আফজাল বারী : একই আদর্শে পৃথকভাবে গড়ে উঠা দেশের অন্তত ৩০টি সংগঠন বিএনপিতে অন্তর্ভুক্ত হতে চায়। দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল ঘিরে সংগঠনগুলো বিএনপির শীর্ষ নেতার কাছে নিজেদের প্রত্যাশা, আকাক্সক্ষার কথা জানিয়েছেন। ওই সকল সংগঠনের দুইতিনটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে নীতি নির্ধারকরা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে গঠনতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটির একাধিক সদস্য।
জানা গেছে, ওইসকল সংগঠনের কোন কোন সংগঠন একযুগের কোনটি নব্য। তারা বিএনপির সমর্থক সংগঠন হিসেবে কাজ করে আসছে। পরিস্থিতি বুঝে কখনো রাজপথে আবার কখনো চারদেয়ালের ভেতরে সৃষ্ট জাতীয় ও দলীয় ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন। দাবি-দাওয়াকে জোরালো করতে তারা ঐক্য পরিষদও গঠন করেছে। নাম দিয়েছে- ‘বিএনপির সহযোগী সংগঠন ঐক্য পরিষদ’। কোনটি আছে পরিষদের বাইরে।
দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল ঘিরে সংগঠনগুলো বিএনপির শীর্ষ নেতার কাছে নিজেদের প্রত্যাশা, আকাঙ্খার কথা জানিয়েছেন। আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং ত্যাগের পরীক্ষায় সংগঠনকে মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ। একইসাথে সংগঠনের প্রথম সারির তিনজনকে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটিতে জায়গা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। পরের স্থরের নেতাদেরকে মহানগর কমিটিতে অন্তর্ভক্ত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠকরা।
সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অবঃ) মোঃ হানিফের ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’, আবু নাসের মোঃ রহমতউল্লাহর ‘স্বাধীনতা ফোরাম’, লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ারের ‘জিয়া নাগরিক ফোরাম’ (জিনাফ), শরীফ হাফিজুর রহমান টিপুর ‘জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারা দল’, শরীফ মোস্তফা জামান লিটুর ‘জাতীয়তাবাদী বন্ধু দল’, মোঃ হানিফ বেপারীর ‘জাতীয়তাবাদী তৃণমূল দল’, হাজী মোঃ লিটনের ‘জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দল’, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের ‘জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’, এসএম সোহরাব হোসেনের ‘জাতীয়তাবাদী প্রত্যাগত প্রবাসি দল’, হুমায়ন কবির বেপারীর ‘জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল’, আব্দুর রহমান তপনের ‘জিয়া সেনা’, মোঃ আবুল হোসেনের ‘জিয়া ব্রিগেড’, রেজাউল কবির সিকদার রেজার ‘জাতীয়তাবাদী মানবাধিকার ফোরাম’, কাদের সিদ্দিকির ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, পীরজাদা ওমর ফারুকের ‘জাতীয়তাবাদী নাগরিক দল’, ফরিদা মনি শহিদুল্লার ‘অপরাজয় বাংলাদেশ’, এম এ হালিমের ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল’, মোঃ সাইফুল ইসলাম রাসেদের ‘জাতীয়তাবাদী সমাজ কল্যাণ দল’, মোঃ চান মিয়া চানের ‘দেশ নেত্রী পরিষদ’, মোঃ রবিউল হোসেন রবির ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদ’, এইচ,এম আল আমিনের ‘উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদ’, ইঞ্জিনিয়ার আসরাফ হোসেন বকুলের ‘অল কমিটি ফোরাম’, এসএম মোশাররফ হোসেন মিলনের ‘শহীদ জিয়া স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’, ডা. মোঃ গোলাম মোস্তফার ‘ধানের শীষ সমর্থক ফোরাম’। এছাড়াও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মুক্তি পরিষদসহ ৩০টি সংগঠন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংগঠকদের দাবি সম্বলিত আবেদনপত্রটি আমলে নিয়েছেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। ওই সব সংগঠনের প্রধানরা কে কোন পদে আছে তাও জানতে চেয়েছেন এবং তাদের বিষয়ে করণীয় জানতে দলীয় দফতর থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রতি মতামত দেয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। দফতর থেকে জানানো হয়েছে দলের দু:সময়ে সংগঠনগুলোর ভূমিকা প্রসংশনীয়। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সংগঠন ও সংগঠকদের পক্ষে ইতিবাচক মত দিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটিসহ দলের একাধিক সিনিয়র নেতা। সংগঠনগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখার মতো সহযোগিতা করতে বিএনপি। তবে সব সংগঠন দলের সহযোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার মতো নয়, আবার কিছু আছে সহযোগী হিসেবে নেয়া যায়-এই তালিকায় প্রথমে রয়েছে বিএনপির সাবেক মহাসচিব মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমানের কন্যা শ্যামা ওবায়েদের ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম নামের সংগঠন। এছাড়াও কর্মজীবী দল ও তৃণমূল দল নামের দুইটি সংগঠনকে সহযোগী করা যায় বলে সুপারিশ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। একই সাথে দক্ষ সংগঠকদের বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে রাখার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে।
গঠনতন্ত্র সংশোধনী উপ-কমিটির সুপারিশেও তা উল্লেখ রয়েছে। আগামী ১৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হবে। ইতোমধ্যে দলের প্রভাবশালী নেতাদের বাসা-বাড়ীতে ধর্না দিচ্ছে বিএনপির সমর্থক সংগঠনগুলো। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এক সময় শ্লোগান শুনতাম- যে শিশু মায়ের কোলে সেও একবার জেল পালায়। এখন চারিদিকে তাকিয়ে দেখি- যে শিশু মায়ের বুকে সেও একটা পদ খুঁজে। এটা দুঃখজনক। পদ ছাড়া কিছুই বুঝে না। বহুসংখ্যক সংগঠনের দুইতিনটি বাদে বাকী কিছু সংগঠনকে সমর্থক হিসেবে অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে ইনকিলাবকে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন