শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উপকূলীয় এলাকায় সচল হলো না সি-ট্রাক

প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : ঝড়ঝঞ্ঝা মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় দেশের উপকূলীয় এলাকায় এক ইঞ্জিন ও একক স্তরের তলাবিশিষ্ট যাত্রীবাহী নৌযানসমূহ চলাচলে বিধিনিষেধ বলবত করা হলেও রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি’র নিরাপদ সি-ট্রাক সার্ভিস পুনর্বহাল হয়নি। গতকাল পর্যন্ত সংস্থাটির ১৩টি সি-ট্রাকের মধ্যে ১০টিই বন্ধ ছিল। তবে আজকের মধ্যে বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে অন্তত ১টি সি-ট্রাক যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
গত ১৬ অক্টোবর শান্ত মৌসুম শুরু হওয়ার প্রাক্কালে সংস্থাটির কারিগরি ও বাণিজ্য পরিদপ্তরের কতিপয় কর্মীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুর রুটে দুটি সি-ট্রাকের চলাচল বন্ধ করে দেয় ইজারাদার। অপরদিকে কারিগরি ত্রুটির কারণে গত প্রায় দু’মাস ধরে ভোলার মূল ভূখ- থেকে সাগরবক্ষের বিচ্ছিন্ন উপজেলা সদর মনপুরার একমাত্র নিরাপদ সি-ট্রাক সার্ভিসটিও বন্ধ হয়ে আছে। ইজারাদারের অভাবে গত দু’বছরাধিককাল ধরে ভোলার মির্জাকালু থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডারের নিরাপদ নৌ যোগাযোগও বন্ধ। এ রুটের জন্য বিআইডব্লিউটিসি কোনো ইজারাদার নিয়োগের চেষ্টাও এখন করছে না। এমনকি সংস্থাটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এ রুটে সি-ট্রাকে যাত্রী পরিবহনে উদ্যোগী নয়।
অথচ দেশের উপকূলীয় এলাকার জনগণের নিরাপদ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সরকার ‘গণ দায়বদ্ধ সেবা খাত’ হিসেবে চিহ্নিত করে এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতি বছর নগদ ভর্তুকিও প্রদান করে আসছে। উপরন্তু ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিন দফায় ১২টি নতুন সি-ট্রাক সংগ্রহে সরকার অর্থের যোগান দিয়েছে। কিন্তু সংস্থাটি এক্ষেত্রে কতিপয় ইজারাদারের কাছে জিম্মি করেছে উপকূলীয় জনগণকে। ইজারাদারের ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই এখন উপকূলীয় এলকায় সি-ট্রাকের চলাচল নির্ভরশীল বলে অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল ১৫ মার্চ থেকে ভাটি মেঘনা থেকে সাগর মোহনা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর ‘অশান্ত মৌসুম’ হিসেবে ঘোষণা করে এলাকাটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভোলার ইলিশা থেকে দক্ষিণে সাগর মোহনা পর্যন্ত এলাকায় এক ইঞ্জিন ও একক স্তরের তলাবিশিষ্ট সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সরকারি বিধান অনুযায়ী এসময়কালে উপকূলীয় এলাকায় দুই ইঞ্জিন ও ডবল বটমের নৌযানে যাত্রী পরিবহন করতে হবে। এতদিন বেসরকারি সেক্টরে এ ধরনের কোনো নৌযান না থাকায় ১৫ মার্চ থেকে বেসরকারি নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখা হতো। আর এ সুবাদে বিআইডব্লিউটিসি’র সি-ট্রাকের ইজারাদারগণ একচেটিয়া ব্যবসা করতেন। এমনকি ১৬ অক্টোবর শান্ত মৌসুম শুরু হলে নানা অজুহাতে সংস্থাটির সি-ট্রাকসমূহ বিকল হতো। আবার ১৫ মার্চ তা সচলও হতো।
তবে গতবছর বেসরকারি সেক্টরে ‘এমভি পারিজাত’ নামের একটি অত্যাধুনিক ও নির্ভরযোগ্য উপকূলীয় নৌযান বেসরকারি সেক্টরে চালু হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত নকশায় নির্মিত ঐ নৌযানটি বন্ধে বিআইডব্লিউটিসি’র ইজারাদার ৪ দফায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করলেও তার সবগুলোই খারিজ হয়ে গেছে।
কিন্তু সংস্থাটির ইজারাদার বেসরকারি সেক্টরের নৌযান বন্ধে যথেষ্ট তৎপর হলেও ইজারা নেয়া নৌযান সারা বছর সচল রাখার ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়। গত বছর ২০ অক্টোবরই নানা অজুহাতে বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটের ‘এসটি খিজির-৮’এর চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পরে নৌযানটি সংস্থার ডকইয়ার্ডে নিয়ে মেরামত শেষ করে গত ১০ মার্চ বরিশালে পৌঁছালেও গতকাল পর্যন্ত তা সচল হয়নি। গতকাল সকালে নৌযানটি লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশে বরিশাল বন্দর ত্যাগ করার কথা থাকলেও মূল ইঞ্জিনের ‘ফ্রেস ওয়াটার পাম্প’ অকার্যকর হয়ে পড়ায় তার যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
অপরদিকে ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট রুটের সি-ট্রাক ‘এসটি খিজির-৭’-এর চলাচলও গত বছর মধ্য অক্টোবরে বন্ধ হওয়ার পরে নৌযানটি সংস্থার ডকইয়ার্ডে পাঠান হয়। কিন্তু তার মেরামতে হাতই দেয়া হয়নি। ঐ নৌযানটির পরিবর্তে ‘এসটি-খিজির-৫’ নামের অপর একটি সি-ট্রাক ভোলায় পাঠানো কথা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত তার মেরামত সম্পন্ন হয়নি। ফলে গতকাল থেকে শুরু হওয়া অশান্ত মৌসুমে বরিশাল-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে সরকারী কোনো নিরাপদ নৌযান যাত্রী পরিবহন শুরু করেনি।
অপরদিকে ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার সাথে নিরাপদ নৌযোগাযোগ বন্ধ গত দু মাসাধীককাল যাবত। একমাত্র সি-ট্রাক ‘এসটি শেখ কামাল’এর মূল ইঞ্জিন বিকল থাকায় ঐ রুটে নিরাপদ যাত্রী পরিবহন বন্ধ। গত দু মাসেও রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানটি ঐ সি-ট্রাকটির মেরামত সম্পন্ন বা সেখানে অন্য কোন নৌযান মোতায়েন করতে পারিনি।
এসব ব্যাপারে গতকাল বিআইডব্লিউটিসি’র জিএমের (বাণিজ্য) সাথে আলাপ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন