স্টাফ রিপোর্টার : সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অস্বচ্ছতা ও ব্যক্তিগত অনুরাগের কারণে জাসদে আবারো ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল।
রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, এ বিস্ফোরণ হওয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে মন্ত্রী হওয়ার পর তার (ইনু) আর্থিক আচরণ। এ সম্পর্কে দলে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে অস্পষ্টতা আছে, অস্বচ্ছতা আছে। দলীয় সভাপতি হিসেবে ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগ, ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি (ইনু) তাই নিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি (ইনু) ৬ বছর আমাদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক (বর্তমান সভাপতি) শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে কোনো কাজ করতে দেননি। বাধা সৃষ্টি করেছেন।
আম্বিয়াকে কাজ করতে না দেয়ার নমুনা উল্লেখ করে বাদল বলেন, তিনি (ইনু) সাধারণ সম্পাদককে পার্টি অফিসে বসিয়ে রেখে অন্যকে কাজের নির্দেশ দিয়ে চিরকুট পাঠাতেন, বাণী পাঠাতেন। এভাবে দল চলে না।
বাদল বলেন, আমরা তাকে (ইনু) বারবার বলেছি, সম্মেলনে কাউন্সিলরদের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে দিন। কাউন্সিলরদের রায় আমরা নতচিত্তে মেনে নেয়ার কথাও বলেছি। কিন্তু কাউন্সিলকে তার (ইনু) হঠকারী, তথাকথিত মন্ত্রীত্বের ঔদ্ধত্যের কারণে ধ্বংস করেছে। এর উত্তর তাকেই (ইনু) দিতে হবে। আমরা দল ভাঙতে চাইনি, ভাঙন কাঁধের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাসদের কার্যকরী সভাপতি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই দলটি যতবার ভেঙেছে ফিনিক্স পাখির মতো ততবার ছাই থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই দলটি একটি স্বচ্ছ, জনগণের দলে পরিগণিত করতে চাই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাদল বলেন, আমরা ১৪ দলীয় জোটে থাকব। তবে ১৪ দলে আমাদের অবস্থান অনেক স্বচ্ছ হবে। মানুষের স্বার্থে যা বলার, আমরা তা বলার চেষ্টা করব। আমরা হরতনকে হরতন ও রুহিতনকে রুহিতন বলব।
তিনি বলেন, আমাদের দলের ৬ জন সংসদ সদস্যের ৪ জন আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তারা হলেনÑ আমি নিজে, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, রেজাউল করিম তানসেন ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লুৎফা তাহের। দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৪ সদস্যের মধ্যে ১০ জনই আমাদের সঙ্গে আছেন।
বাদল বলেন, আমরা দল ভাঙিনি, ভাঙতে চাইনি, ভাঙার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। কয়েকজন সাংবাদিক আমাদের বলেছেন, এমন কি সিক্রেট পার্টি আপনারা হলেন, দল ভাঙার কোনো গুঞ্জনও আমরা পেলাম না। দল ভাঙার কোনো নজির আমরা আগের দিনও পাইনি। তাদের (সাংবাদিক) বক্তব্যই প্রমাণ করে এই ভাঙন কর্মটির সঙ্গে আচরণ এবং দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্রোধ বিস্ফোরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত ছিল, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক-কার্যকরী সভাপতি একবারের বেশি স্বপদে থাকতে পারবে না। সে একবারের বদলে আমরা তিনবার (২০১২ সালের পর আর কাউন্সিল হয়নি) পার করে দিয়েছি। আমাদের দলে কথা উঠেছিল দলের কেউ যদি নির্বাহী দায়িত্ব গ্রহণ করেন তবে সে দলের পদে থাকতে পারবেন না। যে কোনো একটি দায়িত্ব রাখতে পারবেন। যা সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে প্রচলিত আছে।
সদ্য ভাঙন জাসদের কার্যকরী সভাপতি বলেন, আমাদের ক্ষেত্রে এই দু’টি বিষয়ে আলোচনা করে হাসানুল হক ইনুকে কাউন্সিলররা সুযোগ দিয়েছে। তিনি সভাপতি ও মন্ত্রী দুটোই থাকতে পারবেন।
ইনুকে উদ্দেশ করে বাদল বলেন, সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। আপনার (ইনু) সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকতে পারে, অনুরাগ থাকতে পারে, সবকিছুই থাকতে পারে। সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু সেখানে আমরা লক্ষ করলাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিরিন আখতারের নাম প্রস্তাব করা হলো। এটা আসতেও পারে। শিরিন আখতারের নাম প্রস্তাব করার পর সমর্থন করা হয়েছে। সেটাও হতে পারে। কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে কেউ বলল পাস পাস, শিরিন আখতার পাস। সেটাও হতে পারে। কিন্তু আপনার (ইনু) অনুগ্রাহিত নির্বাচন কমিশনার বলতে পারে না, পাস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানের নাম প্রস্তাব করা হয়। অনেক কাউন্সিলরও এটা সমর্থন করেছেন। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন বলল, আপনারা ১ ঘণ্টার সময় দিন, খাওয়া-দাওয়া করেন আমরা গোপন ব্যালটের প্রস্তাব করছি। তারা (নির্বাচন কমিশন) যখন এ কথা বলছে, তখন পেশিশক্তি গ্রুপ স্লোগান দিচ্ছে- ‘ইনু-শিরিন এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’, শিরিন পাস হয়ে গেছে।
বাদল বলেন, আমাদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান কথা বলার সুযোগ চেয়েছেন, তখন নির্বাচন কমিশন বলল, আপনি এখন কথা বলতে পারবেন না। নাজমুল হক প্রধান সভাপতি ইনুর কাছে কথা বলার সুযোগ চেয়ে বলেছেন, আপনি আমাকে কথা বলতে না দিলে আমি চলে যাবো। তারপরও আমাদের প্রাক্তন সভাপতি তাকিয়ে দেখেছেন, কিছুই বলেননি।
তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে সেখান থেকে ৫ শ’র মতো কাউন্সিলর আমাদের সঙ্গে সম্মেলনস্থল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। একপর্যায়ে তাদের (বেরিয়ে আসা কাউন্সিলর) আমরা কমিটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি।
সংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাদল জানান, আপাতত তাদের দলের কোনো নির্দিষ্ট অফিস নেই। জাসদের যে অফিসটি রয়েছে তা চারজনের নামে। এর মধ্যে একজন কাজী আরেফ আহমেদ মারা গেছেন। বাকি তিনজনের মধ্যে একজন হাসানুল হক ইনু। বাকি দুইজন আমাদের সঙ্গে আছে। এটা আইনি বিষয়, এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটির সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান ও দলটির একাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শনিবার কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আবারো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। কাউন্সিলস্থল থেকে সরে এসে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সদ্য সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে সভাপতি ও নাজমুল হক প্রধানকে সাধারণ সম্পাদক করে পৃথক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির নির্বাহী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল।
অপরদিকে শনিবার রাতে মহানগর নাট্যমঞ্চ সম্মেলনস্থল থেকে তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি নিজেকে পুনরায় সভাপতি ও সংসদ সদস্য শিরিন আখতারকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটির কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন