সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পশুহাটে জালনোট আতংক

বসানো হয়েছে শনাক্তকরন মেশিন, সতর্ক থাকতে করা হচ্ছে মাইকিং

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


রাজধানীর পশুহাটে জাল টাকার নোট আতংকে রয়েছেন গরু ব্যাপারীরা। ঈদ কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে টাকা জাল চক্র। রাজধানীর পশু হাটগুলোতে গতকাল থেকে কোরবানীর গরু ক্রয় করতে ক্রেতাদের সমাগম বাড়ছে। গরু ব্যাপারীদের মধ্যে জাল টাকা আতংক থাকলেও আইন-শৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি হাটেই জাল টাকা শনাক্ত করন মেশিন রাখা হয়েছে। একই সাথে ইজারাদারদের পক্ষ থেকেও জাল টাকা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সতর্ক করে মাইকিং করা হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে। গতকাল রাজধানীর আফতাব নগর, বনশ্রী ও কমলাপুরসহ কয়েকটি হাট ঘুরে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। আফতাব নগর হাটে গরু ব্যাপারী রুহুল আমিন বলেন, এ বছর তিনি ৭টি গরু এনেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির দাম চাচ্ছেন ৫ লাখ টাকা। অনেক ক্রেতাই আসছে। তবে গরু বিক্রির সময় জাল টাকা নিয়ে প্রতারিত হওয়ার আশংকা করছেন তিনি। তিনি বলেন, মাইকিং করা হয়েছে জাল টাকা নিয়ে। অনেক সময় মেশিন দিয়েও জাল টাকা শনাক্ত করা যায় না। সমস্যা হয় পরে।
ডিবি’র যুগ্ম পুলিশ কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ঈদ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে জাল টাকার ছড়াছড়ি দেখা যায়। ঈদে গরু হাটে পুলিশের কন্ট্রোলরুম রয়েছে। কন্ট্রোলরুমে ও বাজারের ইজারাদারদের কাছে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে জালটাকা চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে তারা বলছেন, কোরবানির পশুহাট ও বিভিন্ন শপিংমলে যেন এই চক্রটি জাল টাকা ছড়াতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। এসব স্থানে পুলিশের বিশেষ নজরদারিও রয়েছে। গত ১৬ আগস্ট পুলিশ সদরদফতরে সম্মেলন কক্ষে আইজিপি’র সভাপতিত্বে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পশুহাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, পশু হাট ইজারাদারের নেয়া হাসিলের হার দেখানো, নির্ধারিত হারের বেশি আদায় না করা, কোরবানির পশু ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পশুহাটে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে এই জালনোট তৈরির প্রতারক চক্র ঠেকাতে আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরাও। এরই অংশ হিসেবে গত ২১ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে জাল নোট চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ১১ লাখ জাল টাকা ও ৩৭ লাখ ৬০ হাজার ভারতীয় জাল রুপিসহ জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জানা যায়, এরা পেশাদার জাল টাকা তৈরি ও বিক্রি করে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুব কম সময়ের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে জাল টাকা ও রুপি তৈরি করে। কোরবানি উপলক্ষে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ জালটাকা সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল বলেও তারা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে। গরু হাট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রতারক চক্র ঠেকাতে প্রতিটি গরু হাটে জাল নোট শনাক্ত করার মেশিন বসানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া জাল নোট নিয়ে যেন কেউ প্রতারিত না হয়, সে জন্য কিছু সময় পরপর মাইকিং করা হচ্ছে। কোনও নোট নিয়ে সন্দেহ হলে তা নিয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে এসে চেক করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহŸান জানানো হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও হাটগুলোতে টহল দিচ্ছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার জালনোট প্রতারক চক্রের তৎপরতা কম বলে জানিয়েছেন ডিবির এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এবার ঈদ আসার আগ থেকেই এই প্রতারকদের ধরতে পুলিশের অভিযান ও হাটগুলোতে পুলিশের নজরদারির কারণে এবার প্রতারকদের তৎপরতা কম। আইনশৃংখলা বাহিনীর সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, ঢাকায় জালনোট তৈরির ১০-১২টি চক্র রয়েছে। ঢাকার বাইরেও তাদের সদস্য রয়েছে। সাধারণত চক্রের প্রধানরা ঢাকাতেই জালনোট তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রতিটি চক্রের সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ১০ জন। ৫০০ ও ১০০০ টাকার জালনোট বেশি তৈরি করে এই চক্র। উৎপাদনকারী প্রথম স্তর। দ্বিতীয় স্তরের লোকজন উৎপাদনকারীর কাছ থেকে এক লাখ টাকার জাল নোট আসল ৮-১০ হাজার টাকা দিয়ে কেনে। পরে ওই জালটাকা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠায় দ্বিতীয় স্তরের লোকজন। দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় তৃতীয় স্তরের সদস্যদের কাছে ওই এক লাখ জাল নোট ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এভাবেই জালিয়াত চক্রের হাত ঘুরে প্রতারিত হয় সাধারন মানুষ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন