ফয়সাল আমীন : সিলেটে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে বেপরোয়া হয়েছে উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে তারা নিজেদের মধ্যে একের পর এক সংঘাত-সংঘর্ঘে জড়াচ্ছে। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। কারণ প্রতিনিয়ত সিলেটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। বিশেষ করে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ, সিলেট সরকারী কলেজ, মদন মোহন কলেজ ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এমন কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, সিলেট ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার ও ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে গত কয়েক মাসে সিলেটে ছাত্রলীগের দুইকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। রক্তাক্ত জখম হয়েছে অর্ধশত। অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তাদের হাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে শিক্ষকদেরও। সর্বশেষ গত সোমবার সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে তা-ব চালায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৯৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের এমন তা-বে ক্যাম্পাস জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগের দিন রায়হান গ্রুপের কর্মী বিকাশ সাহাকে মারধর করে নিপুর ক্যাডাররা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বালুচরে এমসি কলেজের জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত হিরণ মাহমুদ নিপুর ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে রায়হান গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। সম্প্রতি নগরীর উপশহরে ছাত্রলীগ ক্যাডার জাকারিয়া চৌধুরী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় না করতে পারায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরও করেছেন। এছাড়াও ওই এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উত্তোলিত টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েছিল। শুধু তাই নয়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রেশন ও টিউশন ফি ছাড়া পরীক্ষা এবং হলে নকলের সুযোগ না দেয়ায় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে অবস্থান নিয়ে তারা পরীক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেয়। ছাত্রলীগের বাধার কারণে নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা পর পরীক্ষা নিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এর আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মারধর, হত্যা ও গুমের হুমকির অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পিটিয়ে কাজী হাবিবুর রহমান নামের এক কর্মীকে খুন করে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মদন মোহন কলেজে গত কয়েক মাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা একাধিকবার সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে আবদুল আলী নামের এককর্মী খুন হন। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সয়েফ আহমদ ও সত্যজিৎ দাসসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এছাড়াও সিলেট সরকারী কলেজে আধিপত্য বিস্তার সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিরণ মাহমুদ গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। এদিকে, সর্বশেষ সিলেট এমসি কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সোমবার দুপুরে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট ঘুরে গেছেন। তারা তদন্ত কাজ শেষ করে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে সিলেট ত্যাগ করেন। ছাত্রলীগ নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি মো. মশিউর রহমান শরীফের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে পৌঁছে দুপুর ১২টায় এমসি কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দের সাথে সাক্ষাৎ করে সংঘর্ষের ব্যাপারে কথা বলেন। পরে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কলেজের উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথেও কথা বলেন। এরপর তারা বেলা ১টায় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কলেজ থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরাণ থানায় গিয়ে সংঘর্ষের ব্যাপারে কথা বলেন। এছাড়াও সন্ধ্যায় সংঘর্ষে জড়িত থাকা দু’পক্ষের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। গতকাল (শুক্রবার) তারা কেন্দ্রের হাতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন বলেও জানা গেছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন