শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মিসরের অর্থনৈতিক সঙ্কট ধাক্কা দিয়েছে ধনীদেরও-২

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

(গত সংখ্যার পর)
ইনকিলাব ডেস্ক : মিসরের ৯ কোটি লোকের অতি ক্ষুদ্র অংশ সম্পদশালী। জাতিসংঘের হিসাব মতে, দেশের ২৬ শতাংশ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। এ দরিদ্ররা ক্রমবর্ধমান ভাবে দরিদ্র হয়ে পড়ছে। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান চাপটা বহন করছে বড় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। মিসরে জেনারেল মোটরসের একটি নির্মাণ কারখানা আছে, তবে তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় সম্প্রতি তাদের উৎপাদন সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। আইন করে লাভের অর্থ ফেরত আনতে বাধা সৃষ্টি করায় বিদেশী বিমান সংস্থাগুলো মিসরে তাদের ফ্লাইট কমিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। একবারের জন্য হলেও ব্রিটিশ এয়ারলাইনস মিসরীয় মুদ্রায় টিকেট বিক্রি বন্ধ করেছে।
মধ্য কায়রোর একটি দ্বীপ জামালেকে জেজিরা স্পোর্টিং ক্লাবে বিত্তশালী পিতামাতারা বলেন, তারা প্রাইভেট স্কুলগুলোতে তাদের সন্তানদের টিউশন ফি পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন, কারণ তা দিতে হয় ডলার বা ইউরোতে। আশরাফ ওমরান নামক এক ব্যবসায়ী বলেন, সিসি সমাজের উচ্চশ্রেণির কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। তিনি একটি ভালো গল্প দিয়েছেন, লোকজন তা বিশ^াস করতে চায়। কিন্তু আপনাকে তা অনুসরণ করা দরকার। আমরা তা দেখতে পাইনি।
প্রভাবশালী টিভি স্টেশনগুলোতে উত্তপ্ত বিতর্ক চলে। এগুলো এক সময় ছিল সিসির জোরালো সমর্থক, কিন্তু এখন তার সমালোচনা করে। অনটিভির ইউসেফ আল হোসেইনি গত সপ্তাহে ব্যাপক বিদ্রƒপের শিকার সিসির বক্তৃতার উল্লেখ করে বলেন, আমি এ সব বক্তৃতা ঘৃণা করি। তাকে এখন বিচ্ছিন্ন দেখা যায়, তাকে ক্রুদ্ধ দেখা যায়। তিনি মাত্র ২০ মাসের জন্য ক্ষমতায় রয়েছেন। তিনি খুব তাড়াতাড়িই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
হোসেইনি বলেন, অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও আরো কারণে প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি একজন টিভি ধর্মপ্রচারক, একজন ঔপন্যাসিক ও একজন কবিকে ধর্ম ও জন নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট অভিযোগে জেলে প্রেরণের ঘটনা মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিক হোসাম বাগহাট ও মানবাধিকার প্রবক্তা জামাল ইদসহ সরকারের সমালোচকদের দেশ ছাড়তে নিয়মিত ভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে।
ভাড়া নিয়ে তর্ক-বিতর্কে দু’সপ্তাহ আগে একজন পুলিশ এক ট্যাক্সি চালককে গুলি করে হত্যার পর উত্তেজিত জনতা গণবিক্ষোভ নিষেধের আইন অমান্য করে রাজপথে নেমে আসে। এখনো ধনী ও দরিদ্র বহু মিসরীয় সিসিকে ঐ অঞ্চলকে বিপন্ন করা অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ প্রাচীর হিসেবে দেখে। গত সপ্তাহে নীল নদের তীরে আমদানি করা ফ্যাশন সামগ্রী বিক্রি কালে হালা মাহমুদ নামের এক নারী প্রেসিডেন্টের সমর্থনে কথা বলেন। তিনি বলেন, লোকজন সিসিকে এমনভাবে আখ্যায়িত করছে যে তিনি ভুল কিছু করেছেন। কথা হচ্ছে, তিনি একজন সামরিক ব্যক্তি, আর আমরা বহু রকম সমস্যার সম্মুখীন।
বিলাস দ্রব্যের ঘাটতি বয়স্ক মিসরীয়দের ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে অর্থনৈতিক কঠোর বিধিনিষেধের অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কায়রোর একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বেলটোন ফিনান্সিয়াল নামক একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হ্রানি জেনেনা বলেন, আমরা এটা বুঝি। বহু বিদেশী মিসরকে মধ্য-মেয়াদী বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে দেখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী দু’বছরের জন্য এ কথা ¯্রফে ভুলে যান।
তরুণ মিসরীয়দের ধৈর্য কম। কায়রোর আমেরিকান বিশ^বিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ¯œাতক তরুণী নাদা এল হালাসানি বলেন, তার পরিবার সিসির পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু তা পিতা লোহিত সাগরের তীরে যে হোটেলটি চালান তা এখন খালি। পর্যটক নেই। আর তিনি নিজে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে চাকরি জন্য দরখাস্ত করছেন। তিনি বলেন, আমি দিগন্তে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছি না। সূত্র ঃ দি নিউইয়র্ক টাইমস। (শেষ)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন