রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সঙ্কটে মার্কেলের শরণার্থী ইস্যু

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আঞ্চলিক নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর শরণার্থী ইস্যুতে মের্কেল এখন সংকটের মুখে। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হওয়ার পর জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের উদার শরণার্থী নীতি এখন নতুন চাপের মুখে পড়েছে। এই নির্বাচনে মের্কেলের দলের পরাজয়কে বিপর্যয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
মের্কেলের খ্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (সিডিইউ) নির্বাচনে ভোটারদের ক্ষোভের মুখে পড়েছে। এরফলে রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনটি রাজ্যের দুইটিতে পরাজিত হয়েছে। এরমধ্যে সিডিইউ’র চিরাচরিত শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বাদেন ভুয়েটারবার্গের পরাজয় বিস্ময়কর বলেও অনেকে মনে করছে।
রক্ষণশীল সিডিইউ’র এই বেদনাদায়ক পরাজয়ের মধ্যদিয়ে দক্ষিণপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)’র উত্থান ঘটেছে। এই দলটি শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব পোষণ করে। দলটি জার্মানিতে শরণার্থী আগমন রোধে তাদের উপর পুলিশকে গুলি চালানোর আহ্বান জানিয়ে ইতিমধ্যে আলোড়ন তুলেছে।
২০১৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক ১১ লাখ শরণার্থী জার্মানিতে প্রবেশ করার পটভ’মিতে দেশটিতে এটাই সবচেয়ে বড় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দেয়ার মের্কেলে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে একটি গণভোট হিসেবে বিবেচনা হয়।
আঞ্চলিক এই নির্বাচন অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের চ্যান্সেলরশিপের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবেনা তবে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় বাডেন ভুয়েটারবার্গ ও রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেট রাজ্য এবং পূর্বের স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের এই আঞ্চলিক নির্বাচনকে আগামী ২০১৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে মের্কেলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বহুলপ্রচারিত বিল্ড সংবাদপত্র এই নির্বাচনকে মের্কেলের জন্য ‘একটি ভয়াবহ দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মের্কেল এখনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে শিগগিরই তার প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি শরণার্থী আগমনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে অস্বীকৃতি জানয়ে আসছেন সবসময়। বরং তিনি ইইউ’র ২৮ টি দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের ভাগ করে নেয়া এবং শরণার্থী ইস্যুতে একটি অভিন্ন ইউরোপীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতী।
শরণার্থী নীতি
তবে রোববারের নির্বাচনের ফলাফল তার বিরোধীদের হাতকে শক্তিশালী করবে। তার বাভারিয়ান মিত্র সিএসইউ’র ভেতরে সমালেচনাকে উস্কে দিতে পারে।
অনেকেই সিডিইউ’র এই খারাপ ফলাফলের কারণ হিসেব দেখছে দলটির দূর্বল শরণার্থী নীতিকে। সবাই এই নীতি গ্রহন করেনি। সিএসইউ প্রধান হর্স্ট সিওফের গতকাল দলের এক বৈঠকে একথা বলেছেন।
এই নির্বাচনের ফলে জার্মানির বাইরে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকে মের্কেলের একঘরে হয়ে পড়ারও ঝুঁকি রয়েছে। বৃহস্পতিবার এই বৈঠক শুরু হবে। বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারা শরণার্থী আগমন ¯্রােত থামাতে তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তি চ’ড়ান্ত করতে চাচ্ছেন।
শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য মের্কেল বলকান দেশগুলোর সমালোচনা করেছেন। বাভারিয়ান দৈনিক নুরেনবার্গার নাচরিচটেন পত্রিকা বলছে মের্কেল বলকান দেশগুলোর সমালোচনা করলেও তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকে তিনিই বেশী উপকৃত হচ্ছেন। পত্রিকাটি বলছে এই নির্বাচনের পর মের্কেলকে এখন তার শরণার্থী নীতি সম্পর্কে অবশ্যই আরো বেশি ব্যাখ্যা দিতে হবে।
কালো রোববার
জার্মানির সংবাদপত্রগুলো বলছে এই ফলাফল মের্কেলকে একটি সুষ্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। সিহোফের শরণার্থী নীতিতে পরিবর্তন আনার দাবী জানিয়ে বলছে আগের মতোই সবকিছু হবে এখন আর এটা বলা যাবেনা। ফ্রাংকফুটার আলজেমিন জেইটাগ বলছে জনগণ শরণাথী সম্পর্কে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। স্পাইগেল অনলাইন ‘নির্বাচনের ফলাফলকে সিডিইউ’র জন্য কালো রবিবার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা আরো বলছে,শরণার্থী নীতি নিয়ে বিরোধীদের বিরোধীতা সত্তেও মের্কেল প্রত্যাশা করেছিলেন যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর রাজ্য প্রধানমন্ত্রিত্বের পদগুলো তার দল পাবে। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি।
পত্রিকাটি বলছে মের্কেলকে এখন এই অভিযোগ নিয়ে থাকতে হবে যে শরণার্থী ইস্যুকে কেন্দ্র করে তিনিই কার্যতো কট্রর দক্ষিণপন্থী এএফডিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই নির্বাচনে এএফডি তিনটি রাজ্যের পার্লামেন্টেই আসন পেয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যে তারা ২৪ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রাইনল্যান্ড-পালাটিনেট রাজ্যে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় বৃহত্তম হয়েছে। এই নির্বাচনে মের্কেলের জোটের মিত্র সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অবস্থান দূর্বল হয়ে পড়েছে। সূত্র : এএফপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন