বেলাল হোছাইন ভূঁইয়া, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) থেকে : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ইসলামবিরোধী কর্মকা- বন্ধের দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এলাকাবাসীর স্মারকলিপি দেয়া ও হিজবুত তৌহিদের মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে হিজবুত তাওহীদ ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে এই পর্যন্ত ৪ জন নিহত ও উভয়পক্ষের অন্তত শতাধিক লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পোরকরা গ্রামের নুরুল হক ও তার ছেলে সেলিম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে হিজবুত তৌহিদের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- করে আসছে। এমন অভিযোগে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করলে হিজবুত তৌহিদের লোকজন এলাকাবাসীর প্রতি চড়াও হয়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে চাষীরহাট ইউনিয়নসহ আশপাশের মসজিদের ইমামসহ এলাকাবাসী ইসলামবিরোধী কর্মকা- বন্ধ করার দাবীতে মিছিল নিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকারুজ্জামান এর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ নিয়ে চাষীরহাট বাজারে হিজবুত তাওহীদের সদস্যরা অতর্কিতভাবে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এলাকাবাসীর ওপর হামলা চালায়। এসময় তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মিজান, জহির, আলা উদ্দীন, রাকিব ও আলমসহ বেশ কয়েকজন আহত হলে এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। খরব পেয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উত্তেজিত জনতা তাকে আধা ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নির্বাহী অফিসারকে উদ্ধার করে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ৬ ঘন্টা ব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে উত্তেজিত গ্রামবাসী হিজবুত তাওহীদের সদস্য সোলেমান খোকন (৩৫) ইব্রাহীম রুবেল (৩০) আবদুস সোবহান (৬০) জবাই করে হত্যার পর আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলে। হিজবুত তাওহীদের পাল্টা হামলায় স্থানীয় খোদখাস্তা গ্রামের মৃত আজহার আলীর ছেলে মজিবুল হক (৫০) নিহত হয়। এছাড়া সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত শতাধিক লোক আহত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়। আহতদের সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও উত্তেজিত জনতা হিজবুত তাওহীদের বর্তমান আমির সেলিম মিয়া ও নরুল হক মেম্বারে বাড়ীতে আগুন দেয়। এসময় বাড়ীতে থাকা হিজবুত তৌহিদের কর্মীদের অন্তত ২০টি হুন্ডা পুড়িয়ে দেয়। এরপর এলাকাবাসী চাষীর বাজারে হিজবুত তৌহিদের সদস্য কামালের ইলেক্ট্রিক দোকানে ভাংচুর করে ও সড়ক অবরোধ করে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নোয়াখালী পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামানসহ অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও এখন পর্যন্ত (৬.০০ বিকাল) পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে। সোনাইমুড়ী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও স্থানীয় পোরকরা গ্রামের ইউনুস মাস্টার সাংবাদিকদের জানায়, ২০০৯ সালে হিজবুত তাওহীদের সদস্যরা গ্রামবাসীর উপর হামলা চালিয়ে কয়েকটি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। ঐ সময় থানা পুলিশ হিজবুত তাওহীদের সদস্য নারী-পুরুষ ২২ জনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে পুলিশ বোমা তৈরির গান পাউডার, চুরি, হাতমুজা, মুখোশ, নিষিদ্ধ বই ও লিফলেট উদ্ধার করে। বর্তমানে তারা জামিনে এসে পুনরায় এলাকায় রাত হলে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। যার কারণে এলাকাবাসী চরম আতংকে জীবনযাপন করছে। এ কর্মকা- প্রতিহত করতে স্থানীয় ইমাম ও মুসল্লীরা ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি দেয়ায় আবারো তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসীর উপর হামলা চালায়। এদিকে হিজবুত তৌহিদ নেতা ও পোরকরা গ্রামের নুরুল হক মেম্বার জানান, হেফাজতের লোকজন তার বাড়ীতে হামলা চালিয়েছে। সোনাইমুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী হানিফুল ইসলাম বলেন, হিজবুত তাওহীদ ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হিজবুত তওহীদের অন্তত ৫০ জন সদস্য পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন