চট্টগ্রাম ব্যুরো : আঞ্চলিক সমুদ্র সম্পদ রক্ষা ও এর সদ্ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে চট্টগ্রামে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। গতকাল (সোমবার) নগরীর হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে নর্থ ইন্ডিয়ান ওশান হাইড্রোগ্রাফিক কমিশনের ষোড়শ আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে নৌবাহিনী প্রধান বলেন, আমরা এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। মেরিটাইম সেফটি ও ইনফরমেশনের জন্য এই ধরণের সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এতে বাংলাদেশও উপকৃত হবে। সমুদ্র সম্পদ আহরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনী অদূর ভবিষ্যতে দেশের ব্লু ইকোনমিতেও অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চল এবং সমুদ্রের প্রতিরক্ষা এবং সমুদ্রে যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলো রক্ষায় এই কনফারেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেরিটাইম সেফটি এবং নটিক্যাল ইনফরমেশনের জন্য এ কনফারেন্স অত্যন্ত ইতিবাচক অবদান রাখবে।
হাইড্রোগ্রাফিক কমিশনের চেয়ারম্যান ও সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (অপারেশন্স) রিয়ার এডমিরাল এম মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক ব্যুরোর পরিচালক মোস্তফা ইফতিজ। সম্মেলনে কমিশনের স্থায়ী সদস্য বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মিশর ও যুক্তরাজ্য ছাড়াও সহযোগী রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ওমান, সিসিলি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও দুটি পর্যবেক্ষক দেশ রাশিয়া ও সুদানসহ হাইড্র্রোগ্রাফি সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সমূহের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিগণ অংশ নিচ্ছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিদেশী কূটনৈতিকবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনী, বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
নর্থ ইন্ডিয়ান ওশান হাইড্র্রোগ্রাফিক কমিশন মূলত উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আন্তর্জাতিক হাইড্র্রোগ্রাফিক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী গঠিত একটি আঞ্চলিক কমিশন, যার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের প্রতিনিধিগণ হাইড্রোগ্রাফিক কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে ও এক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যসমূহ তুলে ধরেন। সেইসাথে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে হাইড্রোগ্রাফিক কার্যকমের পারস্পরিক সমন্বয় সাধন, কারিগরী সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ সহায়তার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, ড্রেজিং, স্থাপনা নির্মাণ, সমুদ্র পরিবশে পর্যবেক্ষণ, একুয়াকালার, খনিজ অনুসন্ধান, জ্বালানি, বায়োমেডিসিন এবং ওশানোগ্রাফিক গবেষণা কার্য পরিচালনার জন্য নেভিগেশনাল চার্ট এবং সহায়ক প্রকাশনাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের হাইড্রোগ্রাফি সক্ষমতা বর্তমানে সারাবিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত। বিশেষভাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রকাশিত হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ চার্ট ও প্রকাশনাসমূহ আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় তা সারা বিশ্বের নাবিকদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং সমুদ্রপথে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া বিশ্ব বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমার ইলেকট্রনিক নেভিগেশনাল চার্ট তৈর ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র এলাকায় বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়াও সমুদ্র সম্পদ আহরণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২০১৫-২০১৬ সালের জন্য উক্ত কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়। এর আগে বাংলাদেশ ২০১৪-২০১৫ সালে উক্ত কমিশনের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে প্রতিদিন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন