বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুলনার শিল্পাঞ্চল আবারও অস্থির

প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশোধসহ ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে খুলনাঞ্চলের ৭ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ গোটা পাটকল সেক্টর আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কঠোর আন্দোলনের ডাকসহ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছে শ্রমিকরা। এছাড়া বকেয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, মিলের উপর প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, আবারো দৈনিক মজুরি কম হওয়া এবং বন্ধ মিল-কলকারখানা সত্বর চালু না হওয়ায় খুলনার শিল্পাঞ্চলে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে। বিভিন্ন জুট মিলের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, যেকোন মুহূর্তে দাবি আদায়ের ব্যাপারে আন্দোলনের নয়া কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবরোধ চলায় খুলনা-যশোর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই সময় তারা রেলপথও অবরোধ করে। ১৭ মার্চের মধ্যে দাবী মানা না হলে আগামী ১৮ মার্চ জনসভার মাধ্যমে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করার হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, ৬টি পণ্যের মোড়কীকরণে পাটজাত দ্রব্য বাধ্যতামূলক করলেও সরকারি মিলগুলোতে উৎপাদিত এক কোটিরও বেশি বস্তা অবিক্রীত থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের ২ মাসের মজুরী বকেয়া পড়েছে। সরকার সঠিক সময় কাঁচাপাট কেনার জন্য বরাদ্দ না দেওয়ায় অর্থের সংকটে সরকারি পাটকলগুলোর উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এতে শ্রমিক-কর্মচারীর পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্ব স্ব মিলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের ডাকে সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দিঘলিয়ার ষ্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইষ্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই, কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৯ টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মিলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়। পরে বিক্ষোভ করে সমাবেশ কর্মসূচী সফল করে শ্রমিকরা। খালিশপুরস্থ ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক ক্লাবের সামনে সকাল ১০টায় শ্রমিক সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিবিএ’র সভাপতি মোঃ দ্বীন ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদ খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহরাব হোসেন, সাবেক সভাপতি একেএম বাহার উদ্দীন, মোঃ মোল্লা আঃ রশিদ, ইউনুস হাওলাদার, চান মিয়া সেলিম, মোঃ বাচ্চু মিয়া, আবু হানিফ, রুহুল কুদ্দুস রিপন, হামিদ ফরুক, ইসমাইল হোসেন। এছাড়া প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিল, দিঘলিয়ার ষ্টার জুট মিল, আটরা শিল্পাঞ্চল এলাকার আলীম জুট মিল, ইষ্টার্ন জুট মিল, জেজেআই জুট মিল, কার্পেটিং জুট মিলে পৃথক পৃথক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে ৫ দফা বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
সূত্র বলছে, দিঘলিয়ার ষ্টার জুটমিল খালিশপুরের ক্রিসেন্ট এবং প্লাটিনাম জুট মিল চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বেসরকারি খাতে লিজ দেয়া পিপলস জুট মিলটিরও একই অবস্থা। এই মিলটিতে শ্রমিক হয়রানী, নির্যাতন ও মজুরী কম দেয়ার অভিযোগ তুলেছে শ্রমিক পক্ষ। উত্তেজনা চলছে এজাক্স জুট মিলেও। সপ্তাহের মজুরী দিতে এখানেও দেরি হচ্ছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে মিলটি বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে বলেই ধারণা করছেন মিলটির মালিক পক্ষ। খানজাহান আলী থানা এলাকার আলীম জুট মিল চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। পাট কেনার টাকা না থাকায় প্রায়ই মিলটি বন্ধ রাখা হচ্ছে। মিল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা দৈনিক হাজিরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খালিশপুর, দৌলতপুর এবং খানজাহান আলী এলাকার সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে খুলনা এসে প্রথমেই বলেছিলেন আর কোন মিল-কারখানা বন্ধ নয়। এবার বন্ধ মিল-কারখানাও চালু করা হবে। সে কথা গত ৭ বছরে বাস্তবে কোন কাজে আসেনি। এরপর সাবেক পাটমন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়াকে নিয়ে তিনি ফের খুলনায় আসেন বন্ধ মিলগুলো কিভাবে চালু করা যায় তার উপায় খুঁজতে। সরকারের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী একযোগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তারা এখানে এসেছেন। বন্ধ মিল চালু করার ব্যাপারে তিন মন্ত্রীর আশ্বাস খুলনাবাসীকে শুধু কষ্টই দিয়েছে। যে কারণে কর্তৃপক্ষ সজাগ না হলে যেকোন মুহূর্তে শিল্পাঞ্চল অতীতের মত অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন