স্টাফ রিপোর্টার : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী ২৭ আগষ্ট ও ২৮ আগষ্ট হজযাত্রী পরিবহনের সুযোগ পেতে যাচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র এ ব্যাপারে আভাস দিয়েছে। রাতে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আরো ১২টি শ্লট পাওয়ার আশাবাদী । আজ শনিবার এ ব্যাপারে জেদ্দা সিভিল এভিয়েশন থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। উল্লেখিত দু’দিন হজযাত্রী পরিবহনের সুযোগ পাওয়া গেলে সকল যাত্রীই এবার হজে যেতে পারবেন। হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিমও বলেন,বিমানের শ্লট পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। সকল যাত্রীই হজে যেতে পারবেন।
মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও যারা পূণ্যভূমি বাইতুল্লাহ যেতে পারছেন না। এবং যাদের বিমানের টিকিট কাটা বাকি রয়েছে, তাদেরও হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভিসা হওয়ার পরও টিকিট কাটা হয়নি অনেকের। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও হজে যেতে না পারায় কান্নার রোল পড়েছে হজ ক্যাম্পে। চুক্তি অনুযায়ী সব টাকা পরিশোধের পরও তাদের ঘুরতে হচ্ছে এজেন্সি ও দালালদের দ্বারে দ্বারে।
সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থেও হজের টাকা গোছানো সম্ভব হয়নি, তাই তো জমি বিক্রি করে জীবনের শেষ ইচ্ছা স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র হজ করতে চেয়েছিলেন পাবনার আবদুস সালাম। এজেন্সির অতিরিক্ত টাকা দাবির পর তা পরিশোধ করে এবারো হজে যাওয়া হচ্ছে না। মিসফালাহ ট্রাভেলসের নিয়োগপ্রাপ্ত দালাল আবু হানিফ এখন আর তার ফোনও রিসিভ করেন না।
এমনি ৭৫ বছর বয়সী সাতক্ষীরার মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী। ২০১৫ সালে টাকা পরিশোধ করে দুই বছর পর ভিসা মিললেও হজ ক্যাম্পে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে কিন্তু বিমানের টিকিট মেলেনি। অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা না দিলে বিমানের টিকিট দেবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি। এমন অভিযোগ করেন আরো অনেকে। এজেন্সিগুলোর প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক হজযাত্রী এ বছর হজে যেতে পারছেন না। আবার হজে যাওয়ার পরও সউদীতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন।
হজ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২শ’৩৭ জন হজে যাচ্ছেন। কিন্তু গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার হজযাত্রী সউদী আরব পৌঁছেছেন। ফলে এখনো ১৪ সহ¯্রাধিক হজযাত্রী সউদী আরব যাওয়া বাকি রয়েছে। শনিবার ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের এবং ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সউদী এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট রয়েছে। এ দু-তিন দিন বাকি হজযাত্রী পরিবহন করতে হিমশিম খাচ্ছে দু’টি এয়ারলাইন্স।
এ দিকে ভিসা হওয়ার পরও এখনো অনেক হজযাত্রীর টিকিট কাটেনি হজ এজেন্সিগুলো। হজ অফিসে গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত এক হিসাবে জানা যায়, প্রায় ১২ হাজার হজযাত্রীর বিমান টিকিট কাটেনি এজেন্সিগুলো। এর মধ্যে ৫৭টি এজেন্সির ১০ হাজার ১১ জন হজযাত্রীর মধ্যে মাত্র এক হাজার ২০৭ জনের টিকিট কাটে। আর ১৭টি এজেন্সির তিন হাজার হজযাত্রীর জন্য কোনো টিকিটই কাটেনি।
এজেন্সিগুলোকে ভিসাপ্রাপ্ত সব হজযাত্রীকে টিকিট নিশ্চিত করে জরুরি ভিত্তিতে সউদী আরব পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে হজ অফিস। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। প্রতি বছরই এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে হজযাত্রীদের জন্য নিম্নমানের ট্রলি ব্যাগ ক্রয়, ভিসা-টিকিট নিয়ে টালবাহানা, মক্কা-মদিনায় বিলম্বে বাড়ি ভাড়া করা, নির্ধারিত দূরত্ব থেকে দূরে এবং নিম্নমানের বাড়ি ভাড়া করা, ঠিকমতো খাবার না দেয়া, চুক্তিহীন বাড়িতে গাদাগাদি করে হজযাত্রীদের রাখা, দেরিতে মোয়াল্লেম নেয়া, হজযাত্রীদের খোঁজখবর না নেয়াসহ অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। কিন্ত প্রতিকার হয় না। হজ মৌসুমে হৈচৈ হয়। হজ মৌসুম চলে গেলে সবাই ভুলে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে হজযাত্রীদের ভোগান্তি। প্রথমে নিবন্ধন নিয়ে নানা ভোগান্তি। তারপর প্রি-ভিসা জটিলতা, সময় মতো ভিসার আবেদন না করা, মোয়াল্লেমের সঙ্গে এজেন্সিগুলোর বিলম্বে চুক্তি, সময় মতো বাড়ি ভাড়া না করা, ভিসা লজমেন্ট ও মোফা সেন্ট করতে বিলম্ব করা, হজ এজেন্সিদের গাফিলতিতে যাত্রীর অভাবে একটার পর একটা করে ৩৩টি হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়া। আর শেষ মুহূর্তে এসে এখন ফ্লাইটের বিপর্যয় ঘটেছে। বহু হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এজেন্ট ও মধ্যস্বত্বভোগী। ভিসাপ্রাপ্ত হজযাত্রীদের সউদী পাঠাতে এজেন্সি মালিকরা শুরু করেছেন টালবাহানা। মধ্যস্বত্বভোগী দালালচক্র প্রায় দুই হাজার হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে এজেন্সিকে দেয়নি। ফলে এজেন্সি টিকিট কাটছে না। প্রতারণা করে মধ্যস্বত্বভোগী ও অনেক এজেন্সি মালিক লাপাত্তা হয়ে গেছে। প্রতারিত হজযাত্রীরা জড়ো হচ্ছেন আশকোনা হজ ক্যাম্পে। সেখানে প্রতারিত হজযাত্রীদের কান্নায় প্রতিদিন ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ। অভিযোগের পাহাড় জমছে হজ অফিস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। কিন্ত দ্রæত কোনো প্রতিকার করতে পারছেন না কেউই। ইকো এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজমের প্রতারণার শিকার ২১ জনের টিকিট গতকালও হয়নি।
বিগত কয়েক বছর একই সমস্যা পরিলক্ষিত হলেও হজ এজেন্সির লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের কারণে সে সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। এদিকে পবিত্র হজ নিয়ে প্রতারণার শেষ কোথায় জানতে চাইলে আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলামের কাছে।
এদিকে, ৫০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে হজযাত্রীদের টিকিট না কাটা এবং হাজিদের নানাভাবে হয়নির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি এজেন্সি তাদের বেশিরভাগ হজযাত্রীর বিমানের টিকিট কাটেনি বলেও জানান হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার হজযাত্রার ৩১তম দিনে ১৩টি ফ্লাইট সউদী আরবের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৭টি বাংলাদেশ বিমানের এবং ৬টি সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ২শ’৩৮ জনের ভিসা সম্পন্ন হয়েছে। ভিসা সম্পন্ন হওয়ার পরও বিমানের টিকিট নিয়ে হয়রানির অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। এদিকে, হাবের মহাসচিব শাহদাত হোসেন তসলিম অভিযোগ করে বলেন, দালাল এবং ব্যাংকের নানা হয়রানির কারণে সঠিক সময় টিকিট পাচ্ছে না হজযাত্রীরা।
যাত্রী ভোগান্তি এবং অনিশ্চয়তার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং হজ এজেন্সিগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছে। আর মাঝে পড়ে পিষ্ট হচ্ছেন হজযাত্রীরা। আগামী ৩১ আগস্ট হজ। আজ শনিবার বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশ্যে ঢাকাত্যাগের কথা। সউদিয়া এয়ারলাইনসের শেষ হজ ফ্লাইট ২৮ আগস্ট। বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানিয়েছেন, ২৬ আগস্ট দুটি অতিরিক্ত শ্লট (বিমান ওঠা-নামার অনুমতি) পাওয়া গেছে। সউদী আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ২৭ ও ২৮ আগস্টে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত ১২টি শ্লটের আবেদন করা হয়েছে। এই শ্লটগুলো পাওয়া গেলে তা পূর্ণ ব্যবহার করতে পারলে সব যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। বিমান সাধ্যমতো চেষ্টা করছে সব হজযাত্রীকে সউদী আরবে পৌঁছাতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন