(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
উত্তর আধুনিক তত্ত¡ অনুযায়ী মার্কসবাদ বা ক্রিয়াবাদের মতো ম্যাক্রো বা সামষ্টিক পর্যায়ের তত্ত¡ বা বিশাল বিবরণ, শুধু ভ্রান্ত নয়; বরং তা অর্থহীন বলে ও অনেক সমাজবিজ্ঞানী মন্তব্য করেন। ইসলাম ধর্মে ব্যাক্তি (গরপৎড়) ও সমষ্টি (গধপৎড়) উভয়ের উপরই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ের প্রচেষ্টা সামষ্টিক পর্যায়ে কল্যাণ ও মানবতাকে নিশ্চত করবে। প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (১৯৬৪-১৯২০) বলেছেন, ঈশ্বরের অবস্থান সীমিত মনের ধারণা ও প্রাপ্তির অনেক উর্ধ্বে। মানুষের কর্তব্যকে ওয়েবার ঈশ্বরের মহত্ত¡কে সুপ্রকাশ করার জন্য পরিশ্রম এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজত্ব স্থাপনে সহায়তা করার উপকরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
খ্রিষ্টান ক্যাথলিক ধর্মপ্রবক্তাগণ চিরকুমার থাকেন বলে প্রাবৃত্তিক পাপে তারা জড়িত। হয়ে পড়তে পারেন এবং এই চিরকুমার থাকার বিষয়টি মানবস্বভাবের স্বাভাবিকতার বিরোধী। লাপাউজ বলেন: ইসলাম ধর্ম অবশ্য এ ব্যাপারে ক্যাথলিকদের চাইতে বেশি উদারনীতি পোষণ করেন। ডুর্খেইমের মতে, ধর্ম হলো পবিত্র জগৎ সম্পর্কিত বিশ্বাস এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আচারিক প্রথা। "টহরভরবফ ংুংঃবসং ড়ভ নবষরবভং, ধহফ ঢ়ৎধপঃরপবং ৎবষধঃরাব ঃড় ংধপবফ ঃযরহমং ঃযধঃ রং ংধু, ঃযরহমং ংবঃ ধঢ়ধৎঃ ্ ভড়ৎনরফফবহ" নৃবিজ্ঞানী টেলারের মতে, ধর্মের গোড়ার কথা হলো আত্মার উপর বিশ্বাস। দার্শনিক এরিষ্টটল, প্ল্যাটো, সক্রেটিস প্রমুখ দার্শনিকরা আত্মার অমরতায় বিশ্বাস করতেন। অমর মানবাত্মাকে পাপমুক্ত রেখে আল্লাহর প্রেমে নিবদ্ধ থেকে এবং রাসূল স. কে ভালোবেসে ও অনুসরণ করে সুফিসাধকরা পৃথিবীতে চিত্তশুদ্ধতায় এক মহান বাতাবরন করেছেন। মানব সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষ মানুষের প্রতি মমত্বপ্রবণ হয়ে ক্ষুধার্তকে অন্ন দেবে, রুগ্ন ব্যক্তিকে সেবা করবে এবং বন্দি ব্যক্তিকে মুক্ত করে দেবে। এই বিষয়ে মুহাম্মদ স. এর একটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন: বন্দিকে মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান কর এবং রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখাশুনা কর। মানুষ যেহেতু সৃষ্টির সেরা জীব। সেজন্য কষ্টের সময়ে তার নিজের মৃত্যু কামনা না করে বরং তার উচিত তার কল্যাণকর সৎ দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতিচেতনার মাধ্যেেম নিজেকে উৎকৃষ্ট মানবে রূপান্তরিত করা। এ বিষয়ে মহানবী স. এর বাণী উল্লেখযোগ্য: তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ, সে নেককার হলে হয়তো অধিক নেকী অর্জন করবে এবং বদকার হলে সম্ভবত তওবা করে আল্লাহর সন্তোষ লাভে সমর্থ হবে।
বিশ্ব সংস্কৃতির মহান নির্মাতা মুহাম্মদ স. যে কোন ধর্মের মানুষকেই উচ্চমূল্য দিতেন। এমনকি মৃত ইহুদিকে ও তিনি মানুষ হিসেবে উচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেছেন। এই প্রসঙ্গে একটি হাদীস উল্লেখযোগ্য: তাবিয়ী আব্দুর রহমান ইবনু আবী লায়লা রা. বলেন, সাহাবী ছাহল বিন হুনাইফ ও ছাহাবী কাইছ বিন ছাদ (কুফার) কাদেদিয়া নামক স্থানে বসেছিলেন, এমতাবস্থায় তাদের নিকট দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তারা উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তখন দাদেরকে বলা হল! এ তো স্থানীয় এক অমুসলিম যিম্মির লাশ। তাঁরা বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ স. এর নিকট দিয়ে এক লাশ অতিক্রম করল এবং তিনি (তার জন্য) দাঁড়ালেন। তখন তাকে বলা হল: এ তো একজন ইহুদির লাশ। উত্তরে রাসূলুল্লাহ স. বরলেন, তা কি কোন প্রাণী (মানুষ) নয়? বিবাহ করার পূর্বে পাত্রীকে দেখে নেয়ার উপর ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে। এতে দাম্পত্য জীবন সুখকর হয়। এ প্রসঙ্গে আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম স. এ নিকট এসে বললেন, আমি জনৈকা আনছারী মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছি। রাসূলুল্লাহ স. বললেন তাকে প্রথমে দেখে নাও। কেননা, আনছারদের (কোন কোন লোকের) চোখে একটু দোষ থাকে। বিবাহের পূর্বে নারীদের কাছ থেকে ও মতামত নেয়া ইসলামের বৈবাহিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ স. বলেন, বালেগা অকুমারী নারীকে তার স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না। একই ভাবে বালেগা কুমারীকে ও বিবাহ দেয়া যাবে না। যতক্ষণ না তার অনুমতি গ্রহণ করা হয়। ছাহাবীগন জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তার অনুমতি কিভাবে সাব্যস্ত হবে? তিনি বলেছিলেন, চুপ থাকাই তার অনুমতি।
সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে অন্যায়ভাবে অন্য কারো সামান্যতম জমিও আত্মসাৎ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমির সামান্যতম অংশও আত্মাসাৎ করেছে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনের নীচে তাকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। নারীর মনের মূল্যকে ও তার মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার উপর নিম্নোক্ত হাদীস বিবৃত হয়েছে; নারীরা হচ্ছে পাঁজবের হাড়ের ন্যায়। যদি তোমরা তাকে একেবারে সোজা করতে চাও তাহলে ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং যদি তোমরা তাদের থেকে লাভবান হতে চাও তাহলে ঐ বাঁকা অবস্থাতেই লাভবান হতে হবে। এখানে বিশ্বনবী স. এর মানবমনস্মত্ত¡ সম্পর্কে গভীরতম জ্ঞান স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।
মানুষের গায়ের রং, কালো, বাদামি ও ফর্সা যে কোন রং হতে পারে। মানুষের এ রং বৈচিত্র্যের বিষয়টি জেনেটিক বা জিনতাত্তি¡ক জ্ঞানতাত্তি¡কতার উপর নির্ভর করে। এ বিষয়টি মুহাম্মদ স. এর নিম্নোক্ত হাদীসের মর্ধে স্পষ্টতায় আভাসিত হয়েছে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন