সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হজ্ব: বিশ^ মানবতার মহা সম্মেলন

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মাওলানা মুফতী মোঃ ওমর ফারুক

\ শেষ কিস্তি \
সে কোন মহা মানব! যার দো’য়ার বরকতে ধূধূ মরুভূমি,ফলের নগরীতে রুপ নিল,শান্তি নিরাপত্তা শৃঙ্খলার মডেল নগরী হিসাবে পরিগণিত হল! আপনী কি জানেন তিনি কে? তাঁর নীতি আদর্শ কি ছিল? কি ছিল তার দৈনিক কর্মপন্থা? যিনি মুসলিম জাতির নামকরণ করলেন, যিনি মুসলিম জাতির পিতা, যার স্মৃতি বিজরীত মক্কা, মাকামে ইব্রাহীম,যে দু’জন পিতা পুত্র নিজ হাতে কা’বা নির্মাণ করলেন, যুগ যুগ ধরে যার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ^ মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর, কুরবানী করছে! ঐ মহা স্থানের মহা সম্মেলনে যোগ দিতে মুসলিম উম্মাহ জান প্রাণ উজার করে দিবে কমপক্ষে জীবনে একটি বারের জন্য হলেও ছুটে যাবে! এটাই তো স্বাভাবিক।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সকল রাষ্ট্রই ভয় আতংকে এবং কি জানি কি এক অজানা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে এসব কিছু হতে পরিত্রাণ পেতে হলে ,রাস্তা-ঘাট অফিস আদালত রাজ প্রাসাদ সর্বত্র নিরাপত্তা লাভ করতে চাইলে এই ঘরের মালিকের উপাসনা ইবাদত বন্দেগী করতে হবে এর কোন বিকল্প নাই। এরশাদ হচ্ছে “তারা যেন এই ঘরের মালিকের-ই ইবাদত করে যিনি খোদায় অন্ন যোগান এবং ভয়-ভীতি হতে নিরাপত্তা দান করেন”। সুরা কুরাইশ আয়াত(৩-৪)
এই ঘরকে সামনে রেখে যে ব্যাক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের কর্মসূচি প্রণয়ণ করবে, তারা সর্বত্র শান্তি সমৃদ্ধি লাভ করবে, পাবে সকল নিরাপত্তা,দূর হবে সকল প্রকার ভয় ভীতি। দুনিয়ায় আগত সকল নবী রাসুল যে সকল বিষয়াবলীর সাথে সরাসরি জড়িত তাঁহারা যে স্থানে যে তারিখে যে কাজটি করেছেন আপনী সেই স্থানে সেই কাজটি করবেন। ইহা আসলেই কত মহা সৌভাগ্যের বিষয় তা কি একবার ও গভীর ভাবে চিন্তা করেছেন? যদি বিষয়টি কে ঐভাবে বিবেচনায় না নিয়ে থাকেন, তাহলে আজ থেকে এখন থেকে একটু ভেবে দেখুন! আপনার মন কে জিজ্ঞাসা করুণ,দু’চোখ বন্ধ করে সামান্য সময় ফিকির করুণ,দেখবেন জবাব পেয়ে যাবেন।দুনিয়ায় এর চেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান,মান,সম্মান চাওয়া পাওয়ার আর কোন কিছু আছে কি? না না পৃথিবীতে এর চেয়ে উত্তম স্থান আর নেই,এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ জায়গা আর নেই। থাকবেই কি করে যিনি বিশ^জাহানের মালিক তাঁর ঘর কে কেন্দ্র করে তিনি-ই এসব আয়োজন করেছেন।
বিশ^ মানবতার মহান শিক্ষক স্যাইয়েদুল মুরসালিন যিনি মহান মা’বুদের সকল বিধি বিধান অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তাঁর নৈকট্য লাভ করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। যার জীবনের সকল কিছু এ শহরে।যিনি মদিনা মুনাওয়ারায় শূয়ে থেকে তাঁর রওজায় আমাদের কে সালাম দেওয়ার সুযোগ করে দিলেন। যার নিজ হাতে তৈরী মসজিদে নববী,যেখানে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে দুনিয়ার অন্য যে কোন মসজিতে পঞ্চাশ রাকাত নামাজ আদায়ের ছওয়াব পাওয়া যায়।
আপনি সেখানে যেতে গরিমশি করবেন, সেই মহস্থানের মহা সম্মেলনে! যাকে মহা গ্রন্থ আল কুরআনের সুরা আত্ তীনের ৩নং আয়াতে বালাদিল আমিন (নিরাপদ শহর) বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যে এলাকায় বিশ^ মানবতার মহান শিক্ষকের জন্ম কর্ম, যেখানে তাঁর বেড়ে ওঠা, যে পাহাড়ের গুহায় বিশ^ মহিয়সী নারীকূলের শিরমনি হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা: এর পথচলা, যে জমীনের বুকে এতীম নবী মুহাম্মাদুর রাসুল সা: কে হালিমাতুস সাদিয়া রা: দুধ পান করিয়েছেন, যেখানে রয়েছে জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম ব্যক্তি মহা পুরুষ হযরত আবু বকর রা: যার পাশে ঘুমিয়ে আছেন বিশ^ সেরা ন্যায় বিচারের জলন্ত প্রতীক হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা:। যার চলার পথে মরদুদ শয়তান পথ চলতে সাহস করত না।যে মহা মানব কে উদ্দেশ্য করে রাসুল সা: ঘোষণা করেছেন “মোর পরে যদি হত কোন পয়গাম্বর তাহলে হত সে এক ওমর । যে হেরা গুহায় দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব সাইয়্যেদুল মুরসালিন ধ্যানমগ্ন থেকে সকল আসমানী কিতাবের শ্রেষ্ঠ কিতাব মহা গ্রন্থ আল কুরআনের প্রথম ওহী পেয়ে মানবতা মনুষত্বকে জাহিলিয়াতের ঘুর অন্ধকার হতে উদ্ধার করে জান্নাতের মেহমান বানিয়েছেন ।
যে এলাকায় আশারায়ে মোবাশ্শারা, অগণিত সাহাবায়ে আজমায়ীন ঘুমিয়ে আছেন যার অদূরে রওজাতুম মিন রিয়াজীল জান্নাহ অবস্থিত। সেই পাক পবিত্র,দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম স্থানের মহা সম্মেলনে সুযোগ থাকার পর ও যোগ না দেয়া, না যাওয়া নানা রকম গড়িমশি করা এবছর নয় পরের বছর, মেয়ের বিয়ে শেষ করে, ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর পরে, আগামী বছর ভাল ব্যবসা করতে পারলে, চাকুরী হতে রিট্রায়ার্ড করলে, বাড়ী বানানোর কাজ শেষ হলে ইত্যাদি অজুহাতে কিছু বয়:বৃদ্ধ অতি বয়স্ক নারী পুরুষ বাংলাদেশ থেকে হজে¦ যান যাদের অধিকাংশই হজে¦র আরকান আহকাম গুলো যথাযথ ভাবে পালন করতে পারেন না। বরং অনেকের ক্ষেত্রে বায়তুল্লাতে নিয়মিত নামাজ আদায় করাই সম্ভব হয় না। শারীরিক দূর্বলতার কারণে বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্ট বাসা বাড়ীতে অথবা ঘরে বসে নামাজ আদায় করেন। এমনটা হওয়া উচিৎ নয় যেহেতু হজে¦র অনেক কাজ শারীরিক শক্তি সামথ্যের ওপর নির্ভর করে তাই যুবক বয়সে-ই যাওয়া উচিৎ।
লেখক : কলামিষ্ট, কবি,সাহিত্যিক।
পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রের মুসলমান তাই করেন। ভিন্ন ধর্মাম্বলী অনেকে হয়ত আফসোস করেন !আহ! যদি আমাদের সুযোগ থাকত? হ ্যাঁ তাদেরও এই ঘরের সম্মানিত মেহমান হওয়ার সুযোগ রয়েছে!! যদি তারা ঈমান নামের ভিসা গ্রহন করেন এবং ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেন। অবশ্য ঈমানের দাবীদার অনেক মুসলমান ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ¦ ও যাকাত কে যথাযথ পালন না করেও নিজকে খাঁটি মুসলিম হিসাবে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করেন এবং মাঝে মধ্যে ইসলামের বিধি বিধান কে কট্রাক করে কথা বলেন যা কোন ক্রমেই কাম্য নয়। মহান মা’বুদ আমাদের কে দ্বীনের সঠিক সমজ দান করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন