ইনকিলাব ডেস্ক : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশব্যাপী সহিংসতা ততই বাড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আ’লীগ নেতা-কর্মীদের হামলার শিকার হচ্ছেন বিএনপি ও মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আ’লীগের বাধায় তারা নির্বাচনী প্রচারণাও ঠিকমত চালাতে পারছেন না। এ অবস্থায় বিএনপির এক চেয়ারম্যান প্রার্থী গতকাল মিডিয়ার শরণাপন্ন হয়েছেন। নরসীংদীতে আ’লীগের হামলায় আহত হয়েছে বিএনপির এক প্রার্থী। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুইকর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে আ’লীগ প্রার্থীর কর্মীরা। গুরুতর অবস্থায় একজনকে বরিশাল শেবাচিমে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্নস্থানে বিরোধী প্রার্থীদের সভায় হামলা, মাইক কেড়ে নেয়াসহ পোস্টার ছিড়ে ফেলাসহ সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খালিয়াজুরীতে নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা : যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওর দ্বীপ খ্যাত খালিয়াজুরী উপজেলার চাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণাকে কেন্দ্র করে খালিয়াজুরী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সমর্থকরা গত শুক্রবার রাতে পাত্রা গ্রামে উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক, বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল ইসলাম জুয়েলের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত নুরুল ইসলাম জুয়েল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চাকুয়া
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর এলাকার কয়েকটি গ্রামে নির্বাচনী প্রচারনা শেষ করে রাত ৯টার দিকে পাত্রা নির্বাচনী ক্যাম্পে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে যখন আলাপ আলোচনা করছিলাম, তখন আ’লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পুত্র সৌরভসহ ৪০/৫০ জন যুবক আমার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালায়। এ সময় আমিসহ কর্মী সমর্থকরা ভয়ে আতংকে পালিয়ে যাই। তারা নির্বাচনী ক্যাম্পে ব্যাপক ভাংচুরের পর সেখানে অগ্নিসংযোগ করে। চলে যাবার সময় আমার সমর্থক দুলাল সরকার ও দীপক সরকারকে মারধর, সত্যেন্দ্র সরকারের হাঁসের খামার থেকে বেশ কিছু হাঁস লুট করে নিয়ে যায়। হামলাকারীরা এ সময় স্থানীয় কালিমন্দিরেও হামলা করে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আশুগঞ্জে ২ প্রার্থীর বাড়িতে বোমা হামলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা : আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়ন থেকে আসন্ন নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে বোমা হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিম ও বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুল হাসান মোবারকের বাড়িতে পৃথক বোমা হামলা করা হয় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তারা। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মোটর সাইকেলে এসে দুই দুর্বৃত্ত ভবানীপুর গ্রামে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোবারকের বাড়ির ফটকের সামনে পর পর দুটি বোমা ছুঁড়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। এদিকে আড়াইসিধা গ্রামের মাদুর বাড়িতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিমের বাড়িতে বোমা হামলা করা হয়। তবে দুটো হামলার ঘটনাতেই কেউ হতাহত হয়নি। গতকাল সকালে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ উভয় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বোমার আলামত জব্দ করেন।
মঠবাড়িয়ায় নির্বাচনী প্রচারে বাধা
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার হলতা গুলিসাখালী ইউনিয়নের আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হারুন-অর-রশীদ (আনারস মার্কা) এর ২ নির্বাচনী কর্মী জাকির হোসেন (৪৫) ও আঃ হালিম (৫০) আ’লীগ মনোনিত প্রার্থী রিয়াজুল আলম ঝনোর কর্মীরা কুপিয়ে জখম এবং পিটিয়ে আহত করেছে। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে অবস্থার অবনতি ঘটলে জাকির হোসেনকে বিকেলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ আলো খান (৫০) ও তার ছেলে ঋতু খান (২৫) আটক করেছে।
এদিকে ১১নং বড়মাছুয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ ফরিদ উদ্দিন (মটরসাইকেল) আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ নাসির হাওলাদারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করে প্রচারে বাধাদান এবং ভয়ভীতি প্রদানের অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসার এর বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
মাদারীপুরে বিএনপি প্রার্থী অবরুদ্ধ
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : হাইকোর্টের রায় পেয়েও নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না শিবচরের পাচ্চর ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মো. শাখাওয়াত হোসেন নান্নু মোল্লা। প্রতিপক্ষের প্রচারে বাধা, মাইক ছিনিয়ে নেওয়া, ব্যানার ছিড়ে ফেলা, কর্মী অপহরণ, গালিগালাজ ও ক্রমাগত এলাকা ছাড়ার হুমকির মুখে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ অবস্থায় তিনি মিডিয়ার শরণাপন্ন হয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি শিবচর উপজেলার পাচ্চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে হাজী মো, শাখাওয়াত হোসেন নান্নু মোল্লা মনোনয়নপত্র জমা দেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি বাছাইকালে মনোনয়ন পরে বাতিল হলে তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে আপিল করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি শুনানীর দিনধার্য হলেও ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানী অনুষ্ঠিত হয় এবং নান্নু মোল্লার আপিল খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। ৮ মার্চ হাইকোর্ট তার পক্ষে রায় প্রদান করেন। ১০ মার্চ ওই রায়ের কাগজপত্র শিবচর নির্বাচন অফিসে পৌঁছালে উপজেলা রিটার্নিং অফিসার নান্নু মোল্লাকে নির্বাচন করার অনুমতি দেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে তিনি শাখাওয়াত হোসেন নান্নু মোল্লা ওইদিন বিকেলেই নির্বাচনী প্রচারে নামেন। সন্ধার আগে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রচারে বাধা দিয়ে তার ব্যানার ছিড়ে ফেলে এবং মাইক ছিনিয়ে নেয়। শুক্রবার বিকেলে আবার প্রচারে নামলে বাহাদুরপুর মোড় থেকে তার ছেলে আবুল কালামকে ধরে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। বিষয়টি শিবচর থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ রাতে তাকে উদ্ধার করে। ওই রাতে একই কায়দায় নান্নু মোল্লার দুই কর্মী রফিক ও কালামকে অপহরণ করলে পুলিশের সহায়তায় তারাও উদ্ধার হয়।
হাজী মো. শাখাওয়াত হোসেন নান্নু মোল্লা বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে প্রতিপক্ষ দেলোয়ার হাওলাদারের লোকজন ৩৫/৪০টি মোটরসাইকেল যোগে এসে আমার বাড়ির গেট ভাংচুর করে। এসময় তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যায়। আমি এখন নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছি না। অফিসে অভিযোগ দিবো তাও পারছি না। আমি মিডিয়ার সহযোগিতা চাই।
টেকনাফে আ’লীগ নেতার ওপর হামলা
টেকনাফ উপজেলা সংবাদদাতা : টেকনাফের হ্নীলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এইচএম ইউনুছ বাঙ্গালী উপর হামলা চালিয়েছে আ’লীগ সর্মথকেরা। ১১ মার্চ রাত ১১টার দিকে তিনি বাঙ্গালী হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকায় ডাঃ জামাল আহমদের বাড়িতে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দাওয়াত খেতে গেলে মনোনয়ন বঞ্চিত দলীয় অপর নেতারা হামলা চালিয়ে ইউনুছ বাঙ্গালীকে রক্তাক্ত করে।
হামলাকারীরা এ সময় বাড়ি ও ২টি গাড়ি ভাংচুর এবং একটি মাইক্রোবাস নিয়ে যায়। খবর পেয়ে টেকনাফ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এদিকে আহতের পরিবার জানিয়েছেন, সাবেক এমপির পুত্র মাহবুব মোর্শেদ, রাশেদ মাহমুদ, তারেক মোঃ রনির নেতৃত্বে ২০/৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী এইচএম ইউনুছ বাঙ্গালীর উপর হামলা চালিয়ে গুরুত্বর জখম করে। বর্তমান তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
পলাশের ডাঙ্গা ও গজারিয়ায় আ’লীগের সন্ত্রাস
স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে : প্রথম পর্যায়ে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ও গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সহিংসতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। গজারিয়ায় বিএনপি দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান লাল মিয়া জানিয়েছেন, আ’লীগের প্রার্থী সমর্থকরা তার নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপকভাবে বাধার সৃষ্টি করছে। ইউনিয়নে ধানের শীষের কোন পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না। রাতের বেলায় পোস্টার লাগালে সকালেই আওয়ামী লীগের ভোটকর্মীরা তা ছিড়ে ফেলে দিচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ধানের শীষের ভোটকর্মীদের হুমকি দিচ্ছে, গত শুক্রবার বিকেলে সরকারচর গ্রামের একটি উঠান বৈঠক প- করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এদিকে ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অবস্থাও তথৈবচ। সেখানে বিএনপি প্রার্থী হাজী শফিকুল ইসলাম স্বপন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ সৈয়দ মোঃ ইকবাল আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধুমকি, হামলার মুখে স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের কর্মীরা স্বপনের প্রচারণা সভায় হামলা চালায়। তাকে অবরোধ করে রাখে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ সৈয়দ ইকবালের ভোটকর্মীদের মারধর করে রক্তাক্ত যখম করে। আওয়ামী হামলায় আহত ডাঙ্গা ইউনিয়নের হাসনহাটা গ্রামে সৈয়দ ইকবালের কর্মী হানিফ মাহমুদ চশমা মার্কার স্টিকার লাগাতে গেলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা তার উপর হামলা চালায়। তারা চায়না অস্ত্র সামুরাই দিয়ে কুপিয়ে তাকে রক্তাক্ত যখম করে।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা ইকবালের মাইক ও পোস্টার ছিনিয়ে নেয়। যেখানে বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে যায় সেখানেই আওয়ামী লীগের ভোটকর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন