সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অভিযানেও দস্যুবাহিনী নির্মূল হচ্ছে না

অপহরণ অব্যাহত অসহায় জেলে মাঝিমাল্লা

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

র‌্যাব কোষ্টগার্ড পুলিশ ও বনবিভাগের সাড়াষি অভিযানেও দস্যূবাহিনী নিমূর্ল হচ্ছে না। সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর উপকুলে বনদস্যুদের তান্ডব চলছে। বাঘা বাঘা বেশ কয়েকটি বাহিনী র‌্যাবের নিকট আত্মসম্পর্ন করেছে। কিন্তু সুন্দরবন জুড়ে নিত্য নতুন দস্যু আত্মপ্রকাশ করায় জেলে ও বনজীবীদের আতংক কাটছে না। গতকালও বনদস্যু ‘বড়ভাই ও সুমন’ বাহিনী পৃথক দুই এলাকা থেকে নগদ টাকা ও মালামালসহ অন্তত ১৫ জন জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। শরণখোলা উপজেলার আওতাধীন চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের শৌলা ও তাম্বুলবুনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ইলিশ মৌসুমের গত দু’মাসে সুন্দরবনের ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বাহিনী অর্ধ শতাধিক জেলেকে অপহরন করেছে। এ সময় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কয়েক হাজার জেলেরা ডাকাতকে কোটি কোটি টাকার মুক্তিপন দিয়েছে।
সূত্রমতে, প্রতিবছর ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এখন মৌসুম প্রায় শেষ। র‌্যাব, কোষ্টগার্ড, পুলিশ ও বন বিভাগের সাড়াশি অভিযানের মুখেও অপ্রতিরোধ্য দস্যু বাহিনী। বাহিনীগুলোর হাতে রয়েছে বিপুল পরিমান ভারি ও হালকা বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। গত দু’মাসে কয়েক শতাধিক ফিসিং টলারে গন ডাকাতি ও কয়েক শত জেলেকে মুক্তি পনের দাবিতে জিম্মি করেছে ডাকাতরা। এদিকে, গতকাল রাতে অপহৃতদের মধ্যে দুইজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের আ. জলিল মাতুব্বর (৩৫) ও তার ছোট ভাই ইলিয়াস মাতুব্বর (২৮)। অন্য জেলেদের বাড়ি শরণখোলা উপজেলা উত্তর রাজাপুর, দক্ষিণ রাজাপুর ও সোনাতলা গ্রামে।
গত এক পক্ষ কালের মধ্যে বঙ্গোপসাগর এলাকার কচিখালী থেকে ৪০-৪২ কি:মি: গভীরে বড়ভাই বাহিনী সহ অন্যান্য বাহিনী ২০-২৫টি ফিসিং ট্রলারে হামলা চালায়। তারা ইলিশ ডিজেল, জাল , তেল, চাল সহ ট্রলার থেকে ইঞ্জিন থেকে খুলে নেয়। ডাকাতরা প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল হাতিয়ে নেয়। জলদস্যুরা কমপক্ষে অর্ধশত জেলেকে জিম্মি করে জন প্রতি ১ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। খুলনা বাগেরহাট ও পিরোজপুরের জিম্মিকৃত জেলেদের স্বজনরা মুক্তি পনের টাকা দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে।
সূত্রমতে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগর। প্রতিনিয়ত লুন্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার মৎস্য সম্পদ। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের কয়েকশ’ নটিক্যাল মাইলের সমুদ্রসীমায় ৬০ হাজার ফিশিং ট্রলারের ৫ লক্ষাধিক মাঝি-মাল্লার কোন নিরাপত্তা নেই। ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও দেশীয় সাগর দস্যুদের অত্যাচার-নির্যাতন, লুন্ঠন, হত্যা, সাগর বক্ষে নিক্ষেপ, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদির কারণে জেলে ও মাঝি মাল্লারা আতংকিত ও উদ্বিগ্ন। দেশের মৎস্য সম্পদের খনি বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী সীমানায় নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ডের তৎপরতা ও টহল বৃদ্ধি ছাড়া এ দস্যুতা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সাগরদস্যুদের অত্যাচার ও তৎপরতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ গত তিনদিনে খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের জেলেদের মুক্তিপণের দাবীতে অপহরণ করা হয়েছে কমপক্ষে ২৫-৩০জন জেলেকে। ডাকাতি করা হয়েছে প্রায় ২০-২২টি ট্রলারে। ঘটনাটি ঘটেছে বঙ্গপসাগর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ফেয়ার বয়া এলাকায়।
টেকনাফ থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন দক্ষিণ তালপট্টী পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর এবং শাখা নদীগুলোতে ফিশিং ট্রলারগুলো সারাবছরই মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকে। প্রতিবছর এ ফিশিং ট্রলারগুলো প্রায় ১৫ লক্ষ টনেরও বেশী মাছ সাগর থেকে সংগ্রহ করে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানী করে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশের জন্যে অর্জন করে আনলেও তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় সমুদ্রে মৎস্য আহরণ এখন ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ফিশিং ট্রলারে গভীর সমুদ্রে ও সমুদ্র উপকুলে জেলেরা মাছ ধরতে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। গত ৫ বছরে সাগর দস্যুদের নিহত হয়েছে শতাধিক জেলে ও মাঝি মাল্লা। অপহৃত হয়েছে কয়েক হাজার জেলে। সাগরদস্যুরা মুক্তিপণ বাবদ আদায় করেছে কোটি কোটি টাকা।
সাগরজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাগরে এলাকাভিত্তিক সশস্ত্র দস্যু গ্রæপ ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি করে ইঞ্জিনসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। ট্রলার লুট শেষে শত শত মাঝি মাল্লাকে হাত-পা বেঁধে সাগরে নিক্ষেপ করা হয়। একমাত্র সাগর দস্যুদের নির্মম নিষ্ঠুরতার কারণে উপকুলীয় এলাকায় হাজার হাজার পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে। উপকুলের ঘরে ঘরে বাড়ছে আহাজারি, অভাব-অনটন। সাগর দস্যুরা ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি করে শুধু যে মাঝি-মাল্লাদের হত্যা করে তা নয়, বরং ডাকাতি করে ফিরে যাবার সময় মাঝে মধ্যে ট্রলারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এভাবে প্রতি বছরই শত শত ফিশিং ট্রলারের মালিক পুঁজিহীন হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সুত্র জানায়, পিরোজপুর, পাথরঘাটা, কলাপাড়া, চরদোয়ানী, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার, মহেশখালী, চকরিয়া ও কুতুবদিয়া এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, স›দ্বীপ, সীতাকুন্ড, মীরসরাই, হাতিয়া, ভোলাসহ উপকুলীয় নিæাঞ্চলের লোকের বৈধ ও অবৈধ ২০ সহস্রাধিক ফিশিং বোট সাগরে মাছ ধরে।
উল্লেখ্য, সোনাতলা গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ধানসাগর স্টেশনের শৌলা এলাকায় গত মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে বনদস্যু বড়ভাই বাহিনীর ১০-১২ জন সদস্য জেলে বহরে হানা দিয়ে জেলেদের মারধর শুরু করে। তারা ১৩ জন জেলেকে তুলে নিয়ে যায়। অপরদিকে, একই রাতে ওই স্টেশনের তাম্বুলবুনিয়া এলাকা থেকে বনদস্যু সুমন বাহিনী দুই জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা) অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে সুন্দরবনের কচিখালী, সুপতি, কোকিলমনিসহ তিন স্টেশনের কোস্ট গার্ড সদস্যদেরকে জেলে উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন