ঢাকের বাদ্য, নৃত্যগীত আর সিঁদুর খেলা শেষে আনন্দ-বেদনায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার শেষ হলো বাঙালি হিন্দু স¤প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পাঁচদিন বাবার বাড়ি বেড়িয়ে কৈলাসে দেবালয়ে স্বামী গৃহে ফিরে গেলেন দুর্গতিনাশিনী দেবী। ভক্তরা সজল চোখে বিদায় দিয়েছেন দেবী দুর্গাকে।
গতকাল দুপুরের পর থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ থেকে দূর্গা প্রতিমাকে রাজধানীর ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেয়া হয়েছে দেবী দুর্গার প্রতিমা বুড়িগঙ্গার বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন ঘাটে নেয়া শুরু হয়। পুরোহিতদের মন্ত্র পাঠ শেষে নদীর জলে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া শুরু হয়। এ সময় হাজার হাজার ভক্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় তাকে বিদায় জানিয়ে আবারও পরের বছর তার ফেরার অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু করেছেন। মহাদশমীর দিন শনিবার বিকালে বিসর্জন দেয়া হয় প্রতিমা। গত মঙ্গলবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের তথ্য মতে, এবার দেশে মোট ৩০ হাজার ৭৭টি পূজামন্ডপে দুর্গা পূজা উদযাপন হয়। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ছিল ২৩১টি। গত বছর সারা দেশে ২৯ হাজার ৩০০টি মন্ডপে হয় দুর্গাপূজা। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয় এবারের দুর্গাপূজা। দুর্গা পূজা নির্বিঘœ করতে প্রশাসন নিয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মহাষষ্ঠীতে বোধনের পর মহাসপ্তমী, কুমারীপূজা, মহানবমী পেরিয়ে মহাদশমীতে শেষ হলো দুর্গাপূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা।
গতকাল দেবি দুর্গাকে বিদায় দিতে রাজধানীর বেশির ভাগ পূজামন্ডপের প্রতিমা ট্রাকে করে নেয়া হয় ঢাকেশ্বরীতে। ঢাকেশ্বরীমুখী ট্রাকের লাইন ঢাকা কলেজের সামনে পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।
প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। প্রতিমা বহনকারী ট্রাক ঢাকেশ্বরী থেকে ওয়াইজঘাটে যাওয়ার পথে বেলা আড়াইটা থেকে সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
বেলা তিনটায় প্রতিমাবহর যাত্রা শুরু করে। পলাশী বাজার থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার দিয়ে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে গিয়ে শেষ হয় এর যাত্রা। এরপর চোখের জলে মা দুর্গাকে বিদায় জানান হিন্দুস¤প্রদায়ের মানুষ।
শুভ বিজয়ায় সকাল থেকেই ঢাক আর শঙ্খধ্বনিতে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে চলে পূজোর রীতিনীতি পালনের কাজ। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে দেবীর দশমী পূজা সমাপ্তি ও দর্পণ বিসর্জন হয়।
বিকালে বিভিন্ন মন্দির থেকে ভক্তদের শোভাযাত্রায় দেবীকে বুড়িগঙ্গা নদীতে নিয়ে আসা হয়। ভক্তরা আবির, ধান, দুর্বা, মিষ্টি দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেন। ঢাকার বিভিন্ন মন্দিরের ২০১টি প্রতিমা বিভিন্ন সময়ে বিসর্জন দেয়ার মাধ্যমে দশমী পূজোর আয়োজন শেষ হয়।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণের আহŸানে দেবী ৪ দিনের জন্য পিতৃগৃহে আসেন। গতকাল বিসর্জনের মাধ্যমে পিতৃগৃহ পৃথিবী ছেড়ে দেবী মা দূর্গা আবারো স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন। এক বছর পর আবারো কল্যানের ডাকে দেবী মা পিতৃগৃহ পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
প্রতিমাকে বিদায় জানাতে স্বামীসহ নারায়নগঞ্জ থেকে বুড়িগঙ্গার ঘাটে এসেছিলেন কুমারী দেবী। এ সময় কান্নাভেজা কন্ঠে তিনি বলেন, প্রতি বছরে মা দূর্গা মাত্র একবারই এই পৃথিবীতে আসেন। সারাবছর মাকে পাওয়া সম্ভব না। তাই যে কটা দিন তিনি এই পৃথিবীতে থাকেন তার পূজো অর্চনার মধ্য দিয়ে ভক্তি দেখাই।
সুমনা বলেন, মা আমাদের দেবী। আমরা মাকে ভালবাসি। বছরে একবারই মা আসেন। আবারো মায়ের আসার অপেক্ষা করে থাকব।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। বিজয়ার অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য দেশের সরকারী ও বেসরকারী সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলই ব্যস্ত ছিল। রাজধানীর মন্দিরগুলো ছিল আলোকসজ্জিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন