স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এ সরকারের আমলে অর্থ, সম্পদ, সম্ভ্রমসহ জীবনের নিরাপত্তা নেই। দেশের চলমান বাস্তবতার পরিবর্তন দরকার। গতকাল এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
পুরানা পল্টনে ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনাতনে ২০ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির মহানগর শাখার উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রত্যাহারের দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার না থাকলেই শুধু জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। খুন-রাহাজানি-সন্ত্রাস-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আমার দেশে ব্যাংকে টাকা রাখলে সেই টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। আমার শেয়ার বাজার লুট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিদেশে টাকা রাখলে সেটা পর্যন্ত থাকছে না। এটা উদ্বেগজনক। শুধু তাই নয়, আজকে আমার মা-বোনরা নিরাপদ নয়, সন্তানরা নিরাপদ নয়। আমার দেশের সম্পদ নিরাপদ নয়।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে বাংলাদেশের সঞ্চিত ১০ কোটি ডলার চীনা হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয় বলে সম্প্রতি ফিলিপিন্সের একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ব্যাংক চ্যানেলে ফিলিপিন্সে ওই অর্থ নিয়ে সেখান থেকে ক্যাসিনোসহ একাধিক হাত ঘুরে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশের এই অর্থ। দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে যদি রাষ্ট্র মানুষ খুন করে, সাধারণ মানুষকে বা অন্য যারা খুনি তাদের দমন করবে কে? সেজন্যেই জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার দরকার তাদের কল্যাণের জন্য, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য, কৃষিজীবী মানুষকে তার পণ্যের মূল্য দেয়ার জন্য, শ্রমজীবী মানুষকে তার মেহনতের যথাযথ মূল্য দেয়ার জন্য। নারীর সম্ভাবনাময় জীবন ও শিশুদের বিকশিত হওয়ার জন্য। ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক সরকার দরকার। আজকে এ ধরনের সরকার শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে হতে পারে। আর সেজন্য আমরা দাবি করি সকলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। সেই নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হবেন তারাই জনগণের প্রতিনিধি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারের বন্দি ছিলেন, তিনি মূল সংগঠক ছিলেন কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি দেশে ফেরার আগেই লন্ডনে সাংবাদিকদের বললেন, তিন মিলিয়ন (৩০ লাখ) মানুষ মারা গেছেন। তখন পর্যন্ত কেউ কোনো তদন্ত করেনি, গবেষণা করেনি। তিনি একটা সংখ্যা বলে দিলেন, একটা আনুমানিক সংখ্যা। কিন্তু ওই মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, অ্যারাউন্ড ১০ লাখ, কেউ বলেছেন ২০ লাখ। কেউ বলেছেন ৫ লাখ। একেক জন একেক কথা বলেছেন।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ইনশাল্লাহ আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। এরকম একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তিনি বিষয়টা উত্থাপন করেছেন। যে দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, সেই সম্মানিত মানুষরা Ñ ইত্যাদি, অসংখ্য এবং এরকম আনুমানিক সংখ্যার মধ্যে তারা আবদ্ধ থাকতে পারেন না। আমাদের শহীদদের ব্যাপারে আমরা একটা আনুমানিক সংখ্যার ওপর নির্ভর করব? শহীদদের কি এটা প্রাপ্য না, তাদের নামগুলো ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হোক, দেশের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে তাদের নাম লেখা হোক Ñ এটা কি প্রাপ্য না তাদের। এই বিষয়টি বেগম খালেদা জিয়া উত্থাপন করেছেন যাতে করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এটা কি রাষ্ট্রদ্রোহিতা? রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কি আছে? উনি তো একথাও বলেননি ৩০ লাখ সঠিক নয়।
মহানগর সভাপতি শামস উদ্দিন পারভেজের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, সহ-সভাপতি ফারুক রহমান, আমিনুল ইসলাম রাজু, কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান চৌধুরী মুকুল, মাহমুদ খান জাতীয়তাবাদী উলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুুল মালেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন