বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

সুন্নতের আলোকে খাবার ও পানি পানের আদব

মুফতী ইবরাহীম আনোয়ারী | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। একটি সার্বজনীন কালজয়ী জীবন-ব্যবস্থা। মানব জীবনে বুনিয়াদি বিষয় হচ্ছে ঈমান, আকায়েদ, মুআমালাত, মুআশারাত ও আখলাক ইত্যাদি। ঈমান ও আকায়েদের পর হচ্ছে ইবাদত। আর প্রতিটি ইবাদত হতে হবে রাসূল সা: এর সুন্নত তৈরিকায়। মুসলিম জাতির সাংস্কৃতি, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সুন্দর ও সৌরভময় করতে মহানবী হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ (সা.) ৬৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে উম্মতকে দিয়েছেন সুন্দর ও উজ্জ্বলময় পথনির্দেশ, যা আমাদের নিকট সুন্নত নামে সুপরিচিত। ইসলামে এমন কোন বিষয় নেই, যে সম্পর্কে ইসলাম দিক নির্দেশনা দেয়নি। খাবার ও পানি পান করার মাঝেও রাসূল সা: এর সুন্নত রয়েছে।

খাওয়ার সুন্নতসমূহ : দস্তরখানা বিছানো [সহীহ আল-বুখারী ২/৮১৮]। কব্জি পর্যন্ত উভয় হাত ধোয়া [সহীহ মুসলিম ২/১৭২]। উচ্চৈঃস্বরে বিছমিল্লাহ বলা [সহীহ আল-বুখারী ২/৮১০]। ডান হাত দিয়ে খাওয়া [সহীহ মুসলিম ২/১৭২]। খানার মজলিসে সবচেয়ে বড় এবং মান্য ব্যক্তিকে দিয়ে খানা আরম্ভ করা [সহীহ মুসলিম ২/১৭১]। খানা এক আইটেমের হলে শুধু নিজের সামনে থেকে খাওয়া [সহীহ আল-বুখারী ২/৮১০]। খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে সেটা উঠিয়ে পরিষ্কার করে খাওয়া [সহীহ মুসলিম, ২/১৭৫]। হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া [সহীহ আল-বুখারী ২/৮১২]। খানার দোষ না ধরা [সহীহ আল-বুখারী ২/৮১৪]। খাওয়ার পূর্বে জুতা-সেন্ডেল খুলে ফেলা [মিশকাতুল মাসাবীহ ২/৩৬৮]। খাওয়ার সময় পায়ের পাতায় ভর করে বসা, অর্থাৎ নিতম্বকে মাটির ওপর বসিয়ে উভয় হাঁটু খাড়া করে বা এক হাঁটু খাড়া করে রেখে অপর হাঁটুকে বিছিয়ে দিয়ে বসা বা উভয় হাঁটু বিছিয়ে দিয়ে নামাযে বসার ভঙ্গিতে বসা। মোটকথা যেভাবেই বসুন সামনের দিকে একটু ঝুঁকে বসবেন [মিশকাতুল মাসাবীহ ৮/১০২]। খানার বাসন-প্লেট ইত্যাদি পরিষ্কার করা। এসব পরিষ্কার রাখলে এরা মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে [সুনানে ইবনে মাজাহ ১/২৩৫]। খাওয়ার পর আঙ্গুলগুলো চেটে চেটে খাওয়া [সহীহ মুসলিম ২/১৭৫]। খানা খাওয়ার পর নিচের দোয়াটি পাঠ করা
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী-আত্ব্‘আমানা-ওয়া ছাক্বা-না- ওয়াজ‘আলানা-মিনাল মুসলিমীন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেও আহার করালেন, পানি পান করালেন এবং মুসলমানদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করলেন [সুনানে তিরমিযী ২/১৮৪]। তারপর দস্তরখানা ওঠানো [সুনানে ইবনে মাজাহ ১/২৩৭]।
দস্তরখানা ওঠানোর দোয়া পড়া:
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লা-হি কাছীরান ত্বাইয়িবাম মুবারাকান ফীহি, গায়রা মাকফিইয়িনওঁ ওয়া লা-মুয়াদ্দা ওয়ালা-মুছতাগনান ‘আনহু রব্বানা-।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য এমন প্রশংসা যা খুবই পবিত্র এবং বরকতময়। হে প্রভু! আমরা এ খাবারগুলো পুরোপুরি যথেষ্ট মনে করি। [সহীহ আল-বুখারী ২/৮২০]। উভয় হাত ধোয়া [সুনানে আবু দাউদ ২/১৮২]। কুলি করা [সহীহ আল-বুখারী ২/৮২০]। শুরুতে (বিছমিল্লাহ) পড়তে ভুলে গেলে মাঝখানে পড়বে, (বিছমিল্লাহ আউওয়ালাহূ ওয়াআ-খিরাহূ)।
যখন কারো দাওয়াতে অংশ নিয়ে খানা খাবেন তখন মেজবানের জন্য এ দোয়া করবেন, উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব্‘আমানী, ওয়াছক্বি মান ছাক্বানী। অর্থ: হে আল্লাহ! যে আমাকে খাওয়াইলেন, আপনি তাকে খাওয়ান। যে আমাকে পান করাইলেন, আপনি তাকে পান করান [মুসলিম ২/১৮০]। সিরকা ব্যবহার করা সুন্নত, যে ঘরে সিরকা থাকবে সে ঘরকে তরকারীর মুখাপেক্ষী বলা যাবে না [সুনানে ইবনে মাজাহ ১/২৩৮]। নির্ভেজাল গম ব্যবহার করার চেয়ে কিছুটা যব মিশিয়ে দেওয়া উত্তম, এতে সুন্নতের ওপর আমল হয় [আল-জামিউস সগীর ২/৯৭৯]। গোশত খাওয়া সুন্নত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘গোশত দুনিয়া-আখিরাতে সমস্ত খাবারের প্রধান। [আল-মু’জামুল আওসাত তাবারানী ৮/২৩২]। মুসলিম ভাইদের দাওয়াত গ্রহণ করা সুন্নত। অবশ্য যদি তার অধিকাংশ আয়ের উৎস যদি সুদ, ঘুষ ও অন্যান্য অসৎ উপায় হয়ে থাকে, তাহলে দাওয়াত কবুল না করা চাই [সুনানে আবু দাউদ ২/১৬৯]। সদ্য মৃত ব্যক্তির শোকাহত পরিবারের সদস্যদের খানা খাওয়ানো সুন্নত [সহীহ মুসলিম ২/১৭৩]।
পানি পান করার সুন্নতসমূহ : ডান হাতে পান করা। কেননা শয়তান বাম হাত দিয়ে পানি পান করে [সহীহ মুসলিম ২/১৭২]। বসে পান করা, দাঁড়িয়ে পান করা নিষেধ [সহীহ মুসলিম ২/১৭৩]। শুরুতে (বিছমিল্লাহ) পড়া এবং শেষে (আলহামদু লিল্লাহ) পড়া [সুনানে তিরমিযী ২/১০]। তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা, নিঃশ্বাস ফেলার সময় গøাস থেকে মুখ আলাদা করা [সহীহ মুসলিম ২/১৭৪]। গøাসের ভাঙ্গা অংশের দিক দিয়ে পান না করা [সুনানে আবু দাউদ ২/১৬৭]। জগ ইত্যাদি বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করবেন না। কেননা এতে বেশি পানি চলে আসার বা সাপ-বিচ্ছু থাকার সম্ভাবনা থাকে [বুখারী ২/৮৪১, মুসলিম ২/১৭৩]।
পানি পান করার পর অন্যজনকে দিতে হলে প্রথমে ডান পাশের জনকে দিবেন। সেও তার ডান পাশের জনকে দিবেন, এভাবেই চলবে। চা ও অন্যান্য পানীয়ের ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম [বুখারী ২/৮৪০ ও মুসলিম ২/১৭৪]।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৮:০৯ এএম says : 0
rohinga der rokkha korta hobe.proyojone tader Stan dita hobea.Allahtala tader rokkha korbea.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন