মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুলনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর আ’লীগ প্রার্থীদের চাপ

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : আচরণবিধি বহির্ভূত বেআইনী সুবিধার প্রত্যাশা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের। ইতিমধ্যে মিছিল করতে না দেয়ায় খুলনার পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ১০জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ ঘটনার আগেই বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। প্রত্যাশা অনুযায়ী অবৈধ সুবিধা না দেয়ায় খুলনায় দায়িত্ব পালনরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর চাপ বাড়ছে। তবে প্রার্থীদের চোখ রাঙানীতে ও চাপের ব্যাপারে মুখ খুলছেন না দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জামায়াত ও বিএনপি’র পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ চাপিয়েছেন। অথচ ওই কর্মকর্তার অধীনেই বিগত উপজেলা পরিষদ ও পাইকগাছা পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিন বলেন, ‘গত দু’দিনে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। এটি কারো কারো অপছন্দ হতে পারে। উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের সময়ে আমি তো এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। কই তখনতো কোন পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেনি। আসলে ওরা মিছিল করতে চেয়েছিলেন, সে সুযোগ না দেয়াতে অহেতুক এমন অভিযোগ তোলা হল। আমি সরকারি কর্মচারী। চাপ দিয়ে কাজ হবে না। আমি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি, করবো।’
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ বিলাল হোসেন খান ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৬ প্রার্থীকে অর্থদ-ে দ-িত করেন। দ-িতদের মধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলার বটিয়াঘাটা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা প্রতীকের সমীর কুমার সরকার রয়েছেন।
বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) (তদন্ত) এনামুল হক বলেন, ১৬ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর অভিযোগ ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে প্রত্যেকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে মোট ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে প্রার্থীরা উচ্চবাচ্য করেছিলেন।
এছাড়া, কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কয়রা সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাহারুল ইসলাম ও তার সমর্থকরা গত ৩ মার্চ কয়রা প্রেসক্লাবের সভাপতি মতিউর রহমানকে পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় বাহারুল ইসলামসহ ৮ জনকে আসামি করে কয়রা থানায় মামলা হলেও কেউই গ্রেফতার হয়নি।
শুধু পাইকগাছা বা বটিয়াঘাটা নয়; খুলনার ৯টি উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অনৈতিক সুবিধা প্রত্যাশা করছেন বলে অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তাদের। তবে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠতে পারে, এমন আশঙ্কায় মুখ খুলছেন না তারা। খুলনাতে প্রায় প্রতিদিনই কোন কোন ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছেন না বলে অভিযোগ সরকারী দল-মতের বিরোধী শিবিরের প্রার্থীদের। তাই নির্বাচন অফিসে আচরণবিধি লঙ্ঘনের এবং থানায় কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
জেলা নির্বাচন অফিসের সূত্রমতে, খুলনার ৯ উপজেলায় ২৯ জন রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রত্যেক প্রার্থীই চায় একটু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা। আর কোন কর্মকর্তাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ভিন্ন নজরে দেখেন না। তাই কঠোরভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন