মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর তথাকথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ইসলামি জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত সোমবার প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-র এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার বছর আগে, শুরুতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ছোট আকারের প্রতিরোধ গড়ে তোলে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। স্থানীয়ভাবে হারাকাহ আল-ইয়াকিন বা ধর্মীয় আন্দোলন বলে পরিচিত এই আরসা। এরপর তারা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর দু’টি বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। এ বছরের ২৫ আগস্টের হামলারও আগে গত বছরের অক্টোবরেও বড় একটি হামলা চালায় তারা। রোহিঙ্গা ও রাখাইন জাতির মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে আরসা গঠিত হয়। ওই সময় কয়েকশ’ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগ ছিল মুসলমান। এরপর থেকেই অনেক রোহিঙ্গাকে তাদের গ্রাম ছাড়তে বাধা দেওয়া হয়। ওই সময় তরুণদের জন্য কোনও কাজের ব্যবস্থা ছিল না। মসজিদ ও মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেয় সেনাবাহিনী। পালিয়ে আসা আরসার সদস্যদের মতে, গত অক্টোবরে হামলার পর সেনাবাহিনীর বড় ধরনের অভিযান ছিল আরসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদলের সময়। এখন রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি রোহিঙ্গা গ্রামে আরসার অন্তত ১০ সদস্যের শাখা রয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়, অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া রোহিঙ্গা ছাড়াও সীমান্ত পেরিয়ে শিবিরে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। রোহিঙ্গাদের স্থানীয় সংগ্রামকে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কাজে লাগাতে পারে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। ব্যাংককভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফরটি রাইটস’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার এই ঝুঁকি নিয়ে আমরা গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা করছি। আমাদের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থামানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেটি করছে না। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির ও রাখাইনের অবরুদ্ধ গ্রামগুলোতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা মানবেতর পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর কর্মী সংগ্রহের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। গত সপ্তাহে কোনও কোনও আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করলেও এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার নয়। ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ইসলামি জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি কিভাবে গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলোকে জঙ্গিরা কুক্ষিগত করেছে। আইনি অধিকার না থাকা, কয়েক হাজার মানুষের বেপরোয়া ও বিপর্যস্ত মনোভাব, উগ্রবাদী আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা, সংঘর্ষে জড়িত পক্ষের শক্তির ভারসাম্যহীনতা ও ধর্মীয় দিক- সবমিলিয়ে সংকটটি উগ্রবাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন