আজিবুল হক পার্থ : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মহোৎসব চলছে। শুরু থেকে এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এখনো পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বরগুনা-২ আসনের এমপি হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমে বিপর্যয়ে পড়ছে। তৃণমূল পর্যায়ে ইসি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উপরন্তু ইসির বিরুদ্ধেই উঠছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। যদিও ইসি দাবি করছে, তারা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গোলযোগের খবর যেমন আসছে, তেমনি ইসিতেও প্রার্থীদের অভিযোগের স্তূপ জমছে। তদারকি কমিটি গঠন করেই দায় সাড়ছে ইসি। অবশ্য কমিশনের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তাদের হাতে নেই।
এবার নির্বাচনের তফসিলের আগেও নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন দু’জন। গত এক সপ্তাহে শুধু ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন তিনজন। ৭৩৩টি ইউপিতে ৪ মার্চ থেকে প্রচারণা শুরুর পর কমিশনে শতাধিক অভিযোগ এসেছে।
অন্যদিকে দুই এমপির বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো: সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের দুই এমপি বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে মামলা এবং পাবনা-২ আসনের খন্দকার আজিজুল হক আরজুর কাছে বক্তব্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দলীয়ভাবে ইউপি নির্বাচন নিয়ে অনেক এলাকায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। লিখিতভাবে ইসিতে কী অভিযোগ এলো, গোলযোগ-সংঘর্ষ কোথায় কোথায় হয়েছে তার কোনো তথ্য ইসি সংরক্ষণ করছে না। সঠিকভাবে মনিটরিং না করায় প্রকৃত চিত্রও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব সামসুল আলম বলেন, আমাদের কাজ ভাগ করা রয়েছে। সবাই নিজ নিজ কাজের বিষয়ে সচেতন। এ নিয়ে সমন্বয়হীনতা নেই। মাঠপর্যায়ে আচরণবিধি তদারকিতে নির্বাহী হাকিমের পাশাপাশি ভিজিলেন্স টিম ও কয়েকটি সমন্বয় কমিটি কাজ করবে। এতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে আশা করি।
এদিকে রোববার ইসির উপ-সচিব মো: সামসুল আলম বরগুনার এসপিকে মামলা দায়ের করার জন্য চিঠিটি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনী আচরণবিধির ৩১ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়েরের জন্য বলা হয়েছে। বিধি ৩১-এ বলা হয়েছেÑ কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে বিধিমালা লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদ- বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
নির্বাচন-পূর্ব সময় বলতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কালকে বোঝানো হয়।
এদিকে মামলা দায়েরের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ইসিকে তা অবহিত করতেও বরগুনার এসপিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমপি রিমন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনেও আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছিলেন। সে সময় তাকে শোকজ করলে কমিশনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।
এদিকে রোববার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মো: শাহ নেওয়াজ বলেছেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কেউ যেন কারো প্রতি চড়াও হতে না পারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সে নির্দেশনা দিয়েছি। যেকোনো অনিয়মের ক্ষেত্রে তারা যেন জিরো টলারেন্স দেখায়। এক্ষেত্রে তাদের কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। তাদের গাফিলতি যেন নির্বাচন নষ্ট না করে সে নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আগামী ২২ মার্চ প্রথম পর্যায়ের ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারাও প্রস্তুত। নির্বাচনে কিছু কিছু সংঘর্ষের অভিযোগ এসেছে। আচরণবিধি ভঙ্গকারী যে পর্যায়ের লোকই হোক না কেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। আমরা যেকোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করব না।
তিনি বলেন, কাউকে ছাড় না দেয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, যেকোনো পর্যায়ের লোকই হোক, আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সামান্য কিছু লোকের জন্য নির্বাচন যেন নষ্ট না হয়, তা দেখছি এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। তবে, অসংখ্য অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শাহ নেওয়াজ বলেন, কোন দল কতটুকু বিরক্ত হলো সেদিকে নজর রাখছি না। সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনিময়কারীর বিরুদ্ধেও আমরা মামলা করেছি। ভবিষ্যতে যেন করতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। আমরা দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে একটা সুন্দর নির্বাচন চাই। আশা করি, সবাই আমাদের সহযোগিতা করবে। যারা দায়িত্ববান তারা আরো বেশি সহযোগিতা করবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা বিভিন্ন পর্যায়ে আছেন, তারা একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করবেন। কেউ যদি কোনো প্রকার বাধার সৃষ্টি করেন বা আচরণবিধি লঙ্ঘনে সহযোগিতা করেন অবশ্যই কাউকে আমরা ছাড় দেব না। কেননা, নির্বাচনটা সাধারণ মানুষের অধিকার। সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন মানুষও চায়, আমরাও চাই। এ ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবো না।
শাহনেওয়াজ বলেন, সব নির্বাচনে সবার সহযোগিতা দরকার হয়। দলগুলো দ্বারা যেন কোনো অসুবিধার সৃষ্টি না হয়, সে সহযোগিতা চাই। কেউ যেন আচরণবিধি লঙ্ঘন না করে এবং এটাকে যেন সতর্কবাণী হিসেবে গ্রহণ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন