শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঝুঁকিতে রফতানি বাণিজ্য

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো বিমান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন। এ নিষেধাজ্ঞা রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এক অশনিসঙ্কেত। দ্রুত এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে রপ্তানি আয় চরম ঝুঁকিতে পড়বে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তৈরী পোশাক শিল্প ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, যুক্তরাজ্যে সরসরি কার্গো বিমান নিষেধাজ্ঞার ফলে পণ্য পাঠানোর ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। আগে যে খরচে পণ্য পাঠানো হতো, এখন আরো বেশি খরচে যুক্তরাজ্যের বাজারে পণ্য পাঠানে হবে। এতে করে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তিনি আরো বলেন, এই রকম যদি চলতে থাকে তাহলে ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি ডলারে যাওয়া তো দূরে থাক, বিদ্যমান বাজার ধরে রাখাই তো কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশী রফতানি পণ্যের প্রায় ৫৫ শতাংশেরও বেশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভুক্ত দেশ যায়। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানি হয় যুক্তরাজ্যে। আর বেশি রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরী পোশাক ও কৃষি পণ্য। রফতানি ব্যুরোর তথ্য মতে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। যা ওই সময়ের মোট পোশাক রপ্তানির ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই বাজারে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
রফতানি আয় আগের তুলনায় ভালো থকেলেও ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্তের কারণে শুধু ওই দেশের বাজারেই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশে এর প্রভাব পড়বে। ফলে ৫৫ শতাংশ রফতানি বাণিজ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাছাড়া অনতিবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া না হলে রফতানিতে অশনি সঙ্কেত দেখা দেবে এবং হুমকি ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে দেশের ভাবমর্যাদা। গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটি। গত ডিসেম্বরে একই কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা এখনও বলবত রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পর যুক্তরাজ্যও একই সিদ্ধান্ত নেয়ায় চরম উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করছেন, দেশটির এ ঘোষণা রফতানি বাণিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। কেননা যুক্তরাজ্য তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি বাজার।
এর আগে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রও নিরাপত্তার কারণে জিএসপি স্থগিত করে। তবে এটা দেশের নিরাপত্তা অবনতির কারণ দেখিয়ে নয়, তৈরী পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও শ্রমমানের কারণ দেখিয়ে। তখন তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, শ্রমমানের উন্নয়নের জন্য দেয়া শর্ত পূরণ করতে পারলে জিএসপি সুবিধা আবার ফিরে পাবে বাংলাদেশ। এই সম্পর্ক বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, ‘রোজ কেয়ামত’ পর্যন্ত চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ তাদের শর্তপূর্ণ করতে পারবে না। তাদের শর্তও শেষ হবে না।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান আরো জানিয়েছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য ইমেজের ব্যাপার। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো যদি অন্য দেশও একই পথে হাঁটে তাহলে তো রফতানি খাত স্থবির হয়ে যাবে। এজন্য আমরা সরকারের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি যাতে সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়।
এদিকে দেশের রফতানি সবজির একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যে যায়। অভিবাসী বাঙালির সংখ্যা বেশি হওয়া দেশটিতে সবজি ও ফল রফতানির পরিমাণ বেশি। তাই দেশটিতে কিছু তাজা তরিতরকারী ও ফলমূল সারা বছরই রফতানি হয়। কিছু তরিতরকারী ও ফলমূল রফতানি হয় বিভিন্ন মৌসুমে। সরাসরি কার্গো বিমান নিষিদ্ধ করায় যুক্তরাজ্যে সবজি রফতানি কমবে বলে মনে করছেন রফতানিকারকেরা।
রফতানিকারকদের তথ্য মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ১৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকার সবজি ও ফল রপ্তানি হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বা সাড়ে চারশ’ কোটি টাকার পণ্যই গেছে যুক্তরাজ্যে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ টন সবজি ও ফল উড়োজাহাজে করে দেশটিতে যায়।
জানা যায়, যেসব সবজি রফতানি হয় তার মধ্যে লাউ, কুমড়া, পটোল, বেগুন, ঢেঁড়স, আলু, পেঁপে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, কাঁচামরিচ, বরবটি, শিম, টমেটো, বিভিন্ন ধরনের শাক রয়েছে। আর রফতানি হওয়া ফলের তালিকায় আছে : কাঁঠাল, আম, লিচু, জলপাই, কলা, আনারস, পেয়ারা, পাকা পেঁপে।
বাংলাদেশ ফ্রুটস ও ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আকাশপথে পণ্য পাঠানোর সুযোগ না থাকলে রপ্তানিতে ধস নামবে। কারণ অন্য পণ্যের মতো পচনশীল পণ্য নৌপথে পাঠানোর সুযোগ নেই। স্ক্যানিং দুর্বলতা ও নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ বিমান ও দুবাই এয়ারের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের আগে অর্ডার করা পণ্যের ডেলিভারি দিতে যেসব বিমানের ট্রনজিট পয়েন্টে স্ক্যান বাধামুক্ত তাদের সাথে আলোচনা চলছে। এতে আমাদের ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন