সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

অমুসলিমদের কাছেও কেন ইসলামই সেরা

| প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হামেদ বিন ফরিদ আহমদ : চারটি মৌলিক ও অখন্ডনীয় বৈশিষ্ট্যগুণে অমুসলিমদের কাছেও বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ও প্রসারিত সকল ধর্মের মাঝে ইসলামই শ্রেষ্ঠ এবং সেরা ধর্ম। ইসলামের এই বৈশিষ্ট্যগুলি সর্বজন স্বীকৃত। কোন বিদ্বেষী গবেষক, প্রাচ্যবিদ লেখকও এসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে দ্বিমত পোষণ করতে সাহস পায়না। সংক্ষিপ্তকারে এ চার বৈশিষ্ট্য নিচে পেশ করা হলো :
এক. ইসলাম ছাড়া অন্য কোন আসমানি ধর্মানুসারীদের কাছে তাদের ধর্মগুরু সম্বন্ধে নির্ভরযোগ্য,ঐতিহাসিক বিবেক-গ্রহণীয় দলিল - দস্তাবেজ সমর্থিত স্বচ্ছ আক্বীদা-বিশ্বাস নেই। নব উদ্ভূত ধর্মসমূহের মাঝেও তাদের ধর্মগুরু সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য, নির্ভরশীল কোন তথ্য বিদ্যমান নেই। মূসা আঃ এর অস্তিত্ব আদৌ ছিল কি ছিল না? এ ব্যাপারে কিঞ্চিত দলিল-প্রমাণ পাওয়া যায় কেবল বাইবেল ওল্ড টেস্টামেন্টে। কিন্তু ঐতিহাসিক বিবেচনায় ওল্ড টেস্টামেন্ট বিজ্ঞজনদের কাছে নির্ভরযোগ্যতা রাখে না। ঈসা আঃ এর অস্তিত্ব ছিল কিনা? এ ব্যাপারে বাইবেল নিউ টেস্টামেন্টের পূর্বে কোন গ্রহণীয় তথ্য পাওয়া যায় না। আর নিউ টেস্টামেন্টে ঈসা আঃ এর পরিচয় এসেছে একজন বিশ্বাসী, আধ্যাত্মিক পুরুষ হিসেবে, কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তি হিসেবে নয়। আবার এই বাইবেল ঈসা আঃ এর ভাষায়ও রচিত নয়। গবেষকগণ এখনোবধি বাইবেল নিউ টেস্টামেন্ট এর রচয়িতা কারা এ নিয়ে একমত হতে পারেন নি। এবং ঈসা আঃ এর সাথে নিউ টেস্টামেন্টের কি সম্পর্ক তাও নিরূপণ করা যায়নি। কারণ, নিউ টেস্টামেন্ট ঈসা আঃ এর আনীত সেই আসল বাইবেল নয়।
ক) এদিক থেকে ইসলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন।এর ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল কারীমের বর্তমান প্রচলিত নুসখা (কপি) এবং রাসূলের ওফাতের পর পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ হিজরীতে যে নুসখা তৈরি করা হয়েছিল, তার মাঝে একটি অক্ষর, বর্ণ, শব্দ ও বাক্য এবং ছন্দের কোন অমিল নেই। কারণ, এই কুর›আন কুদরতি নিয়মে হাজারো বছর ধরে অত্যন্ত বিস্ময়কর প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লিখে রাখার পাশাপাশি হাজারো বছর ধরে হৃদয় থেকে হৃদয়ে একে ধারণ করা হয়েছে। এই গ্রন্থ কেবল শক্তিশালী ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণ-ই নয়, বরং ইসলামের নবী মুহাম্মদ সঃ এর জীবনাচরণ, আখলাক- চরিত্রের খুঁটিনাটি বিষয়ের জলজ্যান্ত এবং প্রোজ্জ্বল প্রমাণ।
খ) চৌদ্দশোর্ধ্ব নিপুণ ও নিখুঁত বর্ণনাকারীগণ ( নারী-পুরুষ) কুর›আন, হাদীসের যে সকল বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন, তাঁরাই এ বিষয়ের চাক্ষুষ সাক্ষ্যপ্রমাণ ছিলেন যে, এসব বর্ণনা এত সূ², সুগভীর এবং চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে; মুসলিমরা এর আগেও এমন নিপুণ ও সূ² বাছবিছারের সম্মুখীন হয়নি। এবং পরেও এমন বিচার-বিশ্লেষণের মুখোমুখি হবে না। বর্ণনাসূত্রে পারদর্শী ব্যক্তিরাই এ ব্যাপারে সুন্দর ও যথাযথ বয়ান পেশ করতে সক্ষম হবেন। কেমন সতর্কতা, সূ²তা ও কড়া নিয়ময়ের মাধ্যমে ইসলামের উৎসমূল কুরআন- হাদীস সংরক্ষিত, সংগৃহীত হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত শত শত গ্রন্থে গ্রন্থিত, সংকলিত রয়েছে। একজন আধুনিক পাঠক চাইলেই খুব সহজে এসব তথ্য- উপাত্ত ফলাফলসহকারে যাচাই- বাছাই করে নিতে পারে। উৎসমূল কুর›আন-হাদীসের সুস্পষ্ট বর্ণনায় রাসূল সাঃ এর সার্বজনীন জীবনের অনন্য সাধারণ বাণী, তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্ম, আখলাক-চরিত্র এবং তাঁর অপূর্ব গুণাবলী এমনকি তাঁর আবেগ, অনুভূতি, ব্যক্তিগত রুচি-অভিরুচি এতই সবিস্তারে উঠে এসেছে, যা একজন সমসাময়িক পাঠকের কাছে রাসূলকে তার প্রতিবেশীর চাইতেও অধিক পরিচিত করে তুলে। রাসূলের পারিবারিক জীবনের ঘর থেকে নিয়ে শোয়ার বিছানারও এত নিখুঁত বিবরণ এসেছে, যা একজন রুচিশীল পাঠকের কাছে রাসূলকে তার মা-বাবার চেয়েও বেশি আপন করে তুলতে পারে।
দুই. আসমানি কিংবা মানবসৃষ্ট কোন ধর্মেরই ধর্মীয়গ্রন্থ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও হ্রাসবৃদ্ধি ব্যতীত হুবহু সেই অস্তিত্ব এবং অবকাঠামোর উপর টিকে নেই। যা নিয়ে সে ধর্মের প্রবর্তক আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। বরং কালের আবর্তে সকল ধর্মগ্রন্থই মানব রচিত গ্রন্থে রূপ নিয়েছে। এগুলোতে বর্ণিত বিষয়াদির বিশুদ্ধতা নিয়েও ভীষণ কুতর্কের উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরাআনুল কারীমের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অন্যরূপ। লিখিত - পঠিত উভয় ধারায় এই কুর›আন এমন পৌনঃপুনিকতার সাথে সংরক্ষিত হয়েছে, যা যে কোন নিরপেক্ষ সত্যানুসন্ধানী গবেষককেও স্বীকার করতে বাধ্য করবে যে, কুর›আনের বর্তমান প্রচলিত কপিটি হুবহু সেই কপি যা রাসূল সাঃ এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। এর মাঝে একটি নোখতারও পরিবর্তন সাধিত হয়নি। ইদানীংকালে কুরআন গবেষণাকারী অনেক অমুসলিমও একবাক্যে এই স্বীকারুক্তি দিচ্ছেন যে, কুরআনের আয়াতগুলি যে ছন্দে এবং যে বর্ণে নবী আঃ এর উপর নাজিল হয়েছিল আজো তা শতকরা একশত ভাগ অক্ষুন্ন রয়েছে। প্রাচ্যবিদ গবেষক জন বার্টন ( ঔযড়হ ইঁৎঃড়হ) তার গ্রন্থ “ ঈড়ষষবপঃরড়হ ড়ভ ঃযব ছঁৎধহ’’ এ লিখেছেনঃ ‘নিশ্চয় আমাদের কাছে বর্তমানে বিদ্যমান কুরআনের কপিটি অবিকল সেই কপি যা মুহাম্মদ সাঃ স্থির করে গিয়েছিলেন। সুতরাং, আমাদের কাছে বিদ্যমান কপিটি মুহাম্মদের আসল এবং অবিকৃত গ্রন্থটিই। এতে কোন সন্দেহ নেই।’ আরবাছনুত তার পুস্তিকা ‘ঞযব পড়হংঃৎঁপঃরড়হ ড়ভ ঃযব ইরনষব ধহফ ঃযব কড়ৎধহ’ তে হযরত উসমান রাজিঃ এর আমলে সংকলিত কুরআনের কপিটি সম্পর্কে বলেন ঃ ‘কুরআনের এই কপিটি ভাষ্যকার কিংবা তার অনুসারীদের কর্তৃক কোন প্রকার বিকৃতি ছাড়াই এখনো আমাদের কাছে অক্ষুন্ন রয়েছে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, অন্যকোন ধর্মগ্রন্থের বেলায় অক্ষুন্নতার এই দাবি করা যায় না।’
স্যার উইলিয়াম মুইর তার রচিত ‘ঞযব ষরভব ড়ভ গঁযধসসধফ ভৎড়স ড়ৎরমরহধষ ংড়ঁৎপবং’ গ্রন্থের সূচনাতে উল্লেখ করেনঃ ‘আমাদের কাছে বিরাজিত কুরআনের কপিটির মাঝে কোন কালেই পরিবর্তন ঘটে নি। খুব সম্ভবত পৃথিবীর বুকে অন্যকোন ধর্মগ্রন্থ পাওয়া যাবেনা, যা বিশ শতাব্দী অতিক্রম করার পরও বিকৃতি, পরিবর্তন - পরিবর্ধন থেকে নিরাপদ থাকতে পেরেছে।’
তিন. আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কাটরি ‘ঙঁৎ ঊহফধহমবৎবফ াধষবং’ গ্রন্থে লিখেছেন ঃ ‘গবেষণায় আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, পবিত্র বাইবেল সামগ্রিকভাবে স্রষ্টার আধ্যাত্মিক বাণী প্রচার করে। কিন্তু যারা এই বাইবেল লিপিবদ্ধ করেছে, ভূবিদ্যা, জীববিজ্ঞান এবং সৃষ্টিতত্ত¡ ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি নিয়ে তাদের কোন ধারণা ছিলোনা। তারা ‘হাবল টেলিস্কোপ’ বা ‘রেডিওকার্বন’ ব্যবহারের মাধ্যমে ইতিহাস জানার প্রযুক্তি অথবা ইলেক্ট্রনিক বাইনোকুলার ব্যবহারেও উৎসাহ দেয়নি। আমি বাইবেলে ‘পৃথিবী সমতল, গোলাকার নয়। চতুর্ভুজাকৃতির। ত্বীন বৃক্ষের ফলের ঝরে পড়ার মত আসমানের নক্ষত্ররাজিও ঝরে পড়ে ইত্যাদি” অবৈজ্ঞানিক তথ্য দেখে তাই আমি বিস্মিত হয়নি।’ পৃষ্ঠা -৪৮
আজ থেকে ত্রিশ বছর পূর্বে ফ্রান্সের বিজ্ঞ ডাক্তার ও বৈজ্ঞানিক মরিস বুকাইলি, বাইবেল, কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান” এর মাঝে তুলনামূলক পর্যালোচনা করতে গিয়ে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। কারণ, তিনি বাইবেলের তথ্যগুলির মাঝে যে স্ববিরোধিতা, বাস্তবতার সাথে অমিল এবং সৃষ্টি ও জীবন সম্পর্কে প্রদত্ত অলীক, কাল্পনিক গালগল্প দেখতে পেলেন; আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে যে অসামঞ্জস্যতা এবং অসঙ্গতি প্রত্যক্ষ করলেন বাইবেলে। এর কোনটিই পবিত্র কুরআনে তাঁর চোখে পড়েনি। অথচ পবিত্র কুরআন একটি বিরাট অংশজুড়ে জীববিজ্ঞান, সৃষ্টিতত্ত¡ নিয়ে আলোকপাত করেছে। তিনি বলেন ‘কুরআনের বাণীসমূহ যে শুধুমাত্র স্ববিরোধিতা থেকেই মুক্ত তা নয়, বাইবেলের মত এতে মানুষের কোন হস্তক্ষেপের প্রমাণ নেই। কেউ যদি নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর বক্তব্যসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে চায়, তাহলে দেখতে পাবে যে তা আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে শতে শতভাগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তদুপরি কুরআনে বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট অনেক বক্তব্য ও বাণী বিদ্যমান রয়েছে। তারপরও এটা অচিন্তনীয় যে মুহাম্মাদের সময়ের একজন মানুষ এর রচয়িতা হতে পারে!!
চার. ইসলামপূর্ব আসমানি ধর্মগুলো সমগ্র পৃথিবীর জন্য এবং সকল যুগের জন্য ছিল না। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেগুলোতে জীবনের সকল বিষয়ের সমাধান নেই এবং সেগুলো পূর্ণাঙ্গও নয়। মানব জীবনের নির্ধারিত কিছু দিককে সন্নিবেশিত করে। সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে না। কিন্তু ইসলাম এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। মানব জীবনের সকল বিষয় এবং দিকের সুস্পষ্ট, পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা এবং বিধিবিধান ইসলামে রয়েছে। রাজকর্ম থেকে শুরু করে বাতকর্ম সব বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ইসলামে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তা›য়ালা পবিত্র কুর›আনে ঘোষণা দিয়েছেন ঃ এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত।- সূরা নিসা-৮২
রাসূল সাঃ এর তিরোধানের পর সাড়ে চৌদ্দশত বছর গত হয়ে গেলেও এখনো মুসলমানদের জন্যে তাঁদের নবীকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে চেনা-জানা খুব অসম্ভব কিছু নয়। কারণ,রাসূল সাঃ এর জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ নিখুঁত ও নিপুণ বর্ণনায় উৎসমূল কুরআন- হাদীসে সংরক্ষিত আছে। পৃথিবীর অন্যকোন নবী-রাসূল এবং মহামানবের জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনা এত সূ²ভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এটি শুধুমাত্র ইসলামের নবী মুহাম্মদ সঃ এর ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয়েছে; কারণ তাঁর জীবনী অন্যসব মনীষীর জীবনের চেয়ে সম্পূর্ণ-পরিপূর্ণ, ঐশ্বর্যময় এবং অপরূপ শোভাময়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
মো আব্দুল কাইয়ূম ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১১:০৯ এএম says : 1
আলহামদু লিল্লাহ অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট।
Total Reply(0)
md elias ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৩২ পিএম says : 1
RIGHT, RIGHTER THANKS
Total Reply(0)
saif ul islam ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ৬:৪৬ পিএম says : 0
এই ধরনের লেখাই ইনকিলাবকে আমার মত অনেককেই বাধ্য করে অন্তত একবার পড়তে। ধন্যবাদ লেখককে এবং সম্পাদক জনাব বাহাউদ্দিন সাহেবকে।
Total Reply(0)
Mir Md. Faisal ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৫১ এএম says : 0
So good . This could be better if you add some non-muslim view about Islam, Al-Quran, and Muhammad(SAW).
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন