চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাংলাদেশ-ভারত কোস্টাল শিপিং চুক্তির আওতায় গতকাল (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথম পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ‘এমভি হারবার-১’ নামে দেশীয় জাহাজটি বন্দর থেকে দেড়শ’ একক খালি কন্টেইনার নিয়ে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর কৃষ্ণপাটনাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবে। জাহাজটি সেখানে ২২ মার্চ পৌঁছানোর কথা রয়েছে। গত নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে নৌ প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরের পর এটাই প্রথম পণ্য চালানবাহী জাহাজ। এর আগে চুক্তির বাইরে বাণিজ্যিকভাবে ‘এমভি রোদেলা’ জাহাজ চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে পণ্য পরিবহন করেছিল। তবে মাত্রাতিরিক্ত পরিচালন ব্যয়ের কারণে কিছুদিন পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়।
গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ ইয়ার্ডে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে কন্টেইনার জাহাজ ‘এমভি হারবার-১’ এর উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য নুর-ই-আলম চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম চৌধুরী, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায়, চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি রাকেশ রমন। আরও বক্তব্য রাখেন ভারতের কৃষ্ণপাটনাম বন্দরের প্রতিনিধি রবিরাম প্রসাদ, জাহাজটি পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান নিপা পরিবহনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুর রহমান। ‘এমভি হারবার-১’ জাহাজটি চট্টগ্রামের শিপ বিল্ডিং প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন ইয়ার্ডে নির্মিত। এ রুটে জাহাজটি পরিচালনা করছে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুর-ই-আলম চৌধুরীর পারিবারিক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নিপা পরিবহন লিমিটেড।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় কোস্টাল শিপিংসহ তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির আওতায় প্রথম পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করছে। নৌমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। এর ৪০ বছর পর আজ একটি চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হলো। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও মজবুত হলো। চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বন্দরে অটোমেশন, স্ক্যানার স্থাপনসহ চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় বলেন, এক সময় পণ্য ও যাত্রী সমুদ্রপথেই পরিবহন হতো। বর্তমানে যাত্রীরা বিভিন্ন পথে যাতায়াত করলেও জাহাজে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। এটি কোস্টাল শিপ চলাচলের ক্ষেত্রে দুই দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, স্থল বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু জাহাজে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এ সমস্যা হয়না। এতে স্থল পথে পণ্য পরিবহনের চাপ কমবে।
চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি রাকেশ রমন বলেন, কোস্টাল শিপ চলাচলের মধ্য দিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ বলেন, আমদানি-রফতানির সিংহভাগ পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়। তিনি বলেন, মুম্বাই, কলম্বো বন্দরের পর চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ৩ নম্বরে রয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কৃষ্ণপাটনাম বন্দরের দূরত্ব ২ হাজার কি.মি.। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কোস্টাল শিপিং চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন