রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ‘ম্যালওয়ার’ বসায় হ্যাকাররা

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের একাউন্টে থাকা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ বেহাত হওয়ার ঘটনার ব্যাপারে কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সন্দেহ করছেন যে অজ্ঞাতপরিচয় হ্যাকাররা ম্যালওয়ার বা ‘ক্ষতিকর সফটওয়ার’ ব্যবহার করে ওই একাউন্টের লেনদেনের ওপর নজর রাখছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স দু’জন ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, সম্ভবত ওই হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকে কয়েক সপ্তাহ ধরে লেনদেন পর্যবেক্ষণ করেছিল এবং কখন কি ভাবে টাকা হাতিয়ে নেবে তার পরিকল্পনা করেছিল।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই ম্যালওয়ারের কিছু নমুনা এবং ঠিক কিভাবে তা ব্যবহার করা হয়েছিল - তা তারা বের করতে পারবেন বলে আশা করছেন। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমের নিরাপত্তাব্যুহ ভাঙার এক মাসেরও বেশি সময় পর হ্যাকাররা প্রায় ১০০ কোটি ডলার চুরি করার চেষ্টা করে- যা নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে তাদের একাউন্টে রাখা ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে ব্যাংকের কেউ জড়িত ছিল এমন প্রমাণ তারা এখনো পান নি, তবে ব্যাংকিং-এর সাথে ঘনিষ্ঠ এসম্পর্কে ভালোভাবে জানে এমন কেউ হয়তো এতে সহায়তা করেছে- বা তারা ব্যাংক কর্মীদের ওপর নজরদারি করে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে স্বীকার করেছেন যে তাদের কম্পিউটার সিস্টেমে দুর্বলতা ছিল এবং এ সমস্যা পুরোপুরি ঠিক করতে দু’বছরের বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এখন বের করার চেষ্টা করছেন- কি ভাবে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ঢুকতে পেরেছিল। সম্ভবত তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট মেসেজিং তথ্যগুলো পেয়ে গিয়েছিল। নিরাপদে টাকা লেনদেন করার জন্য এই সুইফট মেসেজিং পদ্ধতি সারা পৃথিবীর ব্যাংকগুলোই ব্যবহার করে। বেলজিয়াম ভিত্তিক সুইফট কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের মূল বার্তা বিনিময় ব্যবস্থার কোন ক্ষতি হয় নি।
পালিয়ে যাচ্ছিলেন ফিলিপাইনের সেই ব্যাংক ম্যানেজার:
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অংকের টাকা চুরিতে ফিলিপাইনের সন্দেহভাজন ব্যাংক ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস দিগুইতোকে ম্যানিলার নিনয় আকিনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে জাপানের নারিতায় যাওয়ার উদ্দেশে ম্যানিলা বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেন ফিলিপাইনের গোয়েন্দারা। দিগুইতোর দাবি, তিনি পালিয়ে যাচ্ছিলেন না। সন্তানের জন্মদিন পালন করতে যাচ্ছিলেন।
ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিটের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার দিগুইতো। ওই শাখায় গত বছর আগে ৫টি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সন্দেহভাজন ক্রুজ, ভারগারা এবং ভাসকুইজ- প্রত্যেকেই ৫০০ ডলার জমা দিয়ে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি) ২০১৫ সালের ১৫ মে অ্যাকাউন্ট খোলেন। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে আর কোনও লেনদেন হয়নি। ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের কোড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতিয়ে নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। তবে এরমধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার তারা ব্যাংক থেকে তুলতে পারেন। দিগুইতোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছেÑ তিনি আগে থেকেই অ্যাকাউন্টগুলোতে অর্থ বণ্টনের ব্যবস্থা করেন।
বিপুল অংকের এ টাকা নিয়ে তদন্ত করছে ফিলিপাইনের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গোয়েন্দা ইউনিট। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলও। একইসঙ্গে এতো বড় ঘটনায় দেশটির সিনেট কমিটিতেও শুনানি চলছে। আগামী মঙ্গলবার সন্দেহভাজন অন্যদের পাশাপাশি রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের ওই ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকেও ডাকা হয়েছে শুনানিতে। সিনেট কমিটির শুনানি সামনে রেখেই দিগুইতো দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিলেন। অবশ্য বিমানবন্দরে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ছোট ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নারিতায় যাচ্ছিলেন। মঙ্গলবারই ফিরে আসতেন তিনি। দিগুইতো উপস্থিত সংবাদ কর্মীদের বলেন, ‘আমি জানি কঠিন এক সময় পার করছি আমি। মা হিসেবেও আমার দায়িত্ব আছে। সেটা একেবারে অবজ্ঞা করা যায় না। এ বিষয়ে সিনেটকে আমি অবহিত করেছি যে, আগামী মঙ্গলবার শুনানিতে আমি উপস্থিত থাকবো।’
আরসিবিসির ওই ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আরও বলেন, ‘আমার ছেলে বুঝতে পারছে না যে, আমদের কেন বিমানে উঠতে দেয়া হলো না, এতে সে ডিজনিল্যান্ডে যেতে পারলো না। আমাদের চারপাশে কেন এতো লোক, কেন আমাদের ছবি তুলছে। যা ঘটছে সে সম্পর্কে আমার ছেলে কিছুই জানে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিদেশ যাওয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। বিমানবন্দরেও আমাকে এ সম্পর্কে কোনো কিছু অবহিত করা হয়নি। বিমানে উঠে আমরা বসেছি। এসময় বিমানের একজন কর্মী এসে আমাকে জানায়, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কোর কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। ওই কর্মকর্তা আমাকে জানান যে, আমার স্বামী এবং ছেলে যেতে পারবে। আমার যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। আমার স্বামী ও সন্তান আমাকে ছাড়া যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
দিগুইতো বলেন, ‘ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমাকে অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের একটি চিঠি দেখান। ওই চিঠিতে বলা হয়, অর্থপাচারের সঙ্গে আমার যোগসাজশ রয়েছে। যদিও আমাকে অভিযুক্ত করে কোনো মামলা হয়নি।’ আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের অর্থপাচার এবং সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন অমান্যের অভিযোগ তদন্ত করছে। একইসঙ্গে ভুল তথ্য দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার অভিযোগও রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকারদের চুরি করা ৮১ কোটি ডলার মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ের একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এই টাকাগুলো ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসেছিল। সেই অ্যাকাউন্টগুলো স্থগিত করে দেয়া হয়েছে এবং সন্দেহভাজন ছয় জন শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ইনকোয়ারার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন