স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ১৭ ও ১৮ মার্চ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল (মঙ্গলবার) দলটির দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
১৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। একই দিন সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।
এ ছাড়া সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল টুঙ্গীপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এরপর বাদ জোহর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবেন। এ ছাড়াও শিশু সমাবেশ, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মাঝে সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আব্দুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।
১৮ মার্চ (শুক্রবার) বেলা ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে দলটি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৭ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনের এক আনন্দের দিন। এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সাহেরা খাতুনের কোলজুড়ে বাঙালির বহু শতাব্দীর পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে শান্তি ও মুক্তির বারতা নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গীপাড়ার শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল টুঙ্গীপাড়া গ্রামেই কাটে। টুঙ্গীপাড়া প্রথমে কোটালীপাড়া ও পরে গোপালগঞ্জ থানার অন্তর্গত ছিল। মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং হাওড়-বাঁওরের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে টুঙ্গীপাড়া গ্রামটি অবস্থিত। স্বাধীনতা লাভের পর টুঙ্গীপাড়াকে পৃথক থানা ঘোষণা করা হয়।
টুঙ্গীপাড়া গ্রামেই শেখ মুজিবুর রহমান ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা শস্য-শ্যামলা রূপসী বাংলাকে দেখেছেন। তিনি আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত ও বর্ধিত হয়েছেন। তিনি শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজজীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা পীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার। আর পাড়া-প্রতিবেশী দরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাকে সারাজীবন সাধারণ দুঃখী মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় সিক্ত করে তোলে। বস্তুত সমাজ ও পরিবেশ তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোনো শক্তির কাছে, সে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পণ করেননি; মাথানত করেননি।
চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা শেখ সাহেরা খাতুনের তৃতীয় সন্তান। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সময় তিনি চোখের দুরারোগ্য বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে কলকাতায় তার চোখের অপারেশন করা হয়। এই সময়ে কয়েক বছর তার পড়াশোনা বন্ধ থাকে।
শিশু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশবের কোনো চাওয়াই পিতা-মাতা অপূর্ণ রাখনেনি। গ্রামের অনেক গরিব অসহায় পরিবারগুলোকে নিজের বাড়ির ধান দিয়ে, টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে গরিব বন্ধুদের স্কুলে আসতে দেখে তিনি নিজের ছাতা দিয়ে দিতেন। বই কেনার অভাবে অনেক বন্ধু যখন পড়াশোনা করতে পারতেন না, তখন নিজের বাড়ির ধান বিক্রি করে ঐ সব বন্ধুকে বই কিনে দিতেন। শৈশবকাল থেকে গ্রামের মানুষের দুঃখে শেখ মুজিব কাঁদতেন এবং গরিব অসহায় মানুষদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন।
গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে পড়াকালীন সময়ে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এলে কিশোর শেখ মুজিব তার পথ আগলিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ সংস্কার ও ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার হোস্টেল কত দিনের মধ্যে নির্মাণ করা হবে’। শৈশব থেকেই শেখ মুজিব ছিলেন মানবিক গুণে গুণাবলি, সাহসী ও দানশীল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ জাতির পিতা শেখ মুজিব রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণের পর শিশুদের কোমল মনোবৃত্তি বিকাশের জন্য বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে শিশু পার্ক নির্মাণসহ অনেক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শিশুদের প্রতি চরম মমত্ববোধের জায়গা থেকে এবং ‘আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ’ এই নীতিকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কার্যকরী ভূমিকার কারণে বাংলার জনগণ ১৭ মার্চকে জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সুখ্যাত বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই সময়ে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময়ে তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। যার জন্য জীবনে তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া কোনোকিছুই পরোয়া করেননি। শত যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট-বেদনাকে তিনি সহ্য করেছেন। ফাঁসির মঞ্চও যার কাছে ছিল তুচ্ছÑ তিনি হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এক কথায় বলতে গেলে বাংলা, বাঙালি, শেখ মুজিব একবৃন্তে তিনটি চেতনার ফুল। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মাঝে বঙ্গবন্ধু চিরদিন অম্লান থাকবেন। তদ্রƒপ বাংলার শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত-মেহনতি জনতার হৃদয়ে চিরভাস্বর থাকবেন।
প্রতিবারের ন্যায় সমগ্র জাতির সাথে এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ ও পালন করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন