মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার বর্তমান আয়তন পাঁচ হাজার বর্গকিলেমিটার। হাতিয়া উপজেলা মূল ভূখন্ডের চতূর্দিকে সব মিলিয়ে শতাধিক চর রয়েছে। ইতিমধ্যে জেগে ওঠা চরের সংখ্যা ২০টি। আগামী এক দশকে অবশিষ্ট ডুবোচরগুলো পূর্ণতা লাভ করবে। হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত প্রাকৃতির অপরুপ লীলাভূমি নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পূর্বে দিকে বিশাল আয়তনের ভূমি জাগছে। উল্লেখ্য, হাতিয়া উপজেলার আয়তন ২১টি জেলার আয়তনের চাইতে বড়। বিশ্বের ১৪টি দেশের আয়তনের চাইতে বড় এবং সিঙ্গাপুরের আয়তনের তিনগুন বড়। হাতিয়া মূলভূখন্ড ছাড়াও এর চর্তূদিকে ছোটবড় মিলিয়ে বর্তমানে শতাধিক চর জেগে উঠছে। এগুলোর ১৫টিতে দেড় লক্ষাধিক অধিবাসীর বসবাস ছাড়াও কৃষিকাজ চলছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরো পাঁচটি চরে নতুন বসতি ও চাষাবাদ শুরু হবে । অপরদিকে হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে যে পরিমান ভূমি জাগছে তাতে করে আগামী দেড় দশকে আরো একটি জেলার আয়তনের সমান জাগে উঠার প্রহর গুনছে। হাতিয়া জাহাজমারা ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে মেঘনা বেষ্টিত নিঝুমদ্বীপ দেশ বিদেশের ভ্রমন বিলাসীদের দর্শনীয় স্থান। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কোন অঞ্চলের চাইতে সন্তোষজনক থাকার পাশাপাশি দেশ বিদেশে নিঝুমদ্বীপের সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়া নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বে মেঘনা বেষ্টিত চল্লিশ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দমার চরে বিশ সহ¯্রাধিক অধিবাসীর বসবাস। নিঝুমদ্বীপ ও দমার চরের মধ্যবর্তী এলাকাসহ দক্ষিণ ও পূর্বদিকে মেঘনার বুক চিরে বিশাল আয়তনের চর জাগছে।
জাহাজমারা ইউনিয়নের পশ্চিমে বিগত ষাটের দশকে মেঘনার বুক চিরে এক খন্ড ভূমি জেগে ওঠে। ১৯৬৫ সাল থেকে হাতিয়া মূলভূখন্ডের হাতেগোনা কিছু অধিবাসী শুস্ক মৌসুমে চাষাবাদ শুরু করে। তখন উক্ত চরের নাম ছিল বালুয়ার চর। পরবর্তীতে কমলার চর থেকে বর্তমানে এটি নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭০ দশকের ভয়াবহ জলোচ্ছাসে চরটির দুই শতাধিক কৃষক নিহত হয়। এরমধ্যে ভাগ্যক্রমে মাত্র একজন প্রাণে রক্ষা পান। মার্কিন স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত তথ্যের মাধ্যমে জলোচ্ছাসে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তৎকালীন সরকার অবহিত হয়। তখন থেকে চরটি নিয়ে দেশী বিদেশী মিডিয়ায় স্থান পায়। দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীকাল নিঝুমদ্বীপ পরিপূর্ণতা লাভ করে এখন দক্ষিণ ও পূর্বদিকে সাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শুস্ক মৌসুমে নদীতে জোয়ার কম থাকায় বিশাল এলাকায় ডুবোচর দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে সাগরে ইলিশ আহরনকারী জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, জাহাজমারা নিঝুমদ্বীপ চ্যানেল অতিক্রম করে দক্ষিনে অন্তত আশি কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রমকালে পানির গভীরতা কোথাও কোথাও ৫/৬ মিটার আবার কোথাও কোথাও ১০/১২ মিটারের এসেছে। অর্থাৎ দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে ক্রমান্বয়ে পলিমাটি ভরাট হচ্ছে। স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত ছবিতে দেখা গেছে নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্ব বিশাল অংশে সমুদ্রের তলদেশ ক্রমান্বয়ে পলিমাটিতে ভরাট হচ্ছে। আগামী এক দশকে বিশাল নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠার পাশাপাশি দেশ দশকের মধ্যে জনবসতি গড়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের সংঘটিত ঝড় জলোচ্ছাসের সময় গভীর সমুদ্র থেকে জোয়ারের সাথে কোটি কোটি টন পলিমাটি এখানকার নদ নদী ভরাট করে। এতে করে হাতিয়ার চর্তূদিকে কয়েকটি চর জেগে উঠে । এরমধ্যে দমারচর, ঠেঙ্গারচর, কালিরচর, বয়ার চর ও নলেরচর উল্লেখযোগ্য। জানা গেছে, মেঘনা বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার আয়তন দেশের ২১টি জেলার আয়তনের চাইতে বড়। অপরদিকে নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্বদিকে যেহারে চর জাগছে তাতে করে আগামী দেড় দশকে আরো একটি জেলার আয়তনের সমান আরো ভূমি জেগে উঠার উজ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়া আসনের এমপি আয়েশা ফেরদাউস ইনকিলাবকে জানান, নদীভাঙ্গা হাজার হাজার গৃহহীন পরিবার জেগে উঠা নতুন চরগুলোতে মাথা গোঁজানোর ঠাঁই পেয়েছে। দুইটি চর নিয়ে হরণী ও চানন্দী ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে । নলের চরের পূর্বাংশে স্বর্ণদ্বীপ এবং ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গা পূর্ণবাসনে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছে ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন