স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির সঙ্গে ব্যাংক ও সরকারি দলের লোক জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সঠিকভাবে ঘটনার তদন্ত হলে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গয়েশ্বর এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে তিনি দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।
গয়েশ্বর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ‘হ্যাক’ নয়, চুরি হয়েছে। যাদের হাতে ব্যাংকের চাবিকাঠি, তারা ছাড়া এই টাকা লুট হওয়া সম্ভব নয়। আর সরকারি দলের কারও সঙ্গে যোগসাজশ ছাড়া এত টাকা লুট করার সাহসও কারও নেই। তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই কিন্তু সাংগঠনিকভাবে তারেক রহমানকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে রেখেছি। সঠিকভাবে তার কাছে কোনো দায়িত্ব নেই। তিনি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি কখন দায়িত্ব পালন করবেনÑচেয়ারপার্সনের অনুপস্থিতিতে। চেয়ারপার্সন যখন অনুপস্থিত হবেন, তখন তিনি (সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান) দায়িত্ব পালন করবেন এবং চেয়ারপারসন যতক্ষণ উপস্থিত থাকবেন, তারেক রহমান নিষ্ক্রিয় থাকবেন।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করেই প্রস্তাবটা আনতে চাই পার্টির চেয়ারপার্সনের কাছে দলের গঠনতন্ত্রে। দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেয়া, যে দায়িত্ব তিনি পালন করবেন। তাহলে নেতা-কর্মীরা জানতে পারবেন, এই দায়িত্বটা উনার ওপর আছে, তারা সেভাবে যোগাযোগ করে কথা বলে সেভাবে কাজ করতে পারবেন।
‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ পদে গঠনতন্ত্রে দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণের বিষয়টি তুলে ধরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যেমন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সার্বক্ষণিক দফতরের দায়িত্ব পালন করেন, তেমনি আমরাও স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে স্থায়ী কমিটির মধ্যে আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ থাকে না, পার্টির চেয়ারম্যান যখন নির্দেশ দেন, সেখানে কাজ করতে পারি। তেমনি ভাইস চেয়ারম্যানদের কোনো না কোনো দায়িত্ব বর্তায়। আমরা জানি না, তারেক রহমানের দায়িত্ব কী? তিনি কথা বলতে চেষ্টা করেন। সেই কথা বলাটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেই কারণেই তারেক রহমানকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের কথা উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আলোচনা সভায় বলেন, তারেক রহমান রাজনীতির সঙ্গে ২৪ বছর যাবৎ জড়িত। প্রাথমিকভাবে তিনি পর্দার অন্তরালে অতিমাত্রায় সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপিকে পুনর্নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে একাডেমিক কাজ থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে রিসার্চ সেলের মতো করে ২০০১ সালে একটি ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীকালে ২০০১ সালে সক্রিয়ভাবে তিনি জনগণের সামনে আসেন রাজনীতিতে। শহীদ জিয়ার যেভাবে জনগণের পাশে যেতেন, তারেক রহমানও পিতার আদর্শকে সামনে রেখে দলের তৃণমূলে চলে গেলেন, এতে জোয়ার ও উৎসাহের সৃষ্টি হলো। প্রতিপক্ষ এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিল না। স্বাভাবিকভাবে নিল না বলেই কিছু মিডিয়া ও প্রতিপক্ষ নানাভাবে তাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করল। সেই থেকে ১/১১-এর মতো ঘটনা ঘটে গেল।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজেকে দলের কাউন্সিল হচ্ছে, সকলে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করুন। আমাদের কাউন্সিলের জায়গা সীমিত। আমি বলব, কাউন্সিলের সময়ে ছবি তোলা, নেতাদের সামনে পড়ার চেষ্টা করবেন না। এই কাউন্সিলটা নেতা বানানোর জন্য নয়, এটা বিএনপিকে আগামী দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কর্মকৌশলের ঠিক করবে। পাশাপাশি যারা শত জেল-জুলুমের মধ্যে সংগঠনের কর্মসূচিকে সক্রিয় রেখেছেন, অবশ্যই তাদের নেত্রী মূল্যায়ন করবেন।
তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ষড়যন্ত্রকারী যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন, জাতীয়তাবাদী চিন্তা ও চেতনাকে কখনো ধ্বংস করতে পারবে না।
দলীয় প্রতীকের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ‘বোগাস ও রাবিশ’ অভিহিত করে গয়েশ্বর বলেন, যারা বিনা ভোটে এমপি হয় সেই দলের নেতা-কর্মীরা বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হবেন, এটাই স্বাভাবিক। এটাই তাদের কাছে গণতন্ত্র।
দোয়া মাহফিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন। পৃথক সভায় অন্যদের মধ্যে জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হাজী মো. লিটন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন