শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কদমতলীতে বিদেশি মদ ও ৫৫ লাখ টাকা উদ্ধারে র‌্যাবের মামলা

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর কদমতলী থানার মুরাদপুরের মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রধান ওয়াসিম আহমেদ সুমন (৪০) গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পুলিশ সুমনের ১৫৩ নং মাদ্রাসা রোড মুরাদপুরের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, মদ বিক্রির ৫৫ লাখ টাকা ও কয়েক লাখ টাকা মূল্যমানের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে র‌্যাব কদমতলী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করে। ওই মামলায় সুমনকে পলাতক বলা হলেও স্থানীয়রা জানিয়েছে, সুমন খিলগাঁওয়ের বাসায় আছে। সেখান থেকে গুলশান ২নং সেকশনের ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবে রীতিমতো ডিউটি করছে। ওই ক্লাবের সে একাউন্টস বিলম্যান।
সুমনের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও এতো টাকা উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয় অনেকেই বিস্মিত। তবে সুমনের অতীত সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা মোটেও বিস্মিত নন। আলাপকালে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, সঠিকভাবে তদন্ত করলে আরো বহু কিছু বেরিয়ে আসবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে সুমনের উত্থান কুখ্যাত সন্ত্রাসী আল আমীন শিকদারের হাত ধরে। ওয়ান ইলেভেনের সময় এই আল আমীন শিকদার একে ৪৭ রাইফেলসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে। পরে সে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ লাইনে সুমনের গডফাদার ওই আল আমীন শিকদারই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদে সাথে সুমনের বরাবরই যোগাযোগ ছিল। এ জন্য সে নিজের বাড়িতে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের রেখে তাদের পুনর্বাসন করতো। জুরাইনের হাজী রহিমের ছেলে শিমুল হত্যার আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী মাকসুদ ওরফে বিড়ি সুমনের বাড়ির দারোয়ান। জুরাইন কমিশনার রোডের আলোচিত জোড়া খুন নানী-নাতনী হত্যা মামলার আসামীও এই বিড়ি। আরেক সন্ত্রাসী বাঘা কামরুল সুমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বাঘা কামরুল ওরফে গলাকাটা কামরুল র‌্যাবের হাতে অস্ত্র ও গুলিসহ ধরা পড়েছে। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদের এক সময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড সুজিত দাস টুনুর ছোট ভাই উজ্জ্বল দাস সুমনের ছোট বেলার বন্ধু। তাকেও বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে সুমন। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানাউল্লাহ সুমনের ঘনিষ্ঠ। তাকে কারাবন্দিদশা থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে সুমন অনেক টাকা খরচ করেছে বলে জনশ্রুতি আছে। সূত্র জানায়, অবৈধ ভিওআইপি ও মাদক ব্যবসায় যাতে কেউ বাধা দেয়ার সাহস না পায় সেজন্য সুমন এসব সন্ত্রাসীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতো। তাদের পেছনে বিপুল অংকের টাকা খরচ করতো। এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের অনেকেই সুমনের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সুমন নিজে অস্ত্র ব্যবহার করতো না। তবে অস্ত্র কেনাবেচা করতো। সহযোগীদের কাছে অস্ত্র দিয়ে রাখতো। মাঝে মধ্যে সে সব অস্ত্র দিয়ে গুলি করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতো। থার্টি ফার্স্ট নাইট, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে সত্যিকারের গুলি ফুটিয়ে আনন্দ-উৎসব করতো। স্থানীয়রা জানান, গেলো বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাতেও সুমন সন্ত্রাসী বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে শত শত রাউন্ড গুলি করে আনন্দ-উচ্ছ্বাস করেছে। ওই রাতে এলাকাবাসী গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সূত্র জানায়, গত কুরবানির ঈদের আগের রাতে সুমনের ভাতিজা রাব্বি ওরফে মিঠু এবং বাঙ্গাল জামাল ৩টি অস্ত্র ও ১৬৫ রাউন্ডগুলিসহ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে। জানা গেছে, সুমনের মাদক ব্যবসা এতোটাই জমজমাট ছিল যে সুমনের আশপাশের সবাই সেই টাকার ভাগ পেয়েছে। রাতারাতি তাদের চেহারা পাল্টে গেছে। এই অবৈধ টাকার জোড়ে সুমন মুরাদপুর লালমিয়া সরকার রোডে একটি বহুতল এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার জামায়াতের সাবেক এক এমপির ডেভেলপার কোম্পানীকে সেই এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কুতুবউদ্দিন ছাউনী নামে ১২তলা ওই ভবনের কাজ বহু আগেই শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক কারণে হয়নি। সুমনের বাড়ির আরেক কর্মচারী দোকানদার সালাম। সুমনের বাড়ির সাথে সামান্য মুদি দোকানদার সালাম কিছুদিন আগেও ৪৭ লাখ টাকায় জমি কিনেছে। সূত্র জানায়, এই সালামের মাধ্যমে সুমন বিভিন্ন স্থানে মদ সরবরাহ করতো। বিদেশি মদের বড় বড় চালান এনে সালামের দোকানেই রাখা হতে। এই সুবাদে লাখ লাখ টাকা রোজগার করে সালামেরও কপাল খুলে গেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সুমনের আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে ইতোমধ্যে গুলশান ২ নম্বরের ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবে খোঁজ নেয়া হয়েছে। সুমনের ব্যবসার উৎসেরও সন্ধান চলছে। সুমনকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, সুমনকে গ্রেফতারের জন্য সম্ভাব্য সকল স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতেও একটি অভিযান চালানো হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোনোভাবেই সে পালিয়ে থাকতে পারবে না।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কদমতলী থানার ১৫৩ নং মাদ্রাসা রোড, মুরাদপুরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব বিভিন্ন রকমের ২০ লিটার বিদেশি মদ উদ্ধার করে। একই সাথে মদ বিক্রিসহ মাদক ব্যবসার নগদ ৫৫ লাখ টাকাও জব্দ করে র‌্যাব। এর বাইরে ৬ হাজার এক শ’ ৪৬ ইউএস ডলার, ১৭৫ ইউরো, পাকিস্তানি ১ হাজার রুপিসহ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ইন্দোনেশিয়ান রুপি, ফিলিপাইনের পিসোসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করে র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে র‌্যাব চারজনকে গ্রেফতার করে। তবে প্রধান আসামী সুমন সে সময় বাড়িতে না থাকায় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন