মেসবাহ উদ্দিন সুমন, সাংবাদিক মুহম্মদ আরিফুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, সংবিধান জনগনের জন্য, জনগণ সংবিধানের জন্য নয়। শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি মুসলমান দেশের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের দায়িত্ব রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাতিল করা নয়। বরং সংবিধানের কি আছে তা দেখা। তিনি আরো বলেন, বিচারপতিরা অনেক বিজ্ঞব্যক্তি, আশা করি উনারা ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মকে রেখে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিবেন। তিনি আরো বলেন, আমি যতটুকু জানি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে বাতিলে পক্ষে নয়। তিনি নিজেও ঈবাদত বন্দেগী করেন। ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম যদিও সারা বিশ্বে আজ ইসলামকে অবমূল্যায়ণ করা হচ্ছে। সারা বিশ্বের ইসলাম নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার অনুরোধ হচ্ছে এ বিষয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, অন্যন্যা মন্ত্রীদের সর্তক থাকতে হবে। এ দেশের মানুষ এসব ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করবে না। মুহম্মদ মাহবুব আলম বলেন, ধর্ম হলো ব্যক্তির, এছাড়া রাষ্ট্রে একাধিক ধর্মাবলম্বীরা রয়েছে ফলে কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। যদি তাই হয়, তাহলে একইভাবে রাষ্ট্রেরও কোন ভাষা থাকতে পারে না। কারন রাষ্ট্র কখনো কথা বলে না। কথা বলে ব্যক্তি। তাই রাষ্ট্র ভাষা বাংলা কি বাদ দেয়া হবে? যদি না দেয়া হয় তাহলে রাস্ট্রধর্ম হিসেবেও ‘ইসলাম’ বাদ দেয়া যেতে পারে না। মুসলিম বিশ্বে ২৭টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম হলো ইসলাম। তাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ হওয়াও স্বাভাবিক এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ বহাল থাকাও স্বাভাবিক। প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডক্টর এম, এম আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধানে [৭-এর (১)] বলা আছে, দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সুতরাং ইসলাম ধর্ম বাতিল করার বিষয়ে বলাই হলো রাষ্ট্রদ্রোহিতা। তিনি আরো বলেন, পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। যে সংখ্যালঘুদের নেতা ও প্রতিনিধি, তার নেতৃত্বেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে এবং পাস হয়েছে। সেই পঞ্চদশ সংশোধনীতেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রয়েছে। সংখ্যালঘুদের নেতা ও প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ স্বীকার করে নেয়ার পর এটা নিয়ে সংখ্যালঘুদের আর বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। শাহ সুফী সৈ. আব্দুল হান্নান আল হাদী বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের সময় মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যেখানে দুইজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর রাষ্ট্রধর্মের বিরোধিতাও মেনে নেননি এবং যেটা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে একটি মীমাংসিত বিষয়, সেখানে নতুন করে রাষ্ট্রধর্ম ইস্যু তোলা কি করে গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যান্য বক্তারা অর্পিত সম্পত্তির ‘ক’ তফসিলও সংখ্যালঘুরা এককভাবে পেতে পারে না। এটাও বিবেচেনায় নিতে হবে। কারণ যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া নাগরিকরা সম্পত্তির দাবিদার হতে পারে না। আলোচনার পর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন