চলমান সহিংসতার মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বুথিডং শহর থেকে ১০ দিনে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মুসলিম মোহাম্মদ সোয়ে। বর্তমানে তিনি শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে বসে আল-জাজিরার প্রতিবেদককে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিুরতার কাহিনী তিনি শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা জানি রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান চিত্র সারা বিশ্ব দেখছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে কেউ চাপ দিচ্ছে না। নিশ্চিতভাবেই তারা আসলে কোনো সমাধান চায় না। চাইলে আমরা এরই মধ্যে এটা দেখতাম। কেন সারা বিশ্বের দেশগুলো তাদের (মিয়ানমার সরকার) চাপ দিচ্ছে না। বিশ্বের প্রতি আমার আর্তি হলো, সব মানুষই সমান, ধর্ম আমাদের আলাদা করে না। বৌদ্ধদের যেমন রক্ত-মাংস আছে, আমাদেরও তা-ই আছে। তাই তারা যদি মিয়ানমারে শান্তিতে ও অবাধে বসবাস করতে পারে, আমরা কেন পারব না। আমরা সবাই মানুষ, সবাই সমান হয়েই জন্ম নিই। সোয়ে বলেন, অন্য সব রোহিঙ্গার মতো আমিও বুথিডং পৌর এলাকার একজন কৃষক ছিলাম। আমাদের কাজের কিংবা শিক্ষার অধিকার নেই। তাই পুলিশ, সেনাবাহিনী কিংবা অন্য স্মার্ট দপ্তরে কাজের সুযোগ নেই আমাদের। আমাদের ক্ষেতে-খামারে কাজ করতে হয় কিংবা বাঁশ সংগ্রহের জন্য যেতে হয় বনে। এটা অনেকটা দিন এনে দিনে খেয়ে বেঁচে থাকা। কোনো স্বাধীনতা ছাড়াই আমরা বেঁচেছিলাম। এভাবেই চলছিল আমাদের প্রতিটি দিন। দুই সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধ লোকজন আমাদের গ্রামে এসে আমাদের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে এবং একের পর এক আমাদের ঘরগুলো আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিতে থাকে। আমার ভাইয়ের মুখের দিকে গুলি লাগে এবং সেখানেই সে মারা যায়। বাকিদের সেখান থেকে পালাতে হয়েছে। নতুবা আমাদেরও মরতে হবে। আমরা তখনো জানি না, কোথায় যাচ্ছি। টানা ১০ দিন হেঁটে অবশেষে আমরা অবশেষে সীমান্তে এসে পৌঁছালাম। আমার মা ৮০ বছরের বৃদ্ধ, ভুগছেন প্যারালাইসিস ও শ্বাসকষ্টে। তাই পুরো পথে তাঁকে বহন করে নিয়ে আসতে হয়েছে আমাকে। আমরা নৌকায় করে তিনটা নদী পাড়ি দিয়েছি। বাকিটা হেঁটে এসেছি। কখনো কখনো আমাদের সেনাবাহিনীর পাশ দিয়ে আসতে হয়েছে। তারা আমাদের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করত। আবার কখনো কখনো আমাদের বনে শুয়ে থাকতে হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের বন্য পশু ছিল। বুঝতেই পারছেন, বহু বিপদে আমাদের পড়তে হয়েছে। তবে কঠিন সংকল্প থেকে আমরা সামনের দিকে এগিয়েছি এবং সীমান্ত পাড়ি দিতে পেরেছি। এটা ভেবে অনেকটা স্বস্তি বোধ করছি। বাড়িতে ফিরলে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের মৃত্যু হতে পারে। আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন